ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ‘সেকেন্ড হোম’ ছিলো লিবিয়া

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৮
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ‘সেকেন্ড হোম’ ছিলো লিবিয়া বঙ্গবন্ধু এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া ৫ খুনি

ঢাকা: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর খুনিরা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলো লিবিয়ায়। দেশটি পরবর্তীতে ধীরে ধীরে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সেকেন্ড হোমে পরিণত হয়। খুনি লে. কর্নেল  খন্দকার আবদুর রশীদ ও কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমানের নেতৃত্বে অন্যান্য খুনিরা লিবিয়ায় নিয়মিত মিলিত হতেন।

সূত্র জানায়, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর খুনিরা বিশেষ বিমানযোগে দেশ ত্যাগ করেন। তারা প্রথমে ইয়াঙ্গুন হয়ে ব্যাংকক যান।

সেখান থেকে পাকিস্তান হয়ে লিবিয়ায় আশ্রয় নেন। লিবিয়া থেকে পরবর্তীতে বেশ কয়েকজন খুনিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন মিশনে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে ১৯৭৫ থেকে ’৯০ সাল পর্যন্ত লিবিয়াকেই নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিয়োছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুনিরা।

লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার আল গাদ্দাফির পৃষ্ঠপোষকতায় লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ ও কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান ১৯৮০ সালে গড়ে তোলেন ফ্রিডম পার্টি। তবে শুরু থেকেই লিবিয়ায় তারা দুজনেই ভিআইপি অতিথির মর্যাদা পেতেন। খন্দকার আবদুর  রশিদ ত্রিপোলিতে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি গড়ে তোলেন। সেই কোম্পানি গড়ে তোলার জন্য গাদ্দাফি তাকে অর্থ দিয়েছিলেন। আর সৈয়দ ফারুক রহমান লিবিয়ায় জনশক্তি রফতানি কোম্পানি খুলেছিলেন। সেই কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নিতো লিবিয়ায়।

ফ্রিডম পার্টিও পরিচালিত হতো মুয়াম্মার আল গাদ্দাফির টাকায়। এছাড়া বংলাদেশ-লিবিয়া ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি গড়ে তোলেন সৈয়দ ফারুক রহমান ও খন্দকার আবদুর রশিদ। ঢাকায় ব্রাদার গাদ্দাফি কিন্ডারগার্টেন স্কুলও খোলা হয়েছিলো। আর গাদ্দাফির লেখা গ্রিন বুক বাংলায় অনুবাদ করে জনসাধারণের মাঝে ফ্রি বিতরণের ব্যবস্থাও করেন এ দুই খুনি।

খুনি সৈয়দ ফারুক রহমান ও খন্দকার আবদুর রশিদকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধুর অন্যান্য খুনিরাও লিবিয়ায় মিলিত হতেন। লিবিয়ার ত্রিপোলি ছাড়াও বেনগাজিতে বঙ্গবন্ধুর এ দুই খুনির ব্যবসায়িক অফিস ছিলো। সেখানেও অন্যান্য দেশ থেকে খুনিরা নিরাপদে মিলিত হতেন।

১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার আল গাদ্দাফি আল কোরআনের আয়াত উল্লেখ করে চিঠি লিখে সৈয়দ ফারুক রহমান ও খন্দকার আবদুর রশিদকে ক্ষমা করে দিতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে পাল্টা একটি চিঠিতে আল কোরআনের আয়াত উল্লেখ করে গাদ্দাফিকে জানিয়েছিলেন, ‘কন্যা হয়ে পিতার হত্যার বিচার চাওয়ার অধিকার আমার আছে। কন্যা হয়ে পিতার হত্যার বিচার না করা হবে অপরাধ। ’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১২ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনির মধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ ৫ জনকেই ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি  আদালতের রায় অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। এরা হলেন সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ এবং মহিউদ্দিন আহমেদ।

খন্দকার আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, এ এম রাশেদ চৌধুরী,  আব্দুল মাজেদ ও মোসলেহউদ্দিন খান; এ ৬ খুনি এখনো পলাতক রয়েছেন। এছাড়া খুনি আজিজ পাশা ২০০১ সালের ২ জুন জিম্বাবুয়েতে মৃত্যুবরণ করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ করছি। খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে আমরা আদালতের রায় বাস্তবায়ন করতে চাই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের ফিরিয়ে আনার বিষয়টি জটিল হয়ে পড়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ০০২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৮
টিআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।