ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শঙ্কামুক্ত, তবে ভালো নেই আহত মিম

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৮
শঙ্কামুক্ত, তবে ভালো নেই আহত মিম কুর্মিটোলায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত মিম

ঢাকা: শঙ্কামুক্ত, আগের চেয়ে অনেকটা ভালো। তবে মোটেই ভালো নেই কুর্মিটোলায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী রুবাইয়া আক্তার মিম।

জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যাওয়া দিয়া খানম মিমের হাত ধরেই সেদিন বাসের অপেক্ষা করছিলো মিম। চোখের পলকে সব ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়! বাসটি এসে ধাক্কা দেয়—এর বেশি কিছুই মনে করতে পারছে না সহপাঠীকে হারানো মিম।

সেদিনের কথা মনে উঠলেও ভয়ে আতকে ওঠে সে, ডাক্তারও তাকে স্মৃতিচারণ করতে বারণ করেছেন।

ভাঙা বাম হাতটি সিএমএইচ থেকে প্লাস্টার করে দিয়েছে। কোমরেও আঘাত রয়েছে তাই ঠিকঠাক দাঁড়াতে পারছে না এখনও। দুর্ঘটনার পনের দিনের মাথায় সোমবার ( ১৩ আগস্ট) সিএমএইচ থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে মিমি। দুই সপ্তাহ পর ফের হাসপাতালে যেতে বলা হয়েছে।

চিকিৎসায় কতটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে মিম তা নিয়ে প্রশ্নের পাশাপাশি রাজ্যের হতাশা ভর করেছে তার মাথায়। এতিম বলতে যা বুঝায় তার সব সংজ্ঞাই যেন তার জীবনের সঙ্গে শতভাগ মিলে যায়। তার মতো অসহায় খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে।
কুর্মিটোলায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত মিম ও তার বোনঅবিভাবক ও আপনজন বলতে যা বোঝায় তা একমাত্র বড়বোন তিতুমীর কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার লাবনী। বাবা-মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তাদের শিশুকালে। সেই থেকে বাবা হাফিজ মান্নান কোনই খোঁজ নেন না। তারাও জানে না বাবার খোঁজ। এমনকি এ ঘটনার পরও তার বাবা খোঁজ নিতে আসেননি।

মা নাজমা বেগমের কোলেই বেড়ে ওঠেন লাবনী ও মিম। মায়ের ছোট্ট একটি চাকরি দিয়ে টেনেটুনে সংসার চলতো। সেই মা তাদের এতিম করে না ফেরার দেশে চলে গেছেন ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট। এরপর তাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যেতে বসেছিলো।

এগিয়ে আসেন রংপুরের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। বাসা-ভাড়া ও হাত খরচের জন্য মাসে কিছু টাকা দেন। আর বড়বোন লাবনী আক্তার পড়ার পাশাপাশি টিউশনি করে সংসার চালিয়ে নিচ্ছেন। এমন আর্থিক দুরাবস্থায় কুর্মিটোলার দুর্ঘটনা রাজ্যের অন্ধকার নিয়ে এসেছে দুই বোনের সংসারে। গুরুতর আহত ছোট বোনের সেবা-শুশ্রুষা করতে গিয়ে টিউশনিও নেই বোনের।

বিলাসিতা দূরের কথা হিসাবের বাইরে একটা টাকাও খরচ করার মতো সামর্থ্য নেই তাদের। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভালো-মন্দ খাওয়ার সামর্থ্যও নেই। সিএমএইচ’এ থাকাকালে সব সহায়তা পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেখতে এসে অনেক ফলমূল খাবার দিয়ে গেছেন। কিন্তু এখন কী হবে? কার কাছে গিয়ে বলবে দুঃখের কথা।

দুর্বিপাকে পড়া দুই বোন দিশাহীন অবস্থায় উপায়ান্ত না দেখে প্রধানমন্ত্রীর সদয় সহায়তা কামনা করেছে। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যাওয়া মিম বাংলানিউজকে বলে, প্রধানমন্ত্রী আপনি আমাকে সারিয়ে তোলার জন্য অনেক করেছেন, এ জন্য আপনার প্রতি আমরা চিরকৃতজ্ঞ। আমরা দুই বোন পড়ালেখা চালিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছি। আপনার একটু সদয়দৃষ্টি আমাদের ভবিষ্যতটা সুন্দর করতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৮
এসআই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ