ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

রাতজাগা ব্যস্ততা মাদারীপুরের কামারশালায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৮
রাতজাগা ব্যস্ততা মাদারীপুরের কামারশালায় রাত জেগে কামারশালায় কাজ করছেন কর্মচারীরা। ছবি: বাংলানিউজ

মাদারীপুর: আর মাত্র চারদিন বাদেই পবিত্র ঈদুল আজহা।  আর তাই সারাবছর এক প্রকার অবহেলায় পড়ে থাকা ছুরি, চাপাতি নিয়ে সাধারণ মানুষের ছুটাছুটি চলছে কামারের দোকানে। 

শাঁন দেওয়া থেকে শুরু করে নতুন ছুরি, চাপাতি, বটিসহ কোরবানির পশু জবাই ও মাংস বানানো পর্যন্ত ব্যবহারের জিনিসপত্র কিনতে ভিড় বাড়ছে কামারের দোকানে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিক্রেতাদের।

মাদারীপুর জেলা শহর থেকে শুরু করে নিভৃত পল্লির কামারশালার কর্মচারীদের মধ্যে এখন রাতজাগা ব্যস্ততা। কয়লার গণগণে আগুনে রক্তিম আভা ছড়ানো চাপাতি, বটি বা ছুরির ওপর পড়ছে হাতুরির আঘাত। আঘাতের পর আঘাতে রূপ দেওয়া হচ্ছে চাপাতি, ছুরি, বটিসহ নানা ধরনের ধারালো জিনিসপত্রের।  

টুংটাং শব্দে মুখোর হয়ে উঠেছে কামারপল্লি। কয়লার আগুনের তাপে ছোট্ট কামারশালার ভেতরটায় ভ্যাপসা গরম। একজন হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে চলছেন গরম লোহার চাপাতি বা বটি। অন্যজন বায়ু সঞ্চালনের ‘ধামা’ টেনে চলেছেন সমানে। দরদর করে ঘাম ঝরলেও মুখে এক চিলতে হাসি ঝুলে আছে তাদের। ব্যস্ততা যত বাড়বে, আয়ও তত বেশি হবে। কোরবানির ঈদের এ সময়টায় উৎসব বয়ে যায় কামারপল্লি, তাদের দোকান এবং ঘরেও। বছরের অন্য সময়ে কাজ কম থাকায় কোনো রকমে টিকে থাকার যুদ্ধ চলে। আর এ সময়ে বাড়তি উপার্জনের একটা বড় সুযোগ তৈরি হয়। তাই দিনরাত তারা কাজ করে যান। এই ব্যস্ততা চলবে ঈদের আগের রাত পর্যন্ত।
কামারশালায় কাজ করছেন এক কর্মচারী।  ছবি: বাংলানিউজ

জেলার বিভিন্ন এলাকার কামারের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, দম ফেলার সময়টুকুও যেন নেই তাদের। চার থেকে পাঁচজন কর্মচারী বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছেন দা, বটি, চাপাতি, ছুরি
তৈরিতে। কেউবা আবার ব্যস্ত রয়েছেন এসব ধারালো জিনিসপত্রে শাঁন দিতে। আর ছোট্ট কামারশালা ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ক্রেতারা। কেউবা কিনছেন নতুন কিছু আবার কেউ
পুরোনোগুলো শাঁন দিয়ে নিচ্ছেন।

এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী দা, বটি, পশু জবাইয়ের ছুরি, মাংস বানানোর চাপাতি কিনছেন। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর দাম কিছুটা বেশি বলে জানান ক্রেতারা। তবে পুরোনো দা-বটি-চাপাতি শাঁন দিতে তুলনামূলকভাবে বেশি টাকা লাগছে। শাঁন দিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে নিচ্ছেন বলে তারা জানান।

দোকানিরা জানান, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর বিক্রির পরিমাণ কম। গত বছর এ সময়ে যে পরিমাণ বিক্রি হয়েছে এবছর তার অর্ধেক বিক্রি হয়েছে। তবে কোরবানির এখনো কয়েকদিন বাকি আছে। সামনের কয়েকদিন বিক্রি আরো বাড়বে বলে দোকানিরা আশাবাদী।

কামারশালা থেকে ধরণভেদে একেকটি চাপাতি ৪শ’ থেকে ৬শ’ টাকা, বটি ৩শ’ থেকে ৫শ’ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা, চাকু ৮০ থেকে ১২০ টাকা এবং দা ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা করে বিক্রি করছেন তারা।

জেলার পাঁচ্চর এলাকার ধীরেন চন্দ্র সরকার প্রায় ৩০ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। অন্যের জমিতে মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া নিয়ে চলছে তার কামারশালা।  

কামারশালায় চাপাতি তৈরিতে ব্যস্ত একজন।  ছবি: বাংলানিউজবৃহস্পতিবার (১৬ আগস্ট) রাতে তার কামারশালায় গিয়ে দেখা যায় ভীষণ ব্যস্ততা। কথা বলার মতো সময়টুকু যেন নেই। ক্রেতারা যেন ঘাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কেউ কয়েকদিন আগে চাপাতি-বটি বানাতে দিয়ে গেছেন, সেগুলো নিতে এসেছেন। আবার কেউ শাঁন দিতে এনেছেন।  

কাজের ফাঁকে ধীরেন চন্দ্র সরকার জানান, ‘অনেক কাজ জমে আছে। প্রতি দুই ঘণ্টায় একেকটি চাপাতি তৈরি হচ্ছে তার দোকানে। ঈদকে সামনে রেখে দোকানে বাড়তি নিয়োগ দিয়েছেন আরো দুইজন কর্মচারী।

তিনি বলেন, কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ বেড়েছে। কর্মচারীর বেতনও বেশি দিতে হচ্ছে। এই ঈদ মৌসুমে সব খরচ মিটিয়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বাড়তি আয় হবে বলে আশা করি।

সুবোধ কর্মকার। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে আগুন আর লোহার সঙ্গে তার সখ্যতা। কর্মচারী ছাড়াও সহযোগী হিসেবে এক ছেলে কাজ করেন তার সঙ্গে।

তিনি জানান, বছরের অন্য সময়ে কাজ খুবই কম থাকে। দোকানের খরচ মিটিয়ে লাভের অংকে সমান সমান হয়। তবে ঈদের সময়ের কথা ভিন্ন। আয়ের বড় একটা অংশই আসে কোরবানির সময়ে। গভীর রাত পর্যন্ত আগুন জ্বলে তার কামারশালায়। তারপরও গতবারের তুলনায় এ বছর কাজ কম।

সুবোধ কর্মকার বলেন, ঈদকে সামনে রেখে সব খরচ মিটিয়ে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা আয়ের টার্গেট রয়েছে। তাই পরিশ্রম একটু বেশিই এখন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।