ঢেউয়ের তাণ্ডবে সৈকতের বালু ধুয়ে শ্রীহীন হয়ে গেছে পুরো সৈকত। সৈকত রক্ষায় কোনো পর্যায়ে থেকে কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন না হওয়ায় স্থানীয় ও পর্যটকরা মিলে চলতি বছরের শুরু থেকেই তুলেছেন বিভিন্ন দাবি, করেছেন মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছরের অব্যাহত ভাঙনে দীর্ঘ সৈকত এলাকা এখন ঝুঁকিতে রয়েছে। এরইমধ্যে কুয়াকাটা সৈকত লাগোয়া শত শত নারিকেল গাছ, ঝাউবনসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ও একাধিক স্থাপনা সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। একইভাবে গাছের গোড়ার মাটি ও বালি সরে গিয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে শত শত গাছ। আগে জোয়ারের সময়ও সৈকতের বেলাভূমিতে যে জায়গায় হাঁটা যেতো, এখন সে জায়গা পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রায় ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সৈকতের পূর্ব থেকে পশ্চিমে লেম্বুরচর পর্যন্ত চোখ পড়ে শুধু ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র। বর্তমান সময়ে এনিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীসহ পর্যটকরা বেশ উৎকন্ঠার কথা প্রকাশ করে আসছেন।
এদিকে ভাঙনরোধে জরুরি ভিত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড অস্থায়ীভাবে সৈকতে প্রটেকশনের কাজ শুরু করেছে।
পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, অস্বাভাবিক জোয়ার ও ঢেউয়ের তাণ্ডবে গাছপালা ও স্থাপনা বিলীন হওয়ার পাশাপাশি তীব্র ভাঙনের কারণে বর্তমানে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে কুয়াকাটার মূল রক্ষা বাঁধটি। ঢেউয়ের তাণ্ডবে বাঁধের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে এরই মধ্যে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সৈকত রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে একটি সবচেয়ে বড় প্রকল্প পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠালেও সেটি মন্ত্রণালয় থেকে বিস্তারিত সমীক্ষার জন্য ফেরত পাঠানো হলে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। তবে জরুরিভিত্তিতে বর্তমানে কুয়াকাটা সৈকতের বিধ্বস্ত বাঁধে তিন স্তরের বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। সৈকতের শূন্য পয়েন্ট থেকে পূর্ব ও পশ্চিমে ৮শ মিটার এলাকাজুড়ে জরুরিভিত্তিতে কাজ করা হচ্ছে। অপরদিকে বর্ষাকালে কাজ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন ঠিকাদার ও শ্রমিকরা। সাগর উত্তাল থাকায় যে কাজ করছেন তা আবার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ঢেউয়ের তাণ্ডবে সময় বালুভর্তি ব্যাগও সৈকত তলিয়ে যাচ্ছে। আবার জোয়ারের সময় সৈকত তলিয়ে থাকায় সে সময় কাজেও ধীরগতি চলে আসে বলে জানান স্থানীয় শ্রমিকদের সরদার বশির উদ্দিন।
কুয়াকাটার মূল বাঁধ রক্ষা কাজের সাব-কন্ট্রাক্টর হোসেন মোল্লা বাংলানিউজকে জানান, জরুরিভিত্তিতে বাঁধ রক্ষায় কাজের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে আমাদের চটের ব্যাগও দেওয়া হয়েছে। যাতে বালুভর্তি করে বাঁধ রক্ষার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এই ব্যাগ থেকে বালু বের হয়ে যাওয়ায় জোয়ারের সময় ব্যাগগুলো খালি হয়ে সমুদ্রে হারিয়ে যাচ্ছে। যদি সবগুলো জিও ব্যাগ দেওয়া হতো তাহলে বালু বের হয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকতো না। আর কাজেও সুবিধা হতো।
পটুয়াখালী (কলাপাড়া ও রাঙাবালী) পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের বাংলানিউজকে জানান, তিন স্তরের জিও ব্যাগ দিয়ে সাময়িকভাবে উত্তাল ঢেউয়ের ঝাপটা প্রতিরোধে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটা জরুরিভিত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব উদ্যোগে করা হচ্ছে। যে কাজে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন প্রথমে চটের বস্তায় করে বালু ফেলে, তারপর ওই বস্তার উপরে জিও ব্যাগ ফেলা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দক্ষিণাঞ্চল জোনের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাজিদুর রহমান সরদার বাংলানিউজ জানান, কুয়াকাটা সৈকত রক্ষা ও উন্নয়ন প্রকল্প তৈরি করে ২০১৭ সালের শেষের দিকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে এই প্রকল্পের বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২১২ কোটি টাকা। ইতোমধ্যেই প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদনের জন্য সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। কিন্তু বেড়িবাঁধের ভাঙনরোধে জরুরিভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বাংলানিউজকে বলেন, সৈকতের বর্তমান অবস্থান থেকে প্রায় ৫শ মিটার সামনে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের একটি গেস্ট হাউস ছিল। যেটি সমুদ্রের ঢেউয়ের তাণ্ডবে বিলীন হয়ে গেছে বহু আগে। গাছপালা-স্থাপনা সবই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সৈকতকে ঘিরে গড়ে ওঠা প্রায় ৫শ প্রতিষ্ঠান এখন হুমকির মুখে।
তিনি বলেন, কুয়াকাটাকে ঘিরে গেল কয়েক বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে সরকার। তবে বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে সৈকত টিকবে কি-না সেই নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সৈকত না টিকলে কুয়াকাটায় পর্যটক আসবে না।
সৈকতের ভাঙনরোধে দ্রুত প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে কুয়াকাটা পৌর মেয়র আব্দুর বারেক মোল্লা বাংলানিউজ জানান, কুয়াকাটা রক্ষা বাঁধ ক্রমশই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সৈকত ও বাঁধ রক্ষায় দ্রুত বড় ধরনের স্থায়ী প্রকল্প হাতে নেবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৮
এমএস/এএটি