ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

উদ্বোধনের আগেই তিস্তা সেতুর সংযোগ সড়কে ধস

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৮
উদ্বোধনের আগেই তিস্তা সেতুর সংযোগ সড়কে ধস বালুর বস্তা দিয়ে ধস ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। ছবি বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: উদ্বোধনের আগেই ধসে পড়ছে লালমনিরহাটের দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর সংযোগ সড়ক ও ব্রিজ। কাজের মান নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগের শেষ নেই।

দায় এড়াতে দু'বার সংস্কার করেও রক্ষা করতে পারছে না স্থানীয় সরকারের প্রকৌশল দফতর।

জানা গেছে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীক রুট বুড়িমারী স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী ও বিভাগীয় শহর রংপুরের দূরত্ব কমিয়ে আনতে তিস্তা নদীর 'কাকিনা-মহিপুর' ঘাটে দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু নির্মাণ করেছে সরকার।

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্বেশ্বর ও রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষীটারী ইউনিয়নের মহিপুর এলাকায় তিস্তা নদীর ওপর ২০১২ সালের ১২ এপ্রিল এ সেতুর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের আগেই তিস্তা সেতুর সংযোগ সড়কে ধস।                                          ছবি বাংলানিউজ সেতু বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল দফতর। ২০১৪ সালের ৩১ জুন নির্মাণ কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাভানা কনস্ট্রাকশন। এরই মধ্যে সেতুর কাজ বুঝে নিয়েছে বাস্তবায়নকারী কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল দফতর।

কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, ১২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ফুটপাতসহ ৯ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থের দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুতে রয়েছে ১৬টি পিলার, ২টি এপার্টমেন্ট, ১৭টি স্প্যান, ৮৫টি গার্ডার। একই বরাদ্দে সেতুটি রক্ষার জন্য উভয় পাশে ১৩০০ মিটার নদী শাসন বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর সঙ্গে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের কাকিনা থেকে সেতু পর্যন্ত ৫.২৮০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ২টি প্যাকেজে ৪ কোটি ৪৬ লাখ এবং এ সড়কে ২টি ব্রিজ ও ৩টি কালভার্ট নির্মাণে ৩টি প্যাকেজে ৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয় হয়। সেতু থেকে রংপুরের অংশে ৫৬৩ মিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় হয় ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। বালুরবস্তা ও জিও ব্যাগ দিয়ে ধস ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।  ছবি বাংলানিউজসেতুর নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই ৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। পরে ওই সড়ক বর্ধিত করার নামে ২টি প্যাকেজে ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়। সড়কটি প্রস্থে ১২ থেকে ১৮ ফুট হলেও নিম্নমানের কাজের কারণে আবারও চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। ফলে তৃতীয় দফায় আবারও ৫ কিলোমিটার এ সড়কটি শক্তিশালী করার নামে বরাদ্দ দেয়া হয় ৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। সড়ক নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে ১ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। কিন্তু এ সড়কে তিনগুণ অর্থ বেশি খরচ করেও কাজ হচ্ছে না। এ ৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে তিন দফায় মোট ১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হলেও উদ্বোধনের আগেই ধসে যেতে শুরু করেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কে ২ ফুট এটেল মাটি দেয়ার কথা থাকলেও শুধু বালুর ওপর খোয়া দিয়ে দায়সাড়া কাজ করায় ধসে যাচ্ছে সড়ক। ব্যবহৃত খোয়ার গুণগত মান নিয়ে অভিযোগ করেও সুফল পাননি স্থানীয়রা। ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম থাকলেও টাকার জোরে স্থানীয় প্রকৌশলীরা সব কিছু জায়েজ করে নিয়েছেন।

নিম্নমানের কাজ ঢাকতে সড়কটি তিন দফা সংস্কার করেও চলাচলের উপযোগী করতে পারছে প্রকৌশল দফতর। এরই মাঝে ২টি ব্রিজ ও ২টি কালভার্টের মোকা ধসে পড়েছে। যা জিও ব্যাগ ফেলে আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করা হচ্ছে। ভেঙ্গে যেতে শুরু করেছে সড়ক।

নদী শাসনের ১৩০০ মিটার বাঁধ অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। তিস্তার মূল স্রোতধারা সেতু হয়ে না গিয়ে লোকালয়ের দিকে এসেছে। ফলে এ ৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ও ব্রিজ কালভার্ট ভেঙ্গে যেতে বসেছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে এ সড়কসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি ও হাট-বাজার। এ সড়কটি ভেঙ্গে গেলে তিস্তা দ্বিতীয় সড়ক সেতুটি কোনো কাজেই আসবে না, সংশয় স্থানীয়দের।

এ দিকে অভিযোগ রয়েছে, নিজের দায় এড়াতে সুকৌশলে সেতু ও সড়কটি স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল দফতর রংপুরের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছেন কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ নেওয়াজ খান। এ প্রকল্পে ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে’ পরিণত হয়েছেন তিনি। ২০১১ সাল থেকে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ওপর মহলকে মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ করে বদলি ঠেকিয়ে আসছেন এ প্রকৌশলী। সরকারি বিধিমতে প্রতি তিন বছর পর কর্মস্থল থেকে বদলি নেয়ার কথা থাকলেও এ প্রকৌশলীর ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না।

এ সেতুর নিয়মিত যাত্রী মুন্না, আজিজুল, শিপন বাংলানিউজকে জানান, নাম মাত্র কাজ দেখিয়ে এ প্রকল্পের অর্থে ঠিকাদার, সরকার দলীয় নেতাকর্মী ও প্রকৌশলীদের পকেট মোটা হয়েছে। এজন্য উদ্বোধন হওয়ার আগেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে সড়কটি। বালুর রাস্তায় যেখানে সিসি ব্লক ধসে পড়েছে, সেখানে জিও ব্যাগে কীভাবে রক্ষা পাবে?

সমস্যা সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ নেওয়াজ খান বাংলানিউজকে জানান, নদী প্রতিমুহূর্তে তার গতিপথ পরিবর্তন করে থাকে। সেতু নির্মাণের পরিকল্পনার সময়ের গতিপথ অনুযায়ী সেতু ও নদী শাসন বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এখন কোনোভাবে নদী গতিপথ পরিবর্তন করেছে। এটা পর্যালোচনা বা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া তার কাজ নয়। সেটা দেখবে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে কাজ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের আগেই কাজ শেষ করা হবে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫২ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৮
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad