ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ওভারটেকিং-অনিয়মের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার নির্দেশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৮
ওভারটেকিং-অনিয়মের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার নির্দেশ বিমানবন্দর সড়কে পথচারী আন্ডারপাস নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

ঢাকা: ওভারটেকিংসহ ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের কারণে সড়কে দুর্ঘটনা ঘটে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ড্রাইভারদের লেন মেনে চলতে হবে। ওভারটেকিং বা কোনো ধরনের অনিয়ম বরদাশত করা যাবে না। ডিজিটাল পদ্ধতিতে ক্যামেরা ফিট করে অনিয়ম বন্ধ করতে হবে, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে।

রোববার (১২ আগস্ট) রাজধানীর কুর্মিটোলায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজ (এসআরসিসি) সংলগ্ন বিমানবন্দর সড়কে পথচারী আন্ডারপাস নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী এ ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপনের পর প্রকল্পের ওপর একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়।



** রমিজউদ্দিন কলেজের পাশে আন্ডারপাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

এরপর বক্তৃতায় সরকারপ্রধান বলেন, সুশিক্ষায় সুশিক্ষিত হওয়া ছাড়া কোনো জাতি উন্নত হতে পারে না। সেটা অনুধাবন করেই আমরা আমাদের শিশুদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য কাজ করছি।

নিরাপদে গাড়ি চালানো নিশ্চিত করার জন্য সরকার চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলেও অনেক চালক এতেও ফাঁকি দেয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ড্রাইভারগুলো ভালোভাবে ট্রেইনিং করে না। হেলপারদের হাতে গাড়ি দিয়ে দেয়। তারপরও আমাদের নানা পদক্ষেপের কারণে সড়কে দুর্ঘটনা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে।

তবে বিমানবন্দর সড়কে রমিজ উদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া বাসের চালক নিয়ম-বহির্ভূতভাবে গাড়ি চালাচ্ছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই ড্রাইভার যেটা করেছে, ক্ষমার অযোগ্য, এ ধরনের অপরাধ ক্ষমা পাবে না। দায়ী চালকদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে। বিমানবন্দর সড়কে পথচারী আন্ডারপাসের নকশা।  ছবি: পিআইডিআন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে পড়ে
দুর্ঘটনাটির পর শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামলে তাদের দাবি-দাওয়া সরকার মেনে নেয়। সে বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনে যখন দেখলাম স্কুলের ইউনিফর্ম বানিয়ে অনেকে ঢুকে পড়ছে, বুঝলাম তৃতীয় পক্ষ। এটা দেখার পর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়ি। তখন একটি অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যেতে বলি। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই, তারা সময়মতো ঘরে ফিরে গেছে।

 ‘যখন আমাদের (ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়) অফিস আক্রান্ত হলো, তখন সেখান থেকে ফোন আসছিল, বলা হচ্ছিলো- আমরা তো টিকতে পারছি না, শুধু পাথর ছোড়া হচ্ছে। তখন বলেছি শুধু ধৈর্য ধরতে। কারা করলো এটা? সেসময় গুজব ছড়ানো হয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে বিভিন্ন দর্জি দোকানে ইউনিফর্ম বানানোর হিড়িক পড়ে গেছে, এসব কারা করেছে?’

গুজবে কান দেবেন না
গুজবে কান না দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে অনেকে গুজব ছড়িয়েছে। দয়া করে গুজবে কান দেবেন না। বিভিন্ন সময়ে যাদের পুরস্কৃত করেছি, সেই বয়স্কদেরও দেখলাম এ ধরনের গুজব ছড়াতে। এসব তো মানা যায় না। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে দিয়েছি। সুশিক্ষা ও আধুনিক শিক্ষার জন্য। অশ্লীল কথা বা গুজবের জন্য নয়।

পথচারীদেরও সচেতন হতে হবে
পথচারীদেরও রাস্তায় চলাফেরায় সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, যতদিন আমাদের শিশুরা রাস্তায় ছিল অনেকে আইন-কানুন মেনেছে। আমাদের মন্ত্রীদেরও গাড়ি থেকে নামতে বলেছে, তখন ফোন এসেছিল- কী করবো। বলেছি ওরা যা বলে শোনেন, মনে করেন; আপনার সামনে এরা কারও ছেলে-মেয়ে, কারও নাতি-পুতি। নিজের নাতি-পুতির কথা শোনেন না? শোনেন। মনে করুন ওরা নাতি-পুতি যা বলে তা-ই শোনেন। প্রত্যেকে কিন্তু শুনেছে।  

‘কিন্তু যখনই সবাই ফিরে গেলো, স্বাভাবিক হলো আমাদের যানবাহন চলাচল, আমরা তখন কী দেখি? রাস্তায় নেমেই, পাশে ফুটওভার ব্রিজ- দেখলাম ইয়াং ছেলে-মেয়ে সামান্য কয়েক কদম হাঁটলেই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে পারে- সেটা ব্যবহার না করে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। এভাবে বেআইনিভাবে রাস্তা পার হওয়া, এটা তো গ্রহণযোগ্য নয়। একটু আগে ভিডিও ক্লিপ দেখলাম যে ছোট শিশু দিল দৌড়। যদি ওখানে চট করে একটা গাড়ি আসতো তাহলে তো দুর্ঘটনা ঘটতো। এ দায়িত্ব কে নিতো। পথচারীদের আন্ডারপাস ও ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ’

শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সবার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাস্তা পারাপারের সময় দাঁড়িয়ে একবার ডানে দেখতে হবে, একবার বামে দেখতে হবে- কোনো গাড়ি আসে কি-না। সুনির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হবে। কোথাও ফুটওভার ব্রিজ আছে, কোথাও আন্ডারপাস, কোথাও জেব্রা ক্রসিং আছে, ঠিক সেই জায়গাগুলো দিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হবে। এর বাইরে যত্রতত্র দিয়ে রাস্তা পারাপার মোটেও ঠিক নয়।

যত্রতত্র নয়, বাস থামবে স্টপেজে 
গাড়িচালকদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাসগুলো যদি প্যাসেঞ্জার নামাতে হয় যেখানে স্টপেজ সেখানে থামাতে হবে। এর বাইরে যেখানে-সেখানে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো ও নামানো যাবে না। যারা নিয়ম মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, তাদের জরিমানা করতে হবে, তাদের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। ফিটনেসবিহীন বা লাইসেন্সবিহীন গাড়ি সড়কে চলতে পারবে না। বাস একটা একটার পেছনে চলবে, ওভারটেকিং করতে গেলে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা পুলিশের দায়িত্ব। আইজিপি (মহাপুলিশ পরিদর্শক ড. জাবেদ পাটোয়ারী) এখানে আছেন, তাকে আমি বলছি আপনি সেভাবে নির্দেশ দেবেন। অনেক সময় গাড়ি ধরতে পারেন না, সেক্ষেত্রে ক্যামেরা ফিট করে রাখতে হবে। কেউ কোনো রকম অনিয়ম করছে কি-না। আমরা নাম্বার প্লেট তৈরি করে দিয়েছিলাম, এটা মনে হয় কেউ ফলো করে না। সঙ্গে সঙ্গে আপনারা ফলো করে সিগন্যাল দিয়ে দিতে পারবেন। এই কাজগুলো আমাদের করতে হবে।

‘যেখানে যেখানে হাসপাতাল-স্কুল-কলেজ আছে, সেখানে আন্ডারপাস, ফুটওভার ব্রিজ করে দিতে হবে। স্কুল-কলেজগুলো ছুটির সময় একজন ট্রাফিক পুলিশ সেখানে থাকতে হবে তাদের নিরাপদ পারাপারের জন্য, প্ল্যাকার্ড এবং কার্ড নিয়ে। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরাও ভালো ট্রাফিক কন্ট্রোল করতে পারে, সেখান থেকেও আমরা কিছু ভলান্টিয়ার নিতে পারি। তবে অবশ্যই উঁচু ক্লাস থেকে নিতে হবে। আন্ডারপাসগুলোতে পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সেখানে সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকবে, কিন্তু ক্যামেরাগুলো যেন সুরক্ষিত ও খুব গোপনে থাকে। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। যাতে যারা পারাপার করবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। ’বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাযেখানে-সেখানে ময়লা ফেলবেন না
নগরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতের জন্য প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের মানুষের বদঅভ্যাস যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে। পানি খেলো, বোতলটা ছুড়ে ফেললো। চিপস খেয়ে প্যাকেটটা ছুড়ে মারলো। কলা খেয়ে খোঁসাটা ছুড়ে মারলো বা কোনো খাবার খেয়ে একটা কিছু ছুড়ে মারলো। এটা কিন্তু কখনো ঠিক না। প্রত্যেকটা গাড়িতে সব জায়গায় ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা, নির্দিষ্ট বিনে ময়লা ফেলতে হবে। প্রত্যেকটা বাসে বিন থাকতে হবে। স্কুল-কলেজকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। শিশুদের ছোট বেলা থেকে এ শিক্ষা দিতে হবে।

শিক্ষার্থীরা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রতিটি স্কুল সংলগ্ন সড়কে স্পিড ব্রেকার, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। হারানোর বেদনা কী আমি জানি। আমি চেষ্টা করেছি নিহতদের পরিবার ও আহতদের চিকিৎসায় সহযোগিতা করতে। শিক্ষার্থীরা যে দাবি করেছে আমরা তা পূরণ করেছি। শিক্ষার্থীদেরও বলবো ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলতে হবে। মন দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। আজকের শিশু তোমাদেরই দেশ। আগামী দিনে তোমরাই দেশের নেতৃত্ব দিবে। নিজেদের সেভাবে গড়ে তুলবে।

‘আজকে আমাদের ছোট শিশুরা আমাদের যে চোখ খুলে দিয়েছে। আমি আশা করি প্রত্যেকে স্ব স্ব স্থানে যার যার নিজ দায়িত্ব যথাযথ পালন করবেন। পথচারীরা নিশ্চয়ই রাস্তার নিয়ম-কানুন মেনে চলবেন। ড্রাইভাররা-হেলপাররা সবাই নিয়ম মেনে গাড়ি চালাবেন। ’

রাজধানীর মানিকমিয়া অ্যাভিনিউতে, বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে বিমানবন্দরে আন্ডারপাস এবং প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট অফিসের সামনে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদসহ বেসামরিক ও সামরিক শীর্ষ কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজ সংলগ্ন সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বেপরোয়া দুই বাসের চাপায় প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজীব নিহত হওয়ার পর এর প্রতিবাদে এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।  

তাদের আন্দোলনের মুখে সরকার নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া মেনে নেয়। এরই অংশ হিসেবে এই আন্ডারপাস নির্মাণ হচ্ছে। এর আগে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য পাঁচটি বাসও হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৮/আপডেট ১৩৩৬ ঘণ্টা
এমইউএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।