ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নদী ভাঙন আর প্ল্যান্টের ত্রুটি নিয়ে শঙ্কা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৮
নদী ভাঙন আর প্ল্যান্টের ত্রুটি নিয়ে শঙ্কা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের সুইচবাল্ব লিক হয়ে পানি বেরুচ্ছে। ছবি: বাংলানিউজ

বরিশাল: বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে বরিশালবাসীর জন্য নির্মিত দু’টি সারফেজ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হচ্ছে। যদিও তিনমাস আগে নগরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের রুপাতলীতে সারফেজ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি চালু হয়েছে। অপরদিকে নগরের বেলতলার প্ল্যান্টটি পরীক্ষামূলক চালুর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

সরকারের অর্থায়ানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে সিলেট ও বরিশালে পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও ড্রেনেজ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত প্ল্যান্ট দু’টি দিয়ে পানি সরবরাহ সম্ভব হবে কি-না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। কারণ তিনমাস আগে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া রুপাতলীর প্ল্যান্টটি বিভিন্ন সমস্যায় বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ ছিল।

বর্তমানে ওই প্ল্যান্টের আওতাধীন এলাকার সরবরাহ পাইপলাইন লিক হয়ে পানি বেরুচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাস্তা-ঘাটসহ স্বাভাবিক পানি সাপ্লাইয়ের কার্যক্রম। কী ধরনের সামগ্রী ব্যবহারে চালুর তিনমাসের মধ্যে এমনটা হচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে এখন।  অপরদিকে নদীভাঙন আতঙ্কের মধ্যেই পরীক্ষামূলকভাবে চালু হতে যাচ্ছে বেলতলার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট।  ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের সুইচবাল্ব লিক হয়ে পানি বেরুচ্ছে।  ছবি: বাংলানিউজবরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) সূত্র জানাচ্ছেন, বিসিসির এলাকার পাঁচ লাখ জনসাধারণের জন্য চার কোটি ৫০ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে কীর্তনখোলার তীরের বরিশালের বেলতলায় ২০১২ সালে ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এবং নগরের রুপাতলীতে ২০১৩ সালে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দু’টি সারফেজ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজ শুরু হয়। এ প্ল্যান্ট দুটো চালু হলে এক কোটি ৬০ লাখ করে তিন কোটি ২০ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি উৎপাদন করা সম্ভব হবে। রুপাতলীর প্ল্যান্টটি তিনমান আগে পরীক্ষামূলক চালনায় ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেলতলা খেয়াঘাটের প্ল্যান্টটি নদীভাঙনের হাত থেকে আদৌ রক্ষা করা যাবে কি-না তা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দেয়। তারপরেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গত বুধবারে বিসিসি ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এরফলে রুপাতলীর মতো বেলতলার প্ল্যান্টটিও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে। চালুর পরে যেসব সমস্যা দেখে দেবে তার সমাধান করা হবে। প্ল্যান্টের ত্রুটি ও নদী ভাঙন নিয়ে শঙ্কা।  ছবি: বাংলানিউজপ্ল্যান্ট পরিচালনার সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা যায়, বর্তমানে রুপাতলীর প্ল্যান্টটি চললেও বেলতলার প্ল্যান্টটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ এগোচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। প্ল্যান্টের সঙ্গে থাকা বিভিন্ন সুইচবাল্ব থেকে লিক করে পানি বেরুচ্ছে। কীর্তনখোলার তীব্র ভাঙনে ট্রিটমেন্ট প্লান্টের গাইড ওয়ালের প্রায় ৪শ ফুট ও একটি ওয়াকওয়ে নদীগর্ভে বিলীন। ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের ল্যাবরেটির ভবনের নিচের মাটি ও বালি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে ভবনটি পুরোপুরি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। আবার প্রি-সেডিমেন্টেশন হাউজের একাংশ ভেঙে নদীতে মিলে গেছে। ভাঙনরোধে কিছু জিও ব্যাগ দেওয়া হয়েছে তীরে।  

এদিকে রুপাতলী ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চালুর পর থেকে বিভিন্ন সমস্যায় বেশির ভাগ সময়ই ছিল বন্ধ। এর প্রত্যেকটি সমস্যার কথা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের কর্তৃপক্ষকে প্রতিনিয়ত জানিয়ে আসছে সিটি কর্পোরেশন। চলতি বছরের ২৭ জুলাই সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর বরিশাল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশল বরাবর এক চিঠিতে পাইপলাইনের ১০টি ত্রুটির কথা জানানো হয়। যেসব ত্রুটিতে রুপাতলী ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে সঠিকভাবে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এরমধ্যে পাইপ ও সুইচবাল্ব লিক করে পানি বের হওয়া ও পাইপলাইনের কোনো এয়ার বাল্ব কাজ না করাও ত্রুটি রয়েছে।  

অপরদিকে চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের পাইপলাইনের ত্রুটি নিয়ে শঙ্কিত সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। নদী ভাঙন ও প্ল্যান্টের ত্রুটি নিয়ে শঙ্কা।  ছবি: বাংলানিউজসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, পানি শোধনাগারের মেশিনারিজে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা পাইপলাইনে। সমস্যা ঠিক করতে আট দিন সময় লাগে। সেক্ষেত্রে চুক্তি অনুযায়ী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ছয় মাস তো ভালো দুই মাসও একটানা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট পরিচালনা করতে পারবে কিনা তা নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী মইনুল হাসান বাংলানিউজকে জানান, সিটি কর্পোরেশন ২৫ কোটি টাকা দেনা ছিল ওজোপাডিকোর কাছে। প্রথমে সেই অজুহাত দেখিয়ে তারা বিদ্যুৎ লাইন আনেননি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে । পরে তাদের কাছে হস্তান্তরের জন্য অনেক চেষ্টা করেও কোনো সুফল মেলেনি। মেশিনারিজ জিনিসপত্র টানা দু’বছর চালু না থাকলে সমস্যা হওয়াটা স্বাভাবিক। এটা নির্মাণের পরই যদি চালু হতো, তাহলে এখন যে সমস্যা দেখা দিচ্ছে তা হওয়ার প্রশ্নই ছিল না।

বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী মইনুল হাসান বাংলানিউজকে জানান, প্ল্যান্টের পানি সরবরাহের জন্য নগরে ৯৯ কিলোমিটার পাইপলাইন টানা হয়। এর কোনো ত্রুটি নেই। কিছু সুইচবাল্বের সমস্যা থাকায় আমরা সেগুলো ঠিক করেছি। আর পাইপ ফাটার বিষয়টি সঠিক নয়। কারণ পাইপ কখনও ফাটে না, ফাটে পাইপের জয়েন্ট ও সুইচবাল্বগুলো। নদীভাঙনের কবলে বেলতলা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট পড়ার পেছনে জমি অধিগ্রহণকারীদের দায়ী করে তিনি জানান, সিটি কর্পোরেশন কিভাবে ভাঙনকবলিত এলাকায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলো তা বুঝতে পারছি না। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট।  ছবি: বাংলানিউজবিসিসির পানি শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী (পাস) মো. ওমর ফারুক বাংলানিউজকে জানান, ছয় মাসের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দু’টি চালাচ্ছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। এরমধ্যে প্ল্যান্টের কোনো সমস্যা হলে সেটা তারা ঠিক করে দেবেন। বেলতলার প্ল্যান্টটি তৈরির সময় সঠিকভাবে সার্ভে করলে নদীভাঙন হতো না। ভাঙনে প্ল্যান্টের অনেক কিছুই বিলীন হয়েছে। যদিও এটা আমাদের বিষয় ছিল না। তারপরও আমরা ভাঙনের বিষয়টি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেছি। তারা একটি প্রকল্প হাতে নিয়ে, তার কাজ শুরু হলে ভাঙন সমস্যার সমাধান হবে। সে কাজে বিলম্ব হলে ভাঙন হুমকিতে পড়বে মূল প্ল্যান্টও।

তিনি বলেন, ভাঙনের কারণে প্রি-সেডিমেন্টেশন হাউজের একাংশ ভেঙে নদীর সঙ্গে এক হয়েছে। তাই এখন সরাসরি সেডিমেন্টেশন হাউজে নদী থেকে পানি তোলা হবে। এতে কেমিক্যাল ও ফিটকারির খরচও বাড়বে। এসব সমস্যার পাশাপাশি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে পানি সাপ্লাইয়ের বিষয়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যা চিহ্নিত করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। সম্পূর্ণভাবে ঠিক হওয়ার পরেই আমরা তাদের কাছ থেকে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বুঝে নেবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৮
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।