ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

কোরবানির চামড়া পরিশোধনের সক্ষমতা নেই সাভার ট্যানারির

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩১ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৮
কোরবানির চামড়া পরিশোধনের সক্ষমতা নেই সাভার ট্যানারির সাভারে ট্যানারি শিল্প নগরী কি পারবে কোরবানি পশুর চামড়া পরিশোধনের চাপ নিতে? ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: সামনে পবিত্র ঈদুল আজহা। এই ঈদে পশু কোরবানি হবে। তবে কোরবানির পশুর বিপুল পরিমাণ চামড়া পরিশোধনের সক্ষমতা নেই সাভারে স্থাপিত ট্যানারি কারখানাগুলোর। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাভারের বিশাল ট্যানারি পল্লি গড়ে তোলা হয়েছে। তবে তাতে কতটুক পরিবেশ রক্ষা হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

তাছাড়া সরকারের এই উদ্যোগ কতটুক কাজে আসবে এ নিয়েও সংশয় রয়েছে।
 
সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরা ইউনিয়নে স্থাপিত ট্যানারি পল্লি ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।  

ট্যানারি প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, সেখানকার পরিবেশ প্রতিনিয়তই ‍দূষিত হচ্ছে। ট্যানারি পল্লিতে প্রবেশের রাস্তা থেকে শুরু করে সর্বত্রই বর্জ্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। আর সার্ভিস রাস্তাগুলো দিয়ে গাড়ি চলা দূরের কথা, হেঁটে চলাই দুরুহ।
 
সরকার দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে গত বছর ডিসেম্বর মাসে পুরোদমে কাজ শুরু করে নতুন ওই ট্যানারি পল্লি। হেমায়েতপুর ট্যানারি পল্লির চারটি মডিউলে দিনে ২৫ হাজার কিউবিক মিটার তরল বর্জ্য শোধন করার ক্ষমতা রয়েছে।  

সাভারে ট্যানারি শিল্প নগরী কি পারবে কোরবানি পশুর চামড়া পরিশোধনের চাপ নিতে? ছবি: বাংলানিউজসেখানে ঈদের আগেই অর্থাৎ বর্তমানে প্রতিদিন ২৩-২৪ হাজার কিউবিক মিটার বর্জ্য পরিশোধন করা হচ্ছে। কোনো দিন আবার ২৮ হাজার কিউবিক মিটারও ট্রিটমেন্ট করছে।  

সবশেষ গত ১৭ জুলাই (মঙ্গলবার) ২৪ হাজার ৩২৩ দশমিক ১৩ কিউবিক মিটার তরল বর্জ্য পরিশোধন করা হয়েছে।
 
চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ সংগঠন ও সরকারি হিসাবে মতে, ঈদুল আজহায় ৬০ শতাংশ চামড়া বেড়ে যায়। সারাবছর যে সংখ্যক চামড়া আসে তার ৬০ শতাংশই আসে ঈদের সময়। তাহলে এই ঈদে কিভাবে তরল বর্জ্য পরিশোধন করবে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি)। এ নিয়ে খোদ প্রকল্প সমন্বয়কই সন্দিহান।
 
সিইটিপি’র সাবেক প্রকল্প পরিচালক বর্তমানে প্রকল্প সমন্বয়ক মো. আব্দুল কাইয়ুম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ধারণ ক্ষমতা আছে ২৫ হাজার কিউবিক মিটার। এর চেয়ে বেশি যখন আসবে তখন নিতে তো হবেই তবে সেই তরল বর্জ্য ওভাবে পরিশোধন বা ট্রিটমেন্ট হবে না।  

‘তখন দেখা যাবে ৪০-৬০ শতাংশ পরিশোধন করেই ছেড়ে দিতে হবে। ঈদের সময় ৬০ শতাংশ চামড়া বেশি আসে। এখন সেই চামড়া কিভাবে কী করবে এটা সরকারকেই ভাবতে হবে। এটা নিয়ে আমরা কিছু করতে পারবো না। ’ 
সাভারে ট্যানারি শিল্প নগরী কি পারবে কোরবানি পশুর চামড়া পরিশোধনের চাপ নিতে।  ছবি: বাংলানিউজএ নিয়ে পরিবেশবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বাংলানিউজকে বলেন, হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প সাভারে স্থানান্তর সাংঘাতিক প্রহসন ও প্রতরণামূলক কার্যক্রমে পরিণত হয়েছে। আসলে বুড়িগঙ্গাকে দূষণের হাত থেকে রক্ষার নামে নতুন নতুন দূষণের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।  

তিনি বলেন, সরকার যথাযথ সমীক্ষা না করেই এই প্রকল্প করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। এর জন্য দায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক শাস্তি হওয়া উচিত। এতে আসলে বুড়িগঙ্গা দূষণ কমবে না, কেননা ধলেশ্বরী নদী থেকে পানি প্রবাহ এসে বুড়িগঙ্গাতেই পড়বে। সুতরাং দূষণের জায়গা আরও বিস্তৃত হবে।
 
শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা জেলার সাভার উপজেলায় কান্দি বৈলারপুর ও চন্দ্র নারায়ণপুর মৌজা এবং কেরানীগঞ্জ উপজেলার চরনারায়ণপুর মৌজায় ১৯৯ দশমিক ৪০ একর জমির উপর গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিক চামড়া শিল্প নগরী। যেখানে রয়েছে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি)।  

মোট জমির ১৭ একর ব্যবহৃত হয়েছে সিইটিপি নির্মাণে। প্রকল্প এলাকায় ২০৫টি প্লটের মাধ্যমে ১৫৫টি শিল্প ইউনিটকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ১১৪টি শিল্প ইউনিট তাদের চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ শুরু করেছে।  

অন্যরা অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ করছে। তবে সব শিল্প ইউনিট আসবে কি-না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৪ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৮
এসএম/এমএ

** সাভারের পরিণতি কি হাজারীবাগের মতো!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।