ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

আজকের দিনটা লজ্জা-কলঙ্কের, শপথেরও: দুদক চেয়ারম্যান

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৮
আজকের দিনটা লজ্জা-কলঙ্কের, শপথেরও: দুদক চেয়ারম্যান বক্তব্য রাখছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ১৫ আগস্ট বা আজকের দিনটা বাঙালির জন্য লজ্জা ও কলঙ্কের দিন। তবে সবকিছু পেছনে ফেলে দেশ গড়ার শপথের দিনও আজ বলে উল্লেখ করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

বুধবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে দুদক প্রধান কার্যালয়ে জাতীয় শোকদিবসের আলোচনা সভায় ইকবাল মাহমুদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৯৭৫’র ১৫ আগস্ট যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান।

পরে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আজ জাতীয় শোকদিবস যেমন সত্য, তেমনি আজকের দিনটি লজ্জার এবং কলঙ্কেরও দিন।

কারণ আমি এমন একটি দেশের নাগরিক যে দেশের মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধু জীবনের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন। আবার সেই দেশেরই লোক তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।

শীর্ষ এ কর্মকর্তা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে আমরা রক্ষা করতে পারিনি, তাই এই কলঙ্ক জাতি হিসেবে মোচন করা সম্ভব নয়। এমনকি এ কলঙ্ক ভবিষ্যতে হাজার বছর পরের প্রজন্মকেও বহন করতে হতে পারে।  

তিনি বলেন, তবে এই লজ্জা বা কলঙ্ক কিঞ্চিত পরিমাণ হলেও লাঘব হবে, যদি আমরা বঙ্গবন্ধুর সেই বাণী ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’ অর্থাৎ মুক্তি তথা দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও অর্থনৈতিক মুক্তির যে সংগ্রাম তিনি শুরু করেছিলেন সেই সংগ্রামে নিজেদের আত্মনিয়োগ করতে পারি।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, ১৫ আগস্ট আত্মোপলব্ধির দিন, আজ আমাদের নিজেকে নিজেদের জিজ্ঞাসা করতে হবে গত ১৫ আগস্ট থেকে আজকের ১৫ আগস্ট এক বছরে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক বৈষম্য থেকে মুক্তি, অর্থনৈতিক বৈষম্যহীন দেশ গড়ার জন্য আমরা কতটুকু করেছি। এই প্রশ্নের জবাবের মাধ্যমেই নিজের মূল্যায়নের উত্তর পাবেন।

তিনি আরও বলেন, আমাকে আশার আলো দেখায় নতুন প্রজন্মের শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীর উজ্জ্বল মুখ, যারা আমাদের ব্যর্থতা দেখিয়ে দেয়। এই প্রজন্মই সত্যিকারার্থে জাতির পিতার আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করে। সত্যিই আমি এই প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের দেখে আশাবাদী। এরাই জাতির পিতার স্বপ্নের অর্থনৈতিক-সামাজিক বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণ করবে।

অনেকেই বলছেন এক সময় বিশ্বের  ১১টি সেরা অর্থনীতির দেশের একটি দেশ হবে বাংলাদেশ। তবে বিশ্ব অর্থনীতির নেতৃত্ব দানকারী এমন ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে থাকতে হলে কিছু শর্ত পরিপালন করতে হবে। এই শর্তগুলোর অন্যতম হচ্ছে শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ এবং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা।

তিনি এও বলেন, আজকে শপথ নেওয়ার দিন। শোককে শক্তিতে পরিণত করে দুর্নীতি নামক অশুভ শক্তির লাগাম টেনে ধরতে হবে। আমরা যে যেখানে যে অবস্থতেই থাকি না কেনো আগামী প্রজন্মের সোনালি ভবিষ্যৎ এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে একই সূতায় গেঁথে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুঁখে দাঁড়াই।

চেয়ারম্যান বলেন, আজকের এই দিনে আমাদের অঙ্গীকার হোক আমরা নিজেরা দুর্নীতি মুক্ত থাকবো। যে যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করবো সেই প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতি মুক্ত রাখবো। তবেই আজকের এই কলঙ্ক দিবস, লজ্জার দিবস, শোকদিবস স্বার্থক হবে। তা না হলে এই আলোচনা সভা    আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আলোচনা করে কোনো লাভ হবে না। আলোচনার আলো সমুজ্জ্বল রাখতে হলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনায় বিশ্ববাসী হয়ে আলোচনায় যা বলি তার বাস্তব রূপ দিতে হবে।

দুর্নীতিই মানুষের মুক্তির প্রধান অন্তরায়। তাই আমার অনুরোধ- আসুন, আমরা সবাই আইন মেনে চলবো। কেউ আমাদের আইন মানাবে সেজন্য অপেক্ষা করে থাকবো সেটা হতে পারে না। কারণ আইন না মানাই দুর্নীতি। তাই এই প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইন মেনে চলতে হবে। যে বা যারা আইন মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যোগ করেন ইকবাল মাহমুদ।

মাহমুদ এও বলেন, রাস্তায় যখন বের হবেন তখন দুদকের পরিচয় ব্যবহার করবেন না, সাধারণ মানুষের মতো আচরণ করবেন। অসাধারণ হওয়ার চেষ্টা করবেন না।

কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের বাচ্চারা দুদকের লোগো লাগানো  একটি গাড়ি আটকিয়েছে এমন সংবাদ পাওয়া মাত্রই আমরা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছি।

কাউকেই আমরা ছাড় দিইনি এবং ভবিষ্যতেও ছাড় দেবো না। দুর্নীতি দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা। যদি দুর্নীতি দমন বা প্রতিরোধ করা যায়   তবেই শিক্ষাসহ সকল প্রকারের সরকারি সেবা মানুষ হয়রানিমুক্তভাবে পাবে।

বিআরটিএ যদি দুর্নীতিমুক্ত হতো, তাহলে কীভাবে রঙচটা, হেডলাইটবিহীন গাড়ি, ফিটনেস সার্টিফিকেট পায়? আমরা বিআরটিএ’র কার্যক্রম দেখছি, বর্তমানে কৌশলগত কারণেই হস্তক্ষেপ করছি না। তারা যদি বেআইনি কিছু করে, জনস্বার্থেই কমিশন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়টি গুরুত্ব দেবে। বাংলাদেশের সমস্যা দুর্নীতি এবং আইন ও বিধি-বিধান না মানা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য কিংবা রাস্তার মূল সমস্য হচ্ছে আইন না মানা। আর এই না মানাই দুর্নীতি। তাই আসুন, আজকের এই দিনে শপথ গ্রহণ করি আমরা সবাই আইন মানবো এবং আইন না মানার এই সংস্কৃতি বন্ধ করতে সচেষ্ট হবো, আশাবাদ ব্যক্ত করলেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল।

শোকসভায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুদক কমিশনার এএফ এম আমিনুল ইসলাম, মহাপরিচালক মোহাম্মদ জয়নুল বারী, পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন, উপপরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী প্রমুখ।

শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্ট যারা শহীদ হয়েছেন তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

মোনাজাত পরিচালনা করেন দুদকের উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৮
আরএম/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।