ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পরিবার পরিকল্পনা অগ্রগতি সূচকের চালিকাশক্তিও

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৮
পরিবার পরিকল্পনা অগ্রগতি সূচকের চালিকাশক্তিও ইস্টওয়েস্ট মিডিয়া লিমিটেডের কনফারেন্স রুমে গতকাল কালের কণ্ঠ-মেরী স্টোপস গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

পরিবার পরিকল্পনা বলতে এখন আর শুধু জন্ম নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত কিছু উপকরণই বোঝায় না, এটি অপরিহার্য এক মানবাধিকারও। যা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সামগ্রিক জীবন ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খলভাবে সাজিয়ে তোলা সম্ভব। পরিবার পরিকল্পনা এখন আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির সূচকের চালিকাশক্তিও হয়ে উঠেছে।

যাকে অবহেলা কিংবা উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। কালের কণ্ঠ ও মেরী স্টোপস বাংলাদেশের ‘নিরাপদ প্রকল্পের’ যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় এমন অভিমত তুলে ধরেছেন সরকারি-বেসরকারি বিশেষজ্ঞরা।

আয়োজনে সহায়তা করে নেদারল্যান্ডস এমাবাসি, সুশীলন, ফুলকি ও বিএপিএসএ।

মঙ্গলবার (১৪ আগস্ট) বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এ গোলটেবিল আলোচনার সঞ্চালক কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘জনসংখ্যার ভারে আমরা অনেকটাই ভারাক্রান্ত হয়ে আছি। পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের কারণে গত ৪৭ বছরে অনেক কিছু অর্জন হয়েছে। তবে মাঝেমধ্যেই এটি আবার গতি হারিয়ে ফেলে। কালের কণ্ঠ সমাজের অনেক সমস্যামূলক ইস্যু নিয়ে কাজ করছে। এখন পরিবার পরিকল্পনা একটি মানবাধিকার—এই বিষয়টি সাধারণ মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চাই।

প্রধান অতিথি অতিরিক্ত সচিব ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. কাজী মোস্তফা সারোয়ার বলেন, ‘আমরা সঠিক পথেই আছি। বিশ্বে মোট প্রজনন হার বা টিএফআর ২.৭; কিন্তু আমাদের ২.২৩ শতাংশ। কাজেই বিশ্বের গড়ের চেয়েও আমরা ভালো অবস্থানে রয়েছি। পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে এখন মানুষ অনেক বেশি সচেতন। কারণ মানুষ বুঝতে শিখেছে, পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থার আওতায় এলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকেও শৃঙ্খলা ও শান্তি ফিরে আসে। জীবনটা সুন্দর হয়। মানবাধিকারের বিষয়গুলোও সুরক্ষিত করা সহজ হয়। আগে একেক দম্পতির ১০-১২টি করে সন্তান থাকত, কিন্তু এখন সেটা নেই, মানুষের মধ্যে বোধ তৈরি হয়েছে দুটি সন্তান নেওয়ার; যাদের সন্তান দুটো, তাদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একটা ছেলে একটা মেয়ে। আমরা টিএফআর ২-এর নিচে নামাব না। এতে সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হয়।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে কালের কণ্ঠ’র নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘জনসংখ্যা আমাদের দেশের জন্য একটি বড় সম্পদ আবার বড় বোঝাও। নিম্ন বা নিম্নবিত্ত মানুষের মধ্যে জনসংখ্যার চাপটা বেশি। তাদের দিকে তাকিয়ে এ খাতে কার্যক্রম আরো জোরদার করা দরকার।

মেরী স্টোপসের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাসরুরুল ইসলাম বলেন, ‘জনসংখ্যা একটা চাপ, এটা সত্যি। কিন্তু বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনার যদি আমরা সাফল্য দেখি, তাহলে দেখব অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। ১৯৭৫ সালে মডার্ন সিপিআর ছিল ৫ শতাংশ, ২০১৪ সালে সেটা হয়েছে ৫৪ শতাংশ। টিএফআর ১৯৭৫ সালে ছিল ৬.৩, ২০১৪ সালে ২.৩ হয়েছে। এ বছর বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসের প্রতিপাদ্য—পরিবার পরিকল্পনা একটি মানবাধিকার। এ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনার অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি দৃঢ় অঙ্গীকার দেখতে পাচ্ছি।

ধারণাপত্র উপস্থাপনকালে মেরী স্টোপস সিনিয়র ডিরেক্টর (প্রগ্রাম) ডা. রীনা ইয়াসমিন বলেন, মেরী স্টোপসের ৫২টি ক্লিনিক আছে। আউটরিচ কম্পোনেন্ট আছে। এ ছাড়া আরো কিছু স্পেশাল কম্পোনেন্ট আছে, এর মধ্যে একটি হচ্ছে নিরাপদ ২। যদিও এটা চার পার্টনার মিলে বাস্তবায়ন করছে। এই প্রজেক্টের আওতায় ৯ জেলার ৪০টি উপজেলা ও ৩৬৮টি ইউনিয়নে কাজ চলছে। এর মূল কাজ হলো ফ্যামিলি প্ল্যানিং সম্বন্ধে কোথায় যেতে হবে, কোন সময় যেতে হবে এসব বিষয়ে অবহিত করা।

আলোচনাকালে অতিরিক্ত সচিব ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (অর্থ) প্রণব কুমার নিয়োগী বলেন, ‘ভারত দুই সন্তান নীতি চালু করেছে। দুটির বেশি সন্তান হলে সরকারি কর্মকর্তার চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হবে। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদেরকেও তা করতে হতে পারে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ শরীফ বলেন, পরিবার পরিকল্পনায় জিওগ্রাফিক্যাল লাইন ধরে কাজ চলছে। রংপুর, রাজশাহী, খুলনাতে টিএফআর ১.৯-এর নিচে নেমে গেছে। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে এবং ঢাকা বিভাগে উল্টো বাড়ছে। এসব নিয়ে জোরালো কাজ চলছে।

নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার (এসআরএইচআর ও জেন্ডার) মাশফিকা জামান সাটিয়ার বলেন, ‘পরিবার পরিকল্পনা একটি মানবাধিকার, এটা আমাদের চাওয়া, হৃদয়ের কথা। যৌন প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছি আমরা। এটার ওপর আমাদের জোর বেশি। আমাদের ফোকাস গ্রুপ নারী ও অ্যাডোলেসেন্ট। আমাদের জনসংখ্যার ডিভিডেন্টকে কাজে লাগাতে হবে। পরিকল্পনা নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। তরুণ ও অ্যাডোলেসেন্টকে কাজে লাগতে হলে সঠিক তথ্য দিতে হবে। ’

অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন, ডা. মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন আহম্মেদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. সুলতান মো. শামসুজ্জামান, পপুলেশন কাউন্সিলের কান্ট্রি ডিরেক্টর ওবায়েদুর রব, ইউএনএফপিএর পরিবার পকিল্পনা বিশেষজ্ঞ ডা. আবু সাঈদ হাসান, প্ল্যান বাংলাদেশের হেড অব হেলথ প্রগ্রাম ডা. ইখতিয়ার উদ্দিন খন্দকার, এসএমসির চিফ অব প্রগ্রামস তছলিম উদ্দিন খান, পিএসটিসির নির্বাহী পরিচালক ড. নূর মোহাম্মদ, ফুলকির নির্বাহী পরিচালক সুরাইয়া হক, টেরে ডেস হোমসের রিসার্চ অ্যান্ড নলেজ ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ ফারহানা আক্তার, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের প্রগ্রাম ম্যানেজার মো. মাহবুব উল আলম, বিকেএমইএর পরিচালক মো. মোস্তফা মনোয়ার, আরএইচ স্টেপসের প্রজেক্ট ম্যানেজার ডা. সৈয়দা খাদিজা আক্তার, মেরী স্টোপসের জেনারেল ম্যানেজার ইমরুল হাসান খান, সুশীলনের পরামর্শক সেখ আমিরুল ইসলাম, খুলনা তেরখাদা এলাকার স্বেচ্ছাসেবীকর্মী ফারহানা ঈমাম ও নোয়াখালীর কবিরহাটের স্বেচ্ছাসেবী মো. নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৮
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।