গত ২৯ জুলাই বেপরোয়া বাসের পাল্লাপাল্লিতে দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পরে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে ৮ আগস্ট ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি চুক্তিতে চালকদের হাতে গাড়ি তুলে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পরদিন ৯ আগস্ট থেকে পরিবহন কর্তৃপক্ষ চালক নিয়োগ দিয়ে বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
মালিক সমিতির এ সিদ্ধান্ত ধীর গতিতে হলেও বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। কিন্তু আগে জমার বাইরে বাকি উপার্জিত অর্থ পকেটে ঢুকতো বলে সেসময় আয় বেশি হলেও নতুন এই সিদ্ধান্তে পরিবহন শ্রমিকদের পকেটে টাকা ঢুকছে তুলনামূলক কম। সেজন্য অনেকে বেশ নাখোশ। তবে সিদ্ধান্তটিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন সচেতন পরিবহন শ্রমিকরা।
শনিবার (১১ আগস্ট) সদরঘাটের ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে গাজীপুরের টঙ্গীর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসে দেখা যায়- কাগজ সাঁটিয়ে সেখানে লেখা হয়েছে ‘এই বাসটি ওয়েবিলে চলে’। নতুন নিয়ম চালু করে ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে ছাড়ার সময় চালকের হাতে ওয়েবিলের কাগজ ও একটি বোর্ড ধরিয়ে দেওয়া হয়। তবে সে বাবদ নেওয়া হয় ৪০ টাকা। ওয়েবিল চেককারীর ৩০ এবং বাকি ১০ টাকা বোর্ডের জন্য।
এই বাসের সুপারভাইজর আব্দুল হক বাংলানিউজকে জানান, চুক্তি বন্ধ করে ওয়েবিল চালু হয়েছে। সদরঘাট ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে বারিধারা পৌঁছতে তিনবার ওয়েবিল সই করা বাবদ দিতে হয়েছে ৬০ টাকা। আগে সিটিং সার্ভিসের নামে ভাড়া কাটা হলেও এবার ওয়েবিল পদ্ধতি চালু করেও আগের মতো লোকাল সার্ভিসের রূপেই আছে এ বাসের সেবা। সিট পূর্ণ হয়ে গেলেও দাঁড়িয়ে ছিলেন ৪-৫ জন যাত্রী।
সুপারভাইজরের দাবি, আগে চুক্তিতে যে টাকা পাওয়া যেতো নতুন নিয়মে তিনজন স্টাফের খরচ উঠবে না। বাড়তি দু’একজন তো তুলতেই হবে।
গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে সদরঘাটগামী আজমেরী গ্লোরী পরিবহনের চালক নুর ইসলাম। শুক্রবার (১০ আগস্ট) রাতে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, মালিক সমিতি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা ভালো। আগে দিন চুক্তিতে কাজ করতাম, বেশি আয়ের আশায় যাত্রী তুলতে পাল্লাপাল্লি হতো। যতো বেশি যাত্রী ততো কামাই। এখন যাত্রী তোলার জন্য প্রতিযোগিতা নাই।
তবে মালিক সমিতির এই সিদ্ধান্ত একেবারে না মানার নজিরও পাওয়া যাচ্ছে। যেমন সদরঘাট থেকে সাভারগামী ‘সাভার পরিবহন’ এর চালক এবং সহকারীদের চুক্তিতে দিনে দেওয়া হতো তিন হাজার টাকা। সেই চুক্তি এখনও বন্ধ করেননি এই বাসটির মালিক দেবদাস। শুক্রবার রাতে সাভার থেকে ফিরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে পার্কিং করে দেবদাস তার বাসের চালক তারেক এবং একজন সহকারীকে নিয়ে দিনের হিসাব কষছিলেন।
চুক্তি এখনও বন্ধ করেননি কেন- প্রশ্নে মালিকের দাবি, ‘আমার একটিই বাস। আমরা তিনজন মিলেই চালাই। আমি ভাড়া কাটি। পাল্লাপাল্লি হয় না। ’ মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত মানছেন না কেন- প্রশ্ন করা হলে কোনো সদুত্তর দেননি দেবদাস।
আজমেরী গ্লোরী পরিবহনের চালক নুর ইসলাম জানান, চুক্তি বন্ধ হওয়ার পরে গাড়ির তেল ও অন্যান্য খরচ বাদে সারাদিনের রোজগারের ৩৫ শতাংশ তিনি, সুপারভাইজর ও হেলপার সমান ভাগ করে নেন। আগে যেখানে হাজার টাকা থেকে দুই হাজারে ঠেকতো এখন সেখানে গড়ে প্রায় এক হাজার করে পকেটে আসে।
তবে আগে একেক দিন একেক হিসাব থাকলেও এখন প্রতিদিনই প্রায় সমান আয় হয় বলে জানান চালক নুর ইসলাম।
পকেটে আয়ের টাকা কম আসায় ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন আজমেরী গ্লোরী পরিবহনের আরেক চালক লিটন মিয়া। তিনি বলেন, আমাদের আয় কমে গেছে। দিনের আয়ের ৩৫ শতাংশ থেকে আয় কম। আমরা এটা বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করার দাবি জানাই।
লিটন মিয়া বলেন, হাওয়ার ওপর গাড়ি চলে। কখন দুর্ঘটনা হবে বলা যায় না। আমরা ইচ্ছা করে দুর্ঘটনা ঘটাই না। চুক্তি বাতিল করা মালিক পক্ষের সিদ্ধান্ত ভালো। তবে আয় কম হলেও এই ব্যবস্থা চালু থাকলে দুর্ঘটনা কম হবে মনে মনে করে লিটন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৮
এমআইএইচ/এইচএ/