ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিড়ম্বনার আরেক নাম ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়ক 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৮
বিড়ম্বনার আরেক নাম ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়ক  গর্তে পড়ে আটকে আছে একটি ট্রাক-ছবি-অনিক খান

ময়মনসিংহ: এমনিতেই সরু সড়ক। তার ওপর সড়কের দুই পাশে ছোট-বড় গর্তে প্রশস্ততা আরও কমে গেছে। বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা হওয়ায় কোনো কোনো গর্ত আবার অবিকল কুয়ার মতো দেখতে! বাস ও মালবাহী ট্রাকের চাকা কখনও আটকা পড়ছে এসব খানাখন্দে।

আর তখনই ঘটছে বিপত্তি। সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট।

কখনও তা দাঁড়াচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টায়। দিন বা রাত ন্যূনতম বিরাম নেই যেন। ফলে দুর্ভোগ, যন্ত্রণা আর বিড়ম্বনার আরেক নাম হয়ে উঠেছে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়ক।  

এই মহাসড়কের দুই কিলোমিটার অংশ যানবাহন চলাচলে একেবারেই অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এমন করুণ অবস্থায় বেশিরভাগ সময়েই পুলিশকে ছুটতে হচ্ছে যানজটের যন্ত্রণা থেকে যাত্রীদের মুক্ত করতে। বুধবার (১৫ আগস্ট) রাতে এই মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে এমন চিত্রের দেখা মেলে।  

এমনকি ঈদে ঘরমুখী মানুষের দুশ্চিন্তার বড় কারণ হতে পারে এই মহাসড়ক, এমনটিই বলছেন স্থানীয়রা।  

সরেজমিনে দেখা গেছে, এই মহাসড়কের ময়মনসিংহ সদর উপজেলার রহমতপুর থেকে পাঁচমাইল পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক দীর্ঘদিন যাবৎ বেহাল হয়ে আছে। মাসকয়েক আগে মুক্তাগাছা উপজেলা অংশে পুরোদমে নির্মাণ কাজ হওয়ায় সেখানে আর কোনো খানাখন্দ নেই।  

কিন্তু ময়মনসিংহ সদরের ওই দুই কিলোমিটার অংশ খানাখন্দে ভরপুর। সড়কের মাঝখানটার কোথাও কোথাও পুরোটাই এবড়োথেবড়ো। মাঝে মধ্যেই স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) দায়সারাভাবে জোড়াতালির মেরামত কাজ চালায়। কিন্তু একদিনের বৃষ্টিতেই ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায় সংস্কারের সেই নিশানা।  

ফলে অর্থের অপচয় ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হয় না বলেই মনে করেন স্থানীয়রা ও মহাসড়কে নিয়মিত চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের চালকেরা।

মহাসড়কের এই পয়েন্টটির নাজুক অবস্থা তুলে ধরে ট্রাকচালক স্বপন মিয়া (৪৫) বাংলানিউজকে বলেন, ‘বছরখানেক ধইর‌্যাই কাহিল দশা এই সড়কের। সবচেয়ে বিপদজনক সড়কের পাশের ছোট-বড় গর্ত। এই গর্তে চাক্কা (চাকা) ফাইস্যা (আটকে) গেলে উপায় নাই। কয়েক কিলোমিটার যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বইয়্যা (বসে) থাকতে অয় (হয়)। দিন-রাইত (রাত) একই অবস্থা। ’ 

স্বপনের সঙ্গে আলাপের সময়েই বিপরীত দিক থেকে যাওয়া বেলাল হোসেন নামের মধ্যবয়সী এক সিএনজি চালক হাঁক দিয়ে উঠলেন, ‘ভাই দেহেন (দেখেন) ছোটখাটো কোনো গর্ত না। এহেকটা (একেকটা) গাড়ি (যানবাহন) চলতাছে খুঁড়াইয়া খুড়াইয়া (খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে)-হেইল্ল্যা দুইল্ল্যা (হেলেদুলে)। আমগর (আমাদের) কষ্ট দেখবার (দেখার) নাই কেউ। ’ 

ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতে স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) কর্মযজ্ঞের সমালোচনা করে স্থানীয় রহমতপুর মোড়ের নাহিদ ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক মোজাম্মেল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘বালু-ইট বিছাইলেও (বিছালেও) লাভ নাই। এক রাতেই কারবার শেষ। সরকারি টেহা (টাকা) কোনো কামে (কাজে) লাগে না। ’ 

ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে যাত্রীদের অবস্থা দফারফা হওয়ায় বেশিরভাগ সময় স্থানীয়রাও যানজট নিরসনে উদ্যোগী হয়ে নেমে পড়েন। এমন অবস্থায় দেখা গেলো ওই এলাকার চায়ের দোকানি শাহজাহান ও এছহাক আলীসহ কয়েকজনকে।  

নিজেদের দোকানের বিপরীত পাশে একটি ঝুলন্ত গাছ দেখিয়ে শাহজাহান বলেন, ‘কয়দিন (কয়েকদিন) আগে একটা (একটি) ট্রাক উইল্টা (উল্টে) গাছ ভাইঙা (ভেঙে) ফেলছে। ’  

তাদের সঙ্গে কথার সময়েই মুক্তাগাছামুখী মালবাহী একটি ট্রাক সেই একই গর্তে আটকে পড়লো। পরে কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ স্থানীয়দের সহযোগিতায় ঘণ্টাখানেক পর সেই ট্রাকটি উদ্ধার করে।  

ঘটনাস্থলে উপস্থিত সংশ্লিষ্ট মডেল থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) টিটু সরকার বাংলানিউজকে বলেন, এই সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে বৃষ্টিতে পানি জমে। তাছাড়া সড়কও ভাঙাচোরা। গর্তও অনেক। ফলে এই দুই কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিতেই অতিরিক্ত সময় গুণতে হচ্ছে। ঈদের আগে সংস্কার না হলে ভোগান্তির শঙ্কা তো থাকছেই।

ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ওই দুই কিলোমিটারের করুণ দশা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ খান বাংলানিউজকে বলেন, মাত্র ১৮ ফিট রাস্তা। এই রাস্তা ৩৪ ফিটে উন্নীত করতে প্রকল্প পাঠানো হচ্ছে। এই কাজ করতে আরও ৮ থেকে ১০ মাস সময় লাগবে।  

তিনি বলেন, এখন কিছু কিছু জায়গায় প্রশস্ত করতে কাজ শুরু হবে। রুটিন মেইনট্যান্সের মাধ্যমে প্রশস্ত করা হবে ইট বিছানোর মাধ্যমে। ঈদের আগেই সাময়িক মেরামত কাজ শেষ হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৮ 
এমএএএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।