ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বগুড়ায় আড়াই হাজার ফিটনেসবিহীন যানবাহন

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৮
বগুড়ায় আড়াই হাজার ফিটনেসবিহীন যানবাহন লাইসেন্স পেতে বগুড়ার বিআরটিএ কার্যালয়ে দীর্ঘ লাইন-ছবি-বাংলানিউজ

বগুড়া: বেশ কয়েক বছর আগে বাসের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মেয়াদ পার হয়েছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের এমন আন্দোলনের পর সড়কে বাস চালাতে কাগজপত্র হালনাগাদ করার সিদ্ধান্ত নেন মালিক।

এ কাজের জন্যই রোববার (১২ আগস্ট) বাসের মালিক মো. বেলাল হোসেন জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থেকে ছুটে এসেছেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) বগুড়া কার্যালয়ে। তারমত অনেকেই বিভিন্ন যানবাহনের প্রয়োজনীয় কাগজ ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন এবং নতুন করে করার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন।


 
সকাল ৯টায় লাইনে দাঁড়িয়ে বেলা ২টায় তিনি নির্ধারিত ফি জমা দেওয়ার কাউন্টারে প্রবেশ করতে পারেন। মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেডের একটি মাত্র বগুড়া কালেকশন বুথে সব ধরনের ফি জমা নেওয়া হচ্ছে।  

লাইনে দাঁড়িয়েছেন গোবিন্দগঞ্জ থেকে আসা লেগুনা মালিক আজাদুল ইসলাম, ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসা জামাদার পুকুরের সিরাজুল ইসলাম, দুপচাঁচিয়ার মিজানুর রহমান, ধুনটের মো. সুমন, সারিয়াকান্দির জাহেদুল ইসলামসহ অনেকে।
 
তারা বাংলানিউজকে জানান, বিভিন্ন খাতে ফি নেওয়ার বুথ মাত্র একটি। এ কারণে তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। অনেকের লাইনে দাঁড়িয়ে দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। এতে করে আবার পরের দিন আসতে হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) বগুড়া কার্যালয়-ছবি-বাংলানিউজ
তবে বিআরটিএ কার্যালয়ে লোকজনের উপস্থিতি অনেক কম। গত ১০ বছর ধরে ফিটনেস নেই বগুড়ায় এমন যানবাহনের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজারের বেশি। আর এ তালিকায় শুধু ব্যক্তি মালিকানাধীনই নয়, সরকারি যানবাহনও রয়েছে।
 
এসবের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই বিভিন্ন ধরনের পণ্যবাহী ট্রাক। এ ধরনের প্রায় এক হাজার ১২৯টি যানের জন্য গত ১০ বছরেও কোনো ফিটনেস নেওয়া হয়নি। বগুড়া বিআরটিএ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৩৮৪টি বড় বাস, ২০৫টি মিনিবাস, ৩৪৬টি টেম্পু, ভাড়ায়চালিত ২৯টি মাইক্রোবাস, ১৭৯টি প্রাইভেট মাইক্রোবাস, ১৯৭টি মোটরকার, ১১৩টি জিপ, ৭৩টি অটোরিকশা, ১২৩টি ট্রাক্টর এবং সরকারি কয়েকটি মিনিবাসের ফিটনেস নেই।  

ফিটনেসবিহীন এসব যান একদিকে যেমন দুর্ঘটনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তেমনি সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর বিআরটিএ সদর দফতর থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বগুড়ায় ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ফিটনেসবিহীন বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস ও অটোটেম্পুসহ প্রায় তিন হাজার যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তী দেড় মাসে এ জেলায় শতাধিক যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন বাতিলও করা হয়। কিন্তু এরপর যা হওয়ার তাই হয়। জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সংশ্লিষ্টরা আর বেশি দূর এগোয়নি কোনো অজ্ঞাত কারণে।  
 
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফিটনেস নবায়নের অনুরোধ ও নিয়মিত তাগাদা দেওয়া হয় মালিক-শ্রমিকদের। নিয়ম মানার জন্য অনেক সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। কিন্তু কোনভাবেই কাজ হচ্ছে না। সর্বশেষ চলতি বছরের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে ফিটনেস নবায়নের সুযোগ দেওয়া হয় তাদের। কিন্তু সেটাও গ্রহণ করেননি মালিক-শ্রমিকরা।

সেই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ফিটনেস নবায়নের জন্য যানবাহন মালিকদের নতুন করে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে এ কার্যাক্রম চালানো হচ্ছে। কিন্তু তাতেও তেমন একটা সাড়া মেলেনি। তবে সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সরকার কঠোর হওয়ায় অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। মালিক-শ্রমিকরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিকঠাক করতে প্রতিনিয়ত বিআরটিএ কার্যালয়ে ভিড় করছেন।
 
বিআরটিএ বগুড়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দীন বাংলানিউজকে জানান, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হালনাগাদ করতে মালিক-শ্রমিক সবাইকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এ সুযোগ কাজে না লাগালে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের তালিকা বিআরটিএ সার্ভার থেকে মুছে ফেলা হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯২২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৮
এমবিএইচ/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।