এতে একদিকে যেমন ভূমিহীনদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে ছোট হয়ে আসছে গাইবান্ধা জেলার আয়তনও।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য মতে, বিগত ৯০ বছরে শুধু গাইবান্ধা সদর উপজেলার প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকা ভেঙে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবল স্রোতে। সর্বস্ব হারিয়ে ভূমিহীন ও হতদরিদ্রের খাতায় নাম লিখিয়েছে হাজারও মানুষ। ভাঙন কবলিত সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সুন্দরগঞ্জসহ বাকি তিন উপজেলার চিত্রও একি রকম।
স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় ৭শ কোটি টাকা ব্যয় করেও ঠেকানো যায়নি নদী ভাঙন। বিশেষজ্ঞদের মতে এ অবস্থায় নদী ভাঙা মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে দরকার পরিকল্পিত স্থায়ী পদক্ষেপ।
এদিকে, উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়তে থাকায় গত ১০ দিনে প্রবল স্রোতে সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট এলাকার অন্তত দেড়শ বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মূল্যবান সম্পদসহ গৃহহীন হয়ে পড়েছে অন্তত ৫০টি পরিবারের দুই শতাধিক মানুষ। এসব মানুষ জীবন বাঁচার তাগিদে আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি খাস জমিসহ অন্যের বাড়িতে।
সরেজমিনে কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র। মানুষ ভাঙনের হাত থেকে রক্ষায় দ্রুত কাঁচা, পাকা বাড়ি ঘরসহ প্রয়োজনীয় মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। যেকোনো সময় নদীর কাছাকাছি বাড়িগুলো ভাঙনের কবলে পড়তে পারে।
ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে নিজের পাকা বাড়ির ইট ও প্রয়োজনী মালামাল নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন প্রতাপ কুমার চক্রবতী নামে এক ব্যক্তি।
এসময় তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভাঙন থেকে বাঁচতে নদী থেকে অন্তত দেড় কিলোমিটার দূরে অনেক টাকা ব্যয়ে পাকা বাড়ি নির্মাণ করেছি। প্রবল স্রোতে নদী ভাঙনের ফলে মাত্র ১০ বছরেই নদী বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে। মনে দুঃখ ও হাজারও কষ্ট নিয়ে বাড়িটি ভাঙতে হচ্ছে। এতে অন্তত ইটগুলো পুনরায় ব্যবহার করতে পারব। ’
উত্তাল নদীর দিকে অপলক দৃষ্টি দিয়ে চেয়ে আছেন ভবেষ বিশ্বাস। কাছে যেতেই তিনি ভাঙা ভাঙা স্বরে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেছে । ঘর, আসবাবপত্র ও গবাদিপশু কিছুই সরাতে পারিনি। নদীর প্রবল স্রোতে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। কোনো রকমে পরিবারসহ নিজের জীবন রক্ষা করতে পেরেছি। ’
নদী ভাঙনে সর্বহারা প্রতাপ কুমার সরকার বাংলানিউজকে বলেন, নদী ভাঙনে এই এলাকার শত শত মানুষ ভূমিহীন হয়ে পড়েছে। সরকার ভাঙন রোধে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে ঠিকই কিন্তু সুষ্ঠু পরিকল্পনার ও অদক্ষতায় সব কার্যক্রম ভেস্তে যাচ্ছে। কার্যত কোনো প্রকল্পই কাজে আসছে না। কিছু আগেই পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে তিন কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিলেও প্রবল স্রোতে সেটিও এখন হুমকীর মুখে রয়েছে। দ্রুত এই এলাকার মানুষকে নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে দরকার স্থায়ী পদক্ষেপ। অন্যথায় এক সময় এই জনপদের সমস্ত এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
এছাড়াও সুন্দরগঞ্জের তিস্তা নদীসহ সাঘাটা এবং ফুলছড়ি উপজেলার যমুনা নদীতেও পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব এলাকার মানুষরাও ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন।
নদী ভাঙনের বিষয়ে কথা হয় পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবর রহমানের সঙ্গে।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘নদী ভাঙন ঠেকাতে গাইবান্ধা সদরসহ তিন উপজেলায় কয়েকটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। আমরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে প্রকল্পগুলো তদারকি করছি। জেলা সদরের কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট এলাকায় নদী ভাঙন রোধে তিন কোটি টাকার একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্র নদীর পানিবৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্পের বাইরের কিছু অংশ নদীতে চলে গেছে। আমরা সাময়িকভাবে ভাঙন ঠেকানোর জন্য বালির বস্তা ফেলে চেষ্টা করছি। তবে স্থায়ী পদক্ষেপের ব্যপারে এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না। আমরা ভাঙন কবলিত উপজেলাগুলোর জন্য আরও কয়েকটি প্রকল্পের আবেদন করেছি। প্রকল্পগুলো পাস হলেই কাজ শুরু করা হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৮
জিপি