ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কামারশালার বাতাসে উড়ছে স্ফুলিঙ্গ

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৮
কামারশালার বাতাসে উড়ছে স্ফুলিঙ্গ ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা-ছবি-বাংলানিউজ

রাজশাহী: কেউ হাতুড়ি দিয়ে আগুনে গলানো লাল লোহা পেটাচ্ছেন, কেউবা আবার তৈরি করা সামগ্রী শান (ধার) দিচ্ছেন। বাতাসে উড়ছে লোহার স্ফুলিঙ্গ। টুং-টাং আর শুন-শান শব্দগুলো যেন বিশাল এক কর্মযজ্ঞের জানান দিচ্ছে। শুক্রবার (১৭ আগস্ট) সকালে রাজশাহী মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকার কামারশালায় গিয়ে দেখা গেছে এমনই ব্যস্ততা। 

কোরবানির ঈদের আর মাত্র কয়েকটি দিন বাকি। তাই কামারশালার হপারও যেনো হাঁপিয়ে উঠেছে।

দিন-রাত বিরামহীনভাবে কাজ করছেন সেখানকার কারিগররা। বর্তমান যুগে আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চলছে একথা সবারই জানা। তবুও ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বছর ঘুরে আবারও ব্যস্ততা বেড়েছে কামার শিল্পীদের। কাজের চাপে নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। এখন পর্যন্ত আগের কাজই শেষ হয়নি। তাই অর্ডার নেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকে।

স্টেডিয়াম পাড়ার কর্মকার রেজাউল ইসলাম ভেদু বলেন, সারা বছর তাদের তেমন খোঁজ-খবর রাখেন না কেউই। কেবল ওয়েল্ডিংয়ের কারখানারই বেশি কাজ থাকে। এছাড়া সব সময়ের জন্য কিছু কোদাল, কাঠ কাটার কুড়াল, ছুরি, চাপ্পর প্রভৃতি তৈরি করে কোনোভাবে জীবিকা চালান।  

কিন্তু কোরবানির আগে এক মাস থেকে তাদের কাজ বাড়ে। বিশেষ করে পনেরো দিন আগ থেকে বেশি চাপ পড়ে। এ সময় এতটাই ব্যস্ততা বাড়ে যে, কারও সঙ্গে কথা বলারও ফুরসত থাকে না। তবুও ভালো লাগে। কারণ এই এক মাসের আয়ের ওপর ভর করেই সারাবছর চলতে হয় তাদের।  

ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা-ছবি-বাংলানিউজরেজাউল ইসলাম বলেন, চার পুরুষ থেকে কামারের কাজ করেন তারা। তাই নিজের ছেলে সোহাগকেও কাছে রেখে কাজ শেখাচ্ছেন। এই পেশায় আর আগের মতো আয় না থাকলেও পৈত্রিক পেশা কখনও ছাড়বেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন ভেদু।    

তিনি বলেন, কাজের চাপ বেশি হওয়ায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। গত বছরের তুলনায় লোহার দাম কিছুটা বেশি। বর্তমানে চাপাতি বা চাপ্পর সাড়ে ৩শ’ টাকা কেজি, ছুরি ৪শ’ টাকা কেজি এবং বটি সাড়ে ৩শ’ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি করছেন তারা। চাহিদা থাকায় ক্রেতাদের জন্য নিত্যনতুন হাতিয়ার তৈরি করছেন। আর আকার ভেদে ১শ’ থেকে ৫শ’ টাকার মধ্যেও কোরবানির জন্য বিভিন্ন হাতিয়ার তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বড় ছুরি ৪০, চাপাতি ৬০, দা ৫০ এবং ছোট ছুরি ২০ টাকায় শান দিচ্ছেন তারা।

জানতে চাইলে স্টেডিয়াম পাড়ার অপর কর্মকার পলক বলেন, আগামী ২২ আগস্ট কোরবানির ঈদের তারিখ নির্ধারণ হওয়ায় দা-ছুরি সংস্কারের জন্য নগরবাসী ইতোমধ্যে ভিড় করছেন তাদের কাছে। কেউ দাম-দর করছেন বাজার বোঝার জন্য কেউবা কিনে নিচ্ছেন পছন্দের দা-ছুরি। তবে শেষের দিকে পুরনো চাপাতি ও ছুরি শান দেওয়ার চাপই বেশি পড়ে। এক বছর ঘরে রেখে দেওয়া ধারালো অস্ত্র বের করে সবাই। তাই চাঁদ রাত পর্যন্ত তাদের ব্যস্ততা থকবে বলেও জানান পলক।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৮
এসএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ