ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সরকারকে জিম্মি করে ‘রিপ্লেসমেন্ট’ সুবিধা চায় হাব

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৮
সরকারকে জিম্মি করে ‘রিপ্লেসমেন্ট’ সুবিধা চায় হাব হজ এজেন্সির সঙ্গে বৈঠক করে মন্ত্রণালয়/ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ভুয়া নিবন্ধনের মাধ্যমে কোটা পূর্ণ করে এবার বেশি টাকায় সেই কোটার ‘রিপ্লেস’ আবদার করছে হজ এজেন্সি অব বাংলাদেশ (হাব)। ‘অনৈতিক’ এ দাবি পূরণে তারা সরাসরি সরকারকে জিম্মি করে বিমানের টিকিট করা থেকে বিরত থেকে সংশ্লিষ্টদের বিব্রত পরিস্থিতিতে ফেলেছে। 

এতে ভাবমূর্তি সংকটের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ বিমান এবং দেশ। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত ধর্ম মন্ত্রণালয়ও।

তবে হাব নেতারা বলছেন, তাদের দাবি মেনে নিলে শতভাগ হাজি কোটা যেমন পূর্ণ হবে, তেমনি রক্ষা হবে দেশের সম্মানও।
 
উদ্ভুত পরিস্থিতি ধর্মমন্ত্রণালয় দফায় দফায় বৈঠকে বসছেন হজ এজেন্সিগুলোর সঙ্গে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার বিকেলে এক দফা হজ এজেন্সির সঙ্গে বৈঠক করে মন্ত্রণালয়।  

মঙ্গলবার সকালে আরও এক দফা বৈঠক করে মন্ত্রণালয়। বিকেলেও বাকি হজ এজেন্সির সঙ্গে বৈঠকে বসছেন কর্মকর্তারা। তবে এজেন্সিগুলোর তেমন আগ্রহ নেই মন্ত্রণালয়ের এ বৈঠকে। মঙ্গলবার সকালের বৈঠকে ৫৬টি এজেন্সিকে ডাকা হলেও হাজির হয়েছে মাত্র ১৮টি এজেন্সি। তাও মালিকরা না এসে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পাঠিয়েছে নামমাত্র প্রতিনিধিদের।
 
দুই দফার বৈঠকে প্রতিটি এজেন্সির হাজি নিবন্ধন, মক্কা ও মদিনায় বাড়ি ভাড়া, ক্যাটারিং বুকিং ও বিমান টিকিটের বিষয়ে আলাদা আলাদা ভাবে হিসাব নেন মন্ত্রণালয়ের সচিব আনিছুর রহমান। এ সময় দেখা যায়, অধিকাংশ এজেন্সিই তাদের নিবন্ধিত হজযাত্রিদের জন্য বাড়ি ভাড়া, ক্যাটারিং বুকিং ও বিমান টিকিট করেনি। এক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ নিবন্ধিত হাজি মারা গেছেন অথবা হজে যাওয়ার আর্থিক স্বচ্ছলতা হারিয়েছেন বলে দাবি করেছে হাব।
 
হাব সভাপতি আব্দুস সোবহান বাংলানিউজের এক প্রশ্নের জাবাবে বলেন, বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়া শতকরা ৭০ ভাগ হাজির বয়সই ৮০ বছরের বেশি। দুই বছর আগে নিবন্ধিত এসব হাজিদের অনেকেই এরইমধ্যে মারা গেছেন। যে পরিবার থেকে একাধিক ব্যক্তির হজে যাওয়ার কথা ছিলো, একজন মারা যাওয়ায় তাদের সবার হজে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অনেকে আবার দুই বছরের মধ্যে নানা কারণে হজে যাওয়ার আর্থিক সক্ষমতা হারিয়ে দরিদ্র হয়ে পড়েছেন। এক্ষেত্রে সরকারের সহায়তা দরকার।  
 
তিনি বলেন, সরকার আমাদের দাবি মেনে নিয়ে রিপ্লেসমেন্ট সুবিধা দিলে, সহায়তা করলে দুই/এক দিনের মধ্যেই সংকট সামধান হবে। শতভাগ বিমান টিকিটই সংগ্রহ করা হবে।
 
জবাবে ধর্ম সচিব আনিছুর রহমান বলেন, হাবকে বিপদে ফেলা মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্য নয়। তাদের সহযোগিতা করা মানে হলো হাজিদের সহযোগিতা করা। আমি শুধু বলতে চাই, সবাইকে নীতিমালা মোতাবেক চলতে হবে। সৌদি আরব সরকার অনেক আগেই জানিয়েছে, এবার অতিরিক্ত ফ্লাইট স্লট পাওয়া যাবেনা। ১৫ আগস্ট বিমান এবং ১৭ আগস্ট সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের হজ ফ্লাইট শেষ হবে। ২৭ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত বিমানের টিকিট এখনো পর্যাপ্ত আছে। এসময়ের মধ্যে যদি টিকিট না করেন, তাহলে আপনাদের হাজিরা হজে যেতে পারবেন না। এতে আপনারা ভয়াবহ সংকটে পড়বেন। তাই দ্রুত বাড়িভাড়া, ক্যাটারিং ও বিমান টিকিট কেটে ভিসা নিশ্চিত করুন।
 
এসময় সচিব বলেন, রিপ্লেসমেন্ট বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। তবে আমি আশাবাদী, সবাই হজে যাবেন এবং সব শঙ্কা কেটে যাবে।
 
এদিকে এ বিষয়ে সোমবার বিকেলে মন্ত্রণালয়ে হাব নেতাদের সঙ্গে করা বৈঠকে নিবন্ধিত সব হজযাত্রীর বিমানের টিকিট বিক্রি হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে সচিব বলেন, অস্তিত্বহীন নিবন্ধনের বিপরীতে হজ এজেন্সি মালিকরা এখন হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্ট (প্রতিস্থাপন) চাচ্ছেন।
 
সোমবারের বৈঠকে সচিবালয়ে নিবন্ধিত হজযাত্রীর বিমান টিকিট নিশ্চিতে পে-অর্ডার ইস্যু না করা ৫৬টি এজেন্সিকে ডাকা হলেও বৈঠকে ৪৩টি এজেন্সি হাজির ছিলো।
 
ওই বৈঠকে ধর্ম সচিব বলেন, প্রক্রিয়াগত কিছু কারণে অনেক হজ এজেন্সির টিকিট কাটা বাকি আছে। কারো টিকিট নিশ্চিত হওয়া এক ক্লিকের বিষয়। এটা হয়ে গেলে অনেককেই আজ ডাকা লাগতো না।
 
হজ এজিন্সগুলোর উদ্দেশ্যে সচিব বলেন, আপনারা ইতোমধ্যে জেনেছেন এবার সৌদি আরব কোনো অতিরিক্ত স্লট দেবে না। আমরা দেখেছি প্রথম ও শেষের দিকে টিকিটের বেশি চাহিদা থাকে। মাঝখানের সময়ের টিকিটগুলো নিয়ে আমাদের সমস্যা হয়। কেউ বড়ি ভাড়া না হওয়ায় টিকিট নেন না। আমরা বলি আগে টিকিট নেন, তারপর বাড়ি ভাড়া করেন। এখনও বাড়ি সহজে পাওয়া যাচ্ছে।
 
তিনি বলেন, মাথায় রাখতে হতে ১০ হাজার হজযাত্রী টিকিট না নিলে মাথায় রাখতে হবে ১০ হাজার হজে যেতে পারছেন না। আমরা অতিরিক্ত স্লট পাব না, এ চিন্তা মাথায় রেখেই আমাদের এগোতে হবে।
 
এজেন্সিগুলোর পক্ষ থেকে সভায় টিকিট না কাটা হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্ট দাবি করা হয়। হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর মহাসচিব এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, হজযাত্রীর সংখ্যা অনুযায়ী মোয়াল্লেম ফি, বাড়ি ভাড়া করতে হয়। এগুলোসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় ইতোমধ্যে সৌদি সরকারকে পরিশোধ করা হয়েছে।  

অনেক এজেন্সি বলেছে, রিপ্লেসমেন্ট যদি দেন যাবে, না দিলে যাবে না। কেউ বলেনি দিতে হবে। এখন থেকেও তো বুঝা যায় ওইগুলো ড্রপ (হজে যাবেন না) করবে। ড্রপ করলে দেখা যাবে ৭ থেকে ১০ হাজার যাবেন না। আশা করি যৌক্তিক বিষয় নির্ধারণ করে এজেন্সিগুলোকে রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ দেয়া উচিত।
 
এ বিষয়ে সচিব বলেন, হজ নীতিমালা অনুযায়ী এজেন্সিগুলো ইতোমধ্যে মোট হজযাত্রীর ৪ শতাংশ রিপ্লেসমেন্ট করে ফেলেছেন। কেউ মারা গেলে বা গুরুতর অসুস্থ হলে কেবল মাত্র রিপ্লেসমেন্ট করা হয়। আপাতত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেই। পরে অবস্থা বুঝে এ বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। তবে এ বিষয়ে কিছু করতে (হজ নীতিমালা পরিবর্তন করে ফের রিপ্লেসের সুযোগ দেয়া) হলে সর্বোচ্চ পর্যায়ের (প্রধানমন্ত্রী) সিদ্ধান্ত প্রয়োজন হবে। আমি ও আমার মন্ত্রী এ কাজ করতে পারবো না।
 
রিপ্লেসমেন্ট নিয়ে এজেন্সিগুলোর কিছু চালাকি রয়েছে জানিয়ে আনিছুর রহমান বলেন, বড় একটা শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। ওনারাও জানেন কী পরিস্থিতিতে কোনো নাম্বারগুলো দিয়েছেন, সেখানেই কিন্তু রিপ্লেসমেন্ট করতে চাচ্ছে। যে পাসপোর্ট নম্বর, জন্ম নিবন্ধনের অস্থিত্ব নেই, সেই অস্তিত্ববিহীন রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। সেই রেজিস্ট্রেশনের বিপরীতে এখন রিপ্লেসমেন্ট চাচ্ছেন। এর দায় কে নেবে?
 
সচিব বলেন, আমি এখনও মনে করি সব টিকেট বিক্রি হবে। পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে পরবর্তী পদক্ষেপ আমরা নেব, আমি এখনওই কিছু বলছি না।
 
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ২১ আগস্ট (৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে।
 
সৌদি আরবের সঙ্গে হজচুক্তি অনুযায়ী, চলতি বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৯৮ জন হজে যাবেন। চলতি বছর হজে যাওয়ার ফ্লাইট ১৪ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৮
আরএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।