ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পদ্মার ভাঙনে হুমকির মুখে নড়িয়া উপজেলা শহর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫২ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৮
পদ্মার ভাঙনে হুমকির মুখে নড়িয়া উপজেলা শহর নড়িয়ার ভাঙন কবলিত এলাকা। ছবি: বাংলানিউজ

শরীয়তপুর: পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা শহর। ইতোমধ্যে নড়িয়া পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের শুভগ্রাম ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁশতলা বিলীন হয়ে দ্রুত উপজেলা সদরের দিকে ধেয়ে আসছে পদ্মা। আর মাত্র ৫শ’  মিটার ভাঙলেই বিলীন হয়ে যাবে প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী নড়িয়া উপজেলা শহর।  নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মাত্র ৮০ মিটার দূরত্বে রয়েছে পদ্মা। 

ভাঙনের মুখে রয়েছে নড়িয়া পৌর বাজার, নড়িয়া পৌর ভবন, উপজেলা পরিষদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নড়িয়া সরকারি খাদ্য গুদাম, নড়িয়া সরকারি কলেজ, নড়িয়া বিএল উচ্চ বিদ্যালয়, নড়িয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ পুরনো ঐতিহ্যবাহী অনেক স্থাপনা ও নিদর্শন।  

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জাজিরা উপজেলার বড়কান্দী থেকে নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পদ্মার ভাঙন কবলিত।

গত বর্ষা মৌসুমে এখানে দুই কিলোমিটার ভাঙনের শিকার হয়েছিলো। এতে গৃহহীন হয়ে পড়ে প্রায় ৫ হাজার পরিবার।  

গত বছর ভাঙন কবলিত অসহায় মানুষের দাবির মুখে জাজিরা এবং নড়িয়ায় পদ্মার ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকা একেনেকে অনুমোদন হয়। পরবর্তী বর্ষা আসার আগেই বাঁধ নির্মাণের কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে এখনও বাঁধ নির্মাণ শুরু করতে পারেনি।

চলতি বর্ষা মৌসুম শুরুর পর থেকেই নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার ওই এলাকায় প্রতিবছরের মতো এবারও পদ্মার ভাঙন শুরু হয়েছে। এ বছর এ পর্যন্ত ১শ’ মিটার পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে প্রায় ৫শ’ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে।  

নড়িয়া শহরকে পদ্মার ভাঙনের হাত থেকে বাচাঁতে সম্প্রতি জরুরি ভিত্তিতে ৩শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নড়িয়া উপজেলার শুভগ্রাম, বাঁশতলা, চর জাজিরা, শেহের আলী মাদবরকান্দি, মূলপাড়া, ঈশ্বরকাঠি, খালাসিকান্দি, চেরাগআলী বেপারীকান্দি, জাজিরা উপজেলার পাচুখার খান্দি, মোল্যাকান্দি, কাজিয়ার চর এলাকা ব্যাপক নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে।  

নড়িয়ার ভাঙন কবলিত এলাকা।  ছবি: বাংলানিউজভাঙন কবলিত মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। কারো কারো বসতভিটা চোখের সামনে পদ্মায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দূর দূরান্ত থেকে উৎসুক মানুষ এসে দেখছে পদ্মার তীব্র ভাঙন। চোখের সামনে বিলীন হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড গত ৫ দিন ধরে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পদ্মার ভাঙন কবলিত নড়িয়া এলাকায়।  

আলী খালাসী বলেন, দেখতেইতো পাচ্ছেন চোখের সামনে সবকিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখন বলার আর কি আছে। পদ্মার ভাঙন থেকে নড়িয়াকে বাচাঁতে বাঁধ নির্মাণের জন্য গত বছর একনেকে ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিলো। এ বছর বর্ষা শুরুর আগে বাঁধ নির্মাণের কথা থাকলেও কি কারণে কাজ শুরু করা হয়নি তা বলতে পারবো না।  

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, পদ্মার পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোতের কারণে নড়িয়া ও জাজিরায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে অনেক ঘরবাড়ি ও স্থাপনা পদ্মায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মাত্র ৮০ মিটার দূরে আছে পদ্মা। জরুরি ভিত্তিতে আমরা তিন কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। ৫ দিন ধরে নড়িয়ার ভাঙন কবলিত এলাকায় বালু ভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এতে আশা করা যায় কিছুটা হলেও ভাঙন ঠেকানো যাবে।  

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, পদ্মার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। উপজেলা শহরের খুব কাছে চলে এসেছে পদ্মা। ভাঙন অব্যাহত থাকলে উপজেলা শহর বিলীন হতে বেশিদিন লাগবে না। ভাঙন কবলিতদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব সহযোগিতা করা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ