সরকারের অর্থায়ানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে সিলেট ও বরিশালে পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও ড্রেনেজ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত প্ল্যান্ট দু’টি দিয়ে পানি সরবরাহ সম্ভব হবে কি-না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। কারণ তিনমাস আগে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া রুপাতলীর প্ল্যান্টটি বিভিন্ন সমস্যায় বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ ছিল।
এদিকে রুপাতলী ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চালুর পর থেকে বিভিন্ন সমস্যায় বেশির ভাগ সময়ই ছিল বন্ধ। এর প্রত্যেকটি সমস্যার কথা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের কর্তৃপক্ষকে প্রতিনিয়ত জানিয়ে আসছে সিটি কর্পোরেশন। চলতি বছরের ২৭ জুলাই সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর বরিশাল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশল বরাবর এক চিঠিতে পাইপলাইনের ১০টি ত্রুটির কথা জানানো হয়। যেসব ত্রুটিতে রুপাতলী ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে সঠিকভাবে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এরমধ্যে পাইপ ও সুইচবাল্ব লিক করে পানি বের হওয়া ও পাইপলাইনের কোনো এয়ার বাল্ব কাজ না করাও ত্রুটি রয়েছে।
অপরদিকে চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের পাইপলাইনের ত্রুটি নিয়ে শঙ্কিত সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, পানি শোধনাগারের মেশিনারিজে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা পাইপলাইনে। সমস্যা ঠিক করতে আট দিন সময় লাগে। সেক্ষেত্রে চুক্তি অনুযায়ী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ছয় মাস তো ভালো দুই মাসও একটানা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট পরিচালনা করতে পারবে কিনা তা নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী মইনুল হাসান বাংলানিউজকে জানান, সিটি কর্পোরেশন ২৫ কোটি টাকা দেনা ছিল ওজোপাডিকোর কাছে। প্রথমে সেই অজুহাত দেখিয়ে তারা বিদ্যুৎ লাইন আনেননি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে । পরে তাদের কাছে হস্তান্তরের জন্য অনেক চেষ্টা করেও কোনো সুফল মেলেনি। মেশিনারিজ জিনিসপত্র টানা দু’বছর চালু না থাকলে সমস্যা হওয়াটা স্বাভাবিক। এটা নির্মাণের পরই যদি চালু হতো, তাহলে এখন যে সমস্যা দেখা দিচ্ছে তা হওয়ার প্রশ্নই ছিল না।
বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী মইনুল হাসান বাংলানিউজকে জানান, প্ল্যান্টের পানি সরবরাহের জন্য নগরে ৯৯ কিলোমিটার পাইপলাইন টানা হয়। এর কোনো ত্রুটি নেই। কিছু সুইচবাল্বের সমস্যা থাকায় আমরা সেগুলো ঠিক করেছি। আর পাইপ ফাটার বিষয়টি সঠিক নয়। কারণ পাইপ কখনও ফাটে না, ফাটে পাইপের জয়েন্ট ও সুইচবাল্বগুলো। নদীভাঙনের কবলে বেলতলা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট পড়ার পেছনে জমি অধিগ্রহণকারীদের দায়ী করে তিনি জানান, সিটি কর্পোরেশন কিভাবে ভাঙনকবলিত এলাকায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলো তা বুঝতে পারছি না। বিসিসির পানি শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী (পাস) মো. ওমর ফারুক বাংলানিউজকে জানান, ছয় মাসের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দু’টি চালাচ্ছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। এরমধ্যে প্ল্যান্টের কোনো সমস্যা হলে সেটা তারা ঠিক করে দেবেন। বেলতলার প্ল্যান্টটি তৈরির সময় সঠিকভাবে সার্ভে করলে নদীভাঙন হতো না। ভাঙনে প্ল্যান্টের অনেক কিছুই বিলীন হয়েছে। যদিও এটা আমাদের বিষয় ছিল না। তারপরও আমরা ভাঙনের বিষয়টি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেছি। তারা একটি প্রকল্প হাতে নিয়ে, তার কাজ শুরু হলে ভাঙন সমস্যার সমাধান হবে। সে কাজে বিলম্ব হলে ভাঙন হুমকিতে পড়বে মূল প্ল্যান্টও।
তিনি বলেন, ভাঙনের কারণে প্রি-সেডিমেন্টেশন হাউজের একাংশ ভেঙে নদীর সঙ্গে এক হয়েছে। তাই এখন সরাসরি সেডিমেন্টেশন হাউজে নদী থেকে পানি তোলা হবে। এতে কেমিক্যাল ও ফিটকারির খরচও বাড়বে। এসব সমস্যার পাশাপাশি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে পানি সাপ্লাইয়ের বিষয়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যা চিহ্নিত করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। সম্পূর্ণভাবে ঠিক হওয়ার পরেই আমরা তাদের কাছ থেকে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বুঝে নেবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৮
এমএস/এএটি