ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সরবরাহ বাড়লেও দাম কমছে না দেশি গরুর

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৮
সরবরাহ বাড়লেও দাম কমছে না দেশি গরুর পশুর হাট। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজশাহীর পশুর হাটগুলোতে দেশি গরুর সরবরাহ বেড়েছে। তবে দাম কিছুতেই কমছে না। এ সুযোগে সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু ঢুকতে শুরু করেছে। এসব গরুর দাম দেশি গরুর তুলনায় কম। তবে অধিকাংশ গরু কঙ্কালসার হওয়ায় বিক্রিও হচ্ছে কম। সাস্থ্যসম্মত উপায়ে কোরবানির জন্য তৈরি করা দেশি জাতের গরুই বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে বেশি।  

রাজশাহী বৃহত্তম সিটিহাট ঘুরে মঙ্গলবার (১৪ আগস্ট) কোরবানির পশু কেনাবেচার এ চিত্র পাওয়া গেছে। সময় ঘনিয়ে আসায় এ পশুর হাট ধীরে ধীরে জমজমাট হয়ে ওঠছে।

প্রথমদিকে মহিষের আধিক্য ছিল এ পশুর হাটে। তবে গত সপ্তাহ থেকে দেশি গরুতে ভরে ওঠেছে এ হাট।

কোরবানির দিন যতই এগিয়ে আসছে, দেশিজাতের গরুর সরবরাহ ততই বাড়ছে। তবে মজুদ বাড়লেও দাম বাড়ছে দেশি গরুর। তাই দেশি গরুর দাম এখন মধ্যবিত্ত পরিবারের হাতের নাগালের বাইরে। অনেকে গরু কিনতে হাটে এলেও দাম বেশি থাকায় দরদাম করেই বাড়ি ফিরছেন।  

এদিকে, হাটে দেশি গরুর দাম বেশি থাকার সুযোগ নিয়ে দুই/তিনদিন থেকে রাজশাহীর বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ঢুকতে শুরু করেছে ভারতীয় গরু। তবে এসব গরুর মান ভালো নয়।

যে কারণে হাটে ভারতীয় গরু ওঠতে শুরু করলেও বেচাকেনা কম। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে প্রস্তুত করা দেশিজাতের গরুই কোরবানির জন্য বাড়তি দাম দিয়ে কিনছেন সামর্থ্যবানরা।    ট্রলার থেকে পশু নামানো হচ্ছে।  ছবি: বাংলানিউজরাজশাহী সিটিহাটে গিয়ে দেখা গেছে, আজ ছোট সাইজের গরুর (৬০ কেজি মাংস) দাম ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। মাঝারি সাইজের গরুর (৮০ কেজি মাংস) দাম ৬০ থেকে ৭০ হাজার ও বড় সাইজের গরুর (১০০-১৪০ কেজি মাংস) দাম ৯০ থেকে ১ লাখের ওপরে হাঁকানো হচ্ছে।

অপরদিকে আনুমানিক ১০ থেকে ১২ কেজি ওজনের কোরবানির ছাগলের দাম ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা, ১৫ থেকে ১৮ কেজি ওজনের ছাগলের দাম ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা ও ২০ থেকে ২৫ কেজি মাংস হবে এমন ছাগলের দাম হাঁকা হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

সিটিহাটে আসা দামকুরা এলাকার গরু ব্যবসায়ী গণি মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ক’দিন থেকে ভারতীয় গরু আসতে শুরু করেছে।

তবে এখন পর্যন্ত এর কোনো প্রভাব পড়েনি। এবারও দেশি জাতের গরুর চাহিদা বেশি রয়েছে। আর দেশি গরুর কোনো সংকটও নেই। কেবল দাম একটু বেশি। গো খাদ্যের দাম বাড়ায় এবার খামারে গবাদিপশু লালন-পালনের ব্যয় বেড়েছে। তাই গত বছরের তুলনায় দামও বেড়েছে।

এখানে তাদের করা কিছু নেই উল্লেখ করে পবা উপজেলার পারিলা গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আব্দুল আলীম বলেন, উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তা গরুর দামও বেড়েছে। খামারিরা কিছুটা বাড়তি লাভের আশায় এক বছর ধরে কোরবানির পশু লালন-পালন করেন। কিন্তু ভরা মৌসুমে হাটে তুলে দাম না পেলে তারাও ক্ষতির মুখে পড়বেন। আর লোকসান হলে গরু পালনের সংখ্যা কমবে।

বাজারে যার প্রভাব পড়বে। একদিকে গরুর দাম দ্বিগুণ হবে অন্যদিকে খামারের সংখ্যা কমে আসায় দেশি পশুর হাটগুলো ভারতীয় গরুর দখলে চলে যাবে। এর ওপর ভারতীয় গরু সব সময় না আসায় অন্য সময়েও সাধারণ বাজারে মাংসের দাম বাড়তি থাকবে বলে মন্তব্য করেন আব্দুল আলীম।  
 
তবে ভিন্ন আশঙ্কা প্রকাশ করে একই উপজেলার বড়গাছী গ্রামের নূরুল ইসলাম বলেন, তার খামারে এবার ১৫টি গরু পালন করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি গরু রয়েছে বিদেশি জাতের। এসব গরু পালন করতে বছরজুড়ে তাকে অনেক শ্রম দিতে হয়েছে। শ্রমিক নিয়ে এসব গরু পালন করেছেন কোরবানির মৌসুমে কিছু বাড়তি লাভের মুখ দেখবেন বলে। তবে যেভাবে ভারতীয় গরু ঢুকতে শুরু করেছে তাতে হাটে এর প্রভাব পড়তেই পারে। দেশি গরুর দাম শেষ পর্যন্ত না কমলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষ কম দামে ভারতীয় গরু কিনতে শুরু করবেন। এতে দেশি গরুর দাম পড়ে গেলে শেষ মুহূর্তে খামারিরা লোকসানে পড়বেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে, রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, কোরবানির জন্য জেলায় এবার পর্যাপ্ত সংখ্যক পশুর জোগান রয়েছে। এবার কোরবানির ঈদের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৩ লাখ ৪০ হাজার পশুর প্রয়োজন হবে। তবে মজুদ রয়েছে ৩ লাখ ৭২ হাজার ৯৪৪টি। ফলে সংকট তো হবেই না। উল্টো জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরে সরবরাহ করা যাবে।

খামারি ও ব্যক্তিগতভাবে এসব গরু মোটা তাজাসহ লালন-পালন করা হয়েছে। সাধারণ খাবার খাওয়ানো এসব গরু বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে ওঠেছে। তাই ঘাটতি কাটিয়ে এবারও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৩ হাজার বেশি পশু কোরবানির জন্য মজুদ রয়েছে বলেও জানান এ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।  

রাজশাহী সিটিহাটের ইজারাদার আতিকুল ইসলাম কালু বলেন, কয়েক বছরের তুলনায় এবারও হাটে প্রচুর পরিমাণে দেশি গরু-মহিষ ও ছাগল আসছে। তবে সবকিছুর দাম বাড়ায় কোরবানির পশুর দামও একটু বেশি। আর হাটে ভারতীয় গরু ঢুকলেও তা পরিমাণে অনেক কম। তাই দেশি গরুর ব্যবসায়ী বা খামারিদের এ নিয়ে আশঙ্কার কিছু নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৮
এসএস/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।