এলাকাবাসীর অভিযোগ, কয়েকদিন পরপর বাঁধে ধস দেখা দিলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ও দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু না হওয়ায় আবারও ভাঙতে শুরু করেছে তীররক্ষা বাঁধটি।
রোববার (১২ আগস্ট) দিনগত রাতে কমলনগর মাতাব্বর হাট এলাকায় নির্মাণাধীন তীর রক্ষা বাঁধের ৩ নম্বর পয়েন্টের উত্তর পাশে ১০০ মিটার, ৯ ও ১০ নম্বর পয়েন্টের দক্ষিণ পাশে ১০০ মিটারসহ একরাতে প্রায় ২০০ মিটার ধসে গেছে।
সোমবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এর আগে গত ২ আগস্ট ওই বাঁধের উত্তর পাশের ৫০ মিটার ধসে যায়। এর আগেও বেশ কয়েকবার বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙন দেখা দেখা দেয়।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, বাঁধ নির্মাণে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু না হওয়ায় দুই পাশের এলাকায় অব্যাহতভাবে ভাঙছে। আশপাশের এলাকায় ভাঙনের কারণে বাঁধ ধসে পড়েছে। গত বর্ষা মৌসুমেও ওই বাঁধে পাঁচবার ধস নামে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, বাঁধ নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে বারবার বাঁধটি ধসে যাচ্ছে।
বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের প্রতিবাদে ও ভাঙন থেকে কমলনগর রক্ষায় গত ২৪ জুলাই মানববন্ধন করেন স্থানীয় লোকজন।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রকল্প ইনচার্জ মো. আফছার বাংলানিউজকে বলেন, রাতে জোয়ার ও তীব্র স্রোতে প্রায় ২০০ মিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনার পর বাঁধ রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়। জিও ব্যাগ (বালু ভর্তি বিশেষ ব্যাগ) ডাম্পিং অব্যাহত রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুসা বলেন, নির্মাণাধীন বাঁধের অদূরে চর জেগে উঠেছে। যে কারণে পানির গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। তীব্র জোয়ারের কারণে বাঁধের কিছু অংশে ধস দেখা দিয়েছে। ধস ঠেকাতে কাজ চলছে।
তিনি বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে এককিলোমিটার বাঁধ যথেষ্ট নয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু না হলে বাঁধ রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে। তাই আরো সাড়ে ১৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পাঠানো হয়েছে।
২০১৪ সালে মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের জন্য ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। বরাদ্দ হওয়া টাকায় কমলনগরে এক কিলোমিটার, রামগতির আলেকজান্ডারে সাড়ে তিন কিলোমিটার ও রামগতিরহাট মাছঘাট এলাকায় এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ হওয়ার কথা।
২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন আলেকজান্ডার এলাকায় ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ করে।
এদিকে ওই বরাদ্দের ৪৮ কোটি টাকায় কমলনগরে এক কিলোমিটার কাজ পায় নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। অর্থ বরাদ্দের দুই বছর পর ২০১৬ সালের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করে।
ওই বছর নিম্নমানের বালু ও জিও ব্যাগ ব্যবহার করায় স্থানীয়দের চাপের মুখে কাজ বন্ধ করে দেয় নির্মাণকারী সংস্থা। অনিয়মের প্রতিবাদে এলাকায় কয়েক দফা কর্মসূচিও পালন করেছেন স্থানীয়রা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৮
এসআর/এমএ