কথাগুলো বলছিলেন মুন্সিগঞ্জের মিরকাদিমের নগর কসবা এলাকার খামারি মো. ফকির চাঁন।
তিনি বলেন, গো-খাদ্যের দাম অনেক বাড়তি।
ফকির চাঁনের দুই ছেলে মো. আক্তার হোসেন ও মো. মঞ্জুর হোসেন। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে তারা গরু পালন করছেন। ৭ মাস আগে ফরিদপুর জেলার পাড়াগ্রাম থেকে ৪টি ইন্ডিয়ান ধবল গরু কিনে কোরবানির উদ্দেশে লালন-পালন শুরু করেন।
রোববার (১২ আগস্ট) সরেজমিন মিরকাদিম ঘুরে দেখা যায়, ধবল গরুর খ্যাতি সবার জানা। খামারিদের ভাষ্য মতে-আসন্ন কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য ৫০টির মতো ধবল গরু আছে মিরকাদিমে। বসতঘরের পাশের ঘরে ৪-৫টি করে ধবল গরু কোরবানির উদ্দেশে পালন করছেন খামারিরা। অনেকটা আড়াল করেই পালন করছেন এসব গরু।
খামারিরা জানান, বেশি মানুষের চোখ পড়লে গরু বিক্রি হয় না। পুরান ঢাকা থেকে কিছু সংখ্যক ক্রেতা গরু কিনতে আসছেন। কিন্তু ভাল দাম না পাওয়ায় বিক্রি করছেন না খামারিরা। পরিবারের সদস্যদের মতো আদর করে বড় করে তোলা হয় এই গরুগুলো। কিন্তু গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, ঘনবসতি, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, পৃষ্ঠপোষকতার অভাবের কারণে মুখ ফিরেয়ে নিয়েছেন মিরকাদিমের খামারিরা।
বিগত কয়েক বছর আগের কোরবানির পরিবেশ এখন আর নেই।
ফকির চাঁন এর ছেলে মো. আকতার বাংলানিউজকে জানান, আসন্ন কোরবানি ঈদে ৪টি গরু সাড়ে ৫ লাখ টাকা করে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব গরুর ৫ মণ থেকে সাড়ে ৬ মণ পর্যন্ত মাংস হয়ে থাকে। কোরবানির কিছুদিন আগে এসব গরু ঢাকার হাটে নিয়ে যাওয়া হবে। বেপারীদের মাধ্যমে বিক্রি করা যায় কিনা তাও দেখা হচ্ছে।
জানা যায়, খৈল, ভুষি, খেসারির বাজারদর খুব চড়া। খৈল ছিল ৩০ টাকা যা বেড়ে হয়েছে ৯০ টাকা, ভুষি ছিল ১০-১৫ টাকা কিন্তু এখন কিনতে হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। প্রতিদিন প্রতিটি গরুতে ২০০ টাকা খরচ হয়। আমাদের ৪টি গরুতে মাসে ২৪ হাজার টাকা খরচ হয়। চিকিৎসা, আনুষাঙ্গিক খরচ এর সঙ্গে তো আছেই।
টেংগর এলাকার গরু ব্যবসায়ী মো. কামাল উদ্দিন। বর্তমানে তিনি গরু লালন-পালনের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য রিকশার গ্যারেজ করেছেন।
বাংলানিউজকে তিনি জানান, বর্তমানে গো-খাদ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। বিগত বছর কোরবানিতে ৮টি গরু বিক্রি করেছিলেন। তবে এবারের আসন্ন ঈদে ৪টি গরু বিক্রির জন্য রেখেছেন। ঈদের ২-৩দিন আগে ঢাকার রহমতগঞ্জ হাটে এই গরু নিয়ে যাওয়া হবে। এসব গরু প্রাকৃতিক খাবার ও অত্যন্ত যত্ন সহকারে পালন করা হয়। এজন্য ঢাকাইয়াদের প্রথম পছন্দ এসব গরু। তবে এখনো জমে ওঠেনি গরু হাটের বেচা-কেনা।
এছাড়া এবারে ঈদে মিরকাদিমের গরুর সংখ্যা কমে যাওয়ায় হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন অনেক ঢাকাইয়া।
খামারি জালাল হোসেন জানান, মিরকাদিমের ঐতিহ্যবাহী গরু কমে যাওয়ায় এবার অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন। ২৫ লাখ টাকা চালান নিয়ে নেমেছি, কিন্তু দুঃশ্চিন্তায় আছি পরিশ্রমের টাকা পাওয়া যাবে কিনা। কয়েক বছর আগেও দর কোষাকষিতে মুখোরিত থাকত এই এলাকার পরিবেশ। কোরবানির জন্য ৭-৮ মাস আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাজা গাভী, খাটো জাতের বুট্টি গরু, নেপালি, সিন্ধি জাতের গরু আনা হয়। এসব জাতের গরু কিনতে খরচ পড়ে ৩০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত। পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জ হাটে এসব গরু বিক্রি করা হয়।
মুন্সিগঞ্জ প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় খামার আছে ৩ হাজার ৪১টি। তাতে ১০ হাজার ৪১টি গরু, ৯০৮টি ছাগল, ২৫৩টি ভেড়া রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৮
আরএ