ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বাতিঘর নিভেছে, আলো নেভে নাই

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৮
বাতিঘর নিভেছে, আলো নেভে নাই সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের কফিনে শ্রদ্ধা/ছবি: শাকিল

ঢাকা: ‘আমি বিশ্বাস করিনা আমার বাবা মারা গেছেন। তিনি আছেন, থাকবেন সারা জীবন। আপনাদের মাঝে, সাংবাদিকদের মাঝে। এই প্রেসক্লাবে। প্রেসক্লাবের জন্য সারা জীবন আমার মায়ের সঙ্গে তার কতো ঝগড়া হয়েছে, রাগারাগি হয়েছে। কিন্তু তিনি এখানে ছুটে আসতেন। প্রেসক্লাবকে ভালোবাসতেন। আমার বাবার মৃত্যু হতে পারেনা।’

জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে জানাজা নামাজের আগে বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রয়াত সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের বড় ছেলে গোলাম শাহরিয়ার রঞ্জু এমন আবেগঘন কথাগুলো বলেন।

এসময় সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফিও বলছেন একই কথা।

তিনি সমবেতদের উদ্দেশ্যে বলছিলেন, আমরা গত তিন দিন ধরে বলার চেষ্টা করছি, সারওয়ার ভাইয়ের শারীরিক মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তিনি বাতিঘর। তার দেওয়া আলো রয়ে গেছে। এ আলোয় আলোকিত হবে সাংবাদিক সমাজ। এর ভিত্তিতে আগামীতে যারা সাংবাদিকতায় আসবে তারাও আলোকিত হবেন।

অন্যদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, গোলাম সারওয়ারের মৃত্যুতে কেবল প্রেসক্লাব নয়, সমকাল নয়, পুরো সাংবাদিক সমাজ আজ ব্যথিত। শোকাহত। তিনি ছিলেন আমাদের অবিভাবক। আমরা শোকাক্রান্ত। সাংবাদিক সমাজ দীর্ঘদিন তাকে অনুভব করবে।

এ ভাবেই বৃহস্পতিবার (১৬ আগস্ট) নানাভাবে, নানা মন্তব্যে শ্রদ্ধা ও বিদায় জানানো হয় সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ারকে। তিনি ছিলেন বাতিঘর। উৎসাহ, অনুপ্রেরণা, সাহসের, আদর্শের বাতিঘর। সেই বাতিঘর নিভে গেছে। কিন্তু তার আলো রয়ে গেছে। দীর্ঘদিন থাকবে বলেও মন্তব্য বিশিষ্টজনদের।

বৃহস্পতিবার দুপুরে গোলাম সারওয়ারের মরদেহ নিয়ে আসা হয় তার প্রিয় আড্ডাস্থল জাতীয় প্রেসক্লাবে। এখানে তাকে শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের জনগণ। প্রথমে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বে স্মৃতিচারণ করেন তার পরিবারের সদস্য, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা, প্রেসক্লাব, সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা।

এরপরই অনুষ্ঠিত হয় নামাজে জানাজা। জানাজা শেষে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন। তারপর  প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান তার তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এহসানুল করিম, ডেপুটি প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন। এরপর ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা গোলাম সারওয়ারকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। জাতীয় পতাকায় ঢেকে দেওয়া হয় তার কফিন।

শ্রদ্ধা নিবেদনে একে একে অংশ নেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, বিএনপির পক্ষে আব্দুল্লাহ আল নোমান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশর) সভাপতি মোল্লা জালাল ও মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু জাফর সূর্য ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শুকুর আলী শুভ, সাংবাদিক নেতারা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

এর আগে সকাল ১১টায় গোলাম সারওয়ারের মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধার জন্য নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে তারপ্রতি শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের পক্ষে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রমুখ।

এছাড়াও শ্রদ্ধা জানান, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী মুস্তাফা জব্বার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমদ, জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আকতার প্রমুখ।

এর আগে সকাল নয়টায় প্রিয় কর্মস্থল সমকাল কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় গোলাম সারওয়ারের মরদেহ।

সেখানে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা (সমকাল পরিবারের সদস্যরা)।  সকাল ১০টায় সমকাল কার্যালয় সংলগ্ন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওসামানী হল মাঠে গোলাম সারওয়ারের তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

সদ্য প্রয়াত সমকাল সম্পাদক ও বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদের সভাপতি গোলাম সারওয়ারকে বাদ আসর মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

গত ২৯ জুলাই অসুস্থ হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হন ৭৫ বছর বয়সী গোলাম সারওয়ার। তার অবস্থার অবনতি হলে ৩ আগস্ট সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়।

গত ১৩ আগস্ট বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ২৫ মিনিটে সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন গোলাম সারওয়ার।

পরে মঙ্গলবার (১৪ আগস্ট) রাত ১০টা ৫০ মিনিটে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আসে একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক গোলাম সারওয়ারের মরদেহ।

বিমানবন্দর থেকে মঙ্গলবার মধ্যরাতে মরদেহ নেওয়া হয় তার উত্তরার বাসভবনে। সেখান থেকে রাত পৌনে ১টার দিকে মরদেহ নিয়ে রাখা হয় বারডেমের হিমঘরে।

পরদিন বুধবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে গোলাম সারওয়ারের মরদেহ হেলিকপ্টারে করে নিয়ে যাওয়া হয় তার জন্মস্থান বরিশালের বানারীপাড়ায়।

সেখানে তার প্রথম জানাজার পর বিকলেই মরদেহ ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়। বাদ আসর উত্তরা-৪ নম্বর সেক্টর জামে মসজিদে তার দ্বিতীয় জানাজার পর মরদেহ রাখা হয় বারডেমের হিমঘরে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৮
আরএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad