ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আঞ্চলিক দলের দ্বন্দ্বে এবার বন্ধ ছোট হাট-বাজারও

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৮
আঞ্চলিক দলের দ্বন্দ্বে এবার বন্ধ ছোট হাট-বাজারও বন্ধ পানছড়ির বিভিন্ন এলাকার বাজারের দোকান-পাট। ছবি: বাংলানিউজ

খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলা বাজারকে প্রায় ‘বন্ধ’ করে দেওয়ার পর এবার নতুন করে ছোট হাট-বাজারগুলোতেও ‘নিষেধাজ্ঞা’ জারি করা হয়েছে। খাগড়াছড়ির গিরিফুল থেকে পানছড়ি পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকার ছোট হাট-বাজারগুলোর দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা।
 
 

পানছড়ি বাজারের অচলাবস্থার জন্য ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপ) দায়ী করা হলেও এবার দোকান-পাট বন্ধের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিকে (এমএন লারমা গ্রুপ) দায়ী করেছেন স্থানীয়রা। এই অচলাবস্থা তৈরির প্রতিবাদে এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও স্থানীয়দের জানমালের নিরাপত্তা চেয়ে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।


 
পাহাড়ে আঞ্চলিক দল দু’টির বিরোধের জেরে গত ২০ মে থেকে পানছড়ি বাজারে উৎপাদিত কৃষি পণ্য বেচতে কিংবা কিনতে আসতে পারছেন না পাহাড়িরা। সাপ্তাহিক হাট-বাজার থাকছে ক্রেতা-বিক্রেতাশূন্য। শুধু তাই নয় খাগড়াছড়ি থেকে পানছড়ি কিংবা পানছড়ি থেকে খাগড়াছড়িতে প্রায় সব ধরনের পণ্য পরিবহনেও জারি রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইউপিডিএপের বাধার কারণে পাহাড়িরা বাজারে আসতে পারছেন না। তবে বাজার বন্ধের বিষয়ে ইউপিডিএফ বলছে, সন্ত্রাসীদের বাজারে আশ্রয়-প্রশ্রয়ের প্রতিবাদে জনগণ বাজার বয়কট করেছে।
 
জানা যায়, এমএন লারমাপন্থি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী দীর্ঘদিন ধরে পানছড়ি বাজারের ‘শুকতারা বোর্ডিং’-এ আছেন। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রসীত খীসার ইউপিডিএফ বোর্ডিং থেকে জনসংহতির ওই নেতাকর্মীদের বের করে দিতে বাজার ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ দিয়ে আসছেন। তার জেরে পানছড়ি বাজার অনেকটা ক্রেতা-বিক্রেতাশূন্য হয়ে থাকার পর জনসংহতি সমিতি নতুন করে অন্য হাট-বাজারের দোকান-পাটও বন্ধের নির্দেশ দেয় ব্যবসায়ীদের।

পানছড়ির ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আধিপত্যের এই দ্বন্দ্বে বাইরে থেকে যেমন ঢুকতে পারছে না কোনো পণ্য। তেমনি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ না থাকায় হু হু করে বেড়ে গেছে সেসবের দামও। যার জের টানতে হচ্ছে নিম্নআয়ের লোকজনকে।
 
এলাকার বাসিন্দারা জানান, বিবাদমান দু’টি পক্ষের কারণে নতুন করে পানছড়ির কুড়িয়াদিয়া ছড়া, পাকুজ্জাছড়ি, দেওয়ান পাড়া, মুনিগ্রাম, শিব মন্দির, বারো নাম্বার নলছড়া, ২নং প্রকল্প গ্রাম, খাগড়াছড়ি সদরের গিরিফুল, ব্রিকফিল্ড এলাকার দোকান-পাট বন্ধ রয়েছে।  
ক্রেতা নেই বলে পণ্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় খুচরা বিক্রেতারাসরেজমিনে কুড়াদিয়াছড়া বাজারে গেলে দেখা যায়, সব দোকান-পাট বন্ধ। রাস্তার পাশে উৎপাদিত কৃষিপণ্য নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় পাহাড়িরা। কুড়াদিয়া ছড়া বাজারের ব্যবসায়ী নিকন চাকমা ও বিজয় কান্তি চাকমা বাংলানিউজকে জানান, গত ৭ আগস্ট বিকেলে বাজার ব্যবসায়ীদের ডেকে ৮ আগস্ট থেকে দোকান-পাট বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। অন্যথায় জরিমানা কিংবা মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। তবে কারা হুমকি দিয়েছে এই বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
 
নাম প্রকাশে একাধিক ব্যবসায়ী জানান, কুড়াদিয়া ছড়ায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য আগে পানছড়ি বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারলেও নিষেধাজ্ঞার কারণে গত ২০ মে থেকে কৃষকরা তা পারছেন না। তাই পর্যাপ্ত ক্রেতা ও পাইকারি ব্যবসায়ী না পেয়ে চিন্তিত কৃষকরা। ইউপিডিএফ পানছড়ি বাজার বয়কটের ঘোষণা দেওয়ায় পাল্টা জনসংহতি সমিতি কুড়াদিয়া ছড়াসহ আশ-পাশের বাজার বন্ধ করে দিয়েছে।
 
এদিকে সোমবার (১৩ আগস্ট) সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও স্থানীয়দের জানমালের নিরাপত্তার দাবিতে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন দোকান মালিক ও স্থানীয়রা। আবার স্মারকলিপি দিয়ে ফেরার পথে শহরের মহাজন পাড়া এলাকায় চারজনকে আটকে রাখার অভিযোগ উঠলে ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়ক অবরোধ করে রাখেন স্থানীয়রা।
 
ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার ধনু চন্দ্র ত্রিপুরা বাংলানিউজকে বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে না পেরে এলাকার লোকজন কষ্টে আছে। আঞ্চলিক দলগুলোর রেষারেষিতে আমাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
 
বিভিন্ন এলাকায় দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সুদর্শন চাকমা বলেন, আমাদের পার্টি বাজার বয়কট, দোকান বন্ধ করে দেওয়ার মত রাজনৈতিক চর্চা করে না। এগুলো ইউপিডিএফ করে। কারণ মানুষকে কষ্ট দিয়ে তারা রাজনীতি করে।
 
পানছড়ি বাজার বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপিডিএফ এর জেলা সংগঠক মাইকেল চাকমা বলেন, ‘মূলত: পানছড়ি বাজারে কিছু দুর্বৃত্ত আশ্রয়-প্রশ্রয় নেওয়ায় জনগণই সচেতনভাবে বাজার বয়কট করেছে। এখানে আমরা জড়িত নই।  

তবে বিভিন্ন বাজারের দোকান-পাট বন্ধে জনসংহতি সমিতি জড়িত বলে অভিযোগ করেন তিনি।
 
পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ আবুল হাশেম বাংলানিউজকে বলেন, এই বিষয়ে দফায় দফায় বৈঠক করা হয়েছে। এখনো সুরাহা হয়নি। তবে আশা করি দ্রুত সমাধান হবে।
 
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি মাত্র খাগড়াছড়িতে যোগ দিয়েছি। এই সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৮
এডি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।