ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আর কত যুদ্ধ করমু, সব তো গিইল্লা খাইছে ব্রহ্মপুত্র

ফজলে ইলাহী স্বপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৮
আর কত যুদ্ধ করমু, সব তো গিইল্লা খাইছে ব্রহ্মপুত্র ভাঙন কবলিত এলাকা

কুড়িগ্রাম: সহায় সম্বল সব তো গিইল্লা খাইছে ব্রহ্মপুত্র। বাড়ি-ঘর টানতে টানতে আমরা ক্লান্ত ও সর্বশান্ত হইয়া গেছি। প্রত্যেক বছর আর কত যুদ্ধ করমু এই ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে। আমগোর জীবন তো শ্যাষ, ছওয়াল পওয়াল লইয়া অহন কই যামু।

রোববার (১৫ জুলাই) বাংলানিউজকে কথাগুলো বলছিলেন রৌমারী উপজেলার ভাঙন কবলিত বন্দবের ইউনিয়নের বাগুয়ারচর গ্রামের নিশান আলী (৬৫), ঈমান আলী (৫০), নজরুল ইসলাম (৪৫)।

বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই পানি বাড়তে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র নদের করাল গ্রাসে ভাঙনের কবলে মানচিত্র বদলে যেতে বসেছে রৌমারী উপজেলার।

তীব্র ভাঙনের মুখে আতঙ্কে রয়েছে রৌমারী উপজেলার বন্দবের, চরশৌলমারী ও যাদুরচর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী গ্রামগুলোর মানুষ।

প্রলয়ঙ্করী ভাঙন দেখা দিয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বপাড় বামতীরের অন্তত ১৫টি গ্রামে। ভাঙন আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গ্রামগুলোর মানুষজন। নদের গর্ভে বিলীন হতে চলেছে তীরবতী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, কাঁচা-পাকা রাস্তা, ব্রিজ-কালভার্ট, ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি, গাছপালা।

ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন কবলিত গ্রামগুলো হলো- চরইটালুকান্দা, সাহেবের আলগা, চর গেন্দার আগলা, চরঘুঘুমারী, ঘুঘুমারী, পূর্ব খেদাইমারী, উত্তর খেদাইমারী, পশ্চিম পাখিউড়া, দক্ষিণ পাখিউড়া, পাখিউড়া, বাগুয়ারচর, বাইসপাড়া, দক্ষিণ বলদমারা পূর্বপাড়া, ধনারচর নতুন গ্রাম, দিগলাপাড়া।

বন্দবের ইউনিয়নের বাগুয়ারচর গ্রামের শিক্ষক আব্দুল মালেক বাংলানিউজকে বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভাঙন শুরু হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ দিয়ে কাজ করার বরাদ্দ দেয়। নদীর ভাঙন রোধে কোনো কাজ হয় না। ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হলেও সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকরি স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ কারণে প্রতিবছর নদী ভাঙনে আমাদের আতঙ্কে থাকতে হয়।  

রৌমারী নদী ভাঙন প্রতিরোধ আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু হানিফ মাস্টার বাংলানিউজকে বলেন, উদবাস্ত পরিবারের পুনর্বাসন ও নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে রৌমারী ও রাজিবপুর নামের দু’টি উপজেলা বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রৌমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী বাংলানিউজকে বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে নদী ড্রেজিংসহ পূর্ব পাড় (বামতীর) সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে অদূর ভবিষৎতে রৌমারী উপজেলা পরিষদ ভবনসহ সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, উজানের ঢলে নদ-নদীর পানি একযোগে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমরা অস্থায়ীভাবে কিছু কিছু জায়গায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছি। ব্রহ্মপত্র নদের ড্রেজিং ও পূর্ব পাড় (বামতীর) স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য ডিপিপি প্রণয়ন করে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন ও বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৮
এফইএস/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad