ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ট্রাফিক বিভাগে চলছে বিশৃঙ্খলা। অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
রোববার (১৫ জুলাই) বেলা ১১টায় গল্লামারী ট্রাফিক মোড়ে যানজটে আটকে পড়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ইংরেজি ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক মো. সামিউল হক বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা এখন যানজটের শহর। ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এমনটি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যানজটের কারণে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও অফিসে কর্মজীবী মানুষের সময়মতো পৌঁছানো এখন দায়। অন্তত দুই ঘণ্টা হাতে নিয়েই নির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশে বের হতে হচ্ছে নগরীর বেশিরভাগ মানুষকে।
মহানগরীর শিববাড়ির মোড় এলাকায় ভুক্তভোগী মিরাজ হোসেন বলেন, রাস্তায় এতো যানবাহন থাকলেও পুলিশের চোখ শুধু মোটরসাইকেলের উপর। বৈধ কাগজপত্র থাকলেও ট্রাফিক পুলিশ চেকআপের নামে অর্থ দাবি করে। সময় নষ্ট করে।
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, এখন মনে হয় মোটরসাইকেলের মালিক মানে পাপিষ্ঠ ব্যক্তি। রাস্তায় নামলেই অপদস্তের শিকার হতে হয়। যা দেখার কেউ নেই।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব বাংলানিউজকে বলেন, ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে অবহেলা ও খেয়ালিপনার কারণে শহরজুড়ে প্রচণ্ড যানজটে জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্বিষহ যন্ত্রণা। প্রচণ্ড গরম আর যানজটে জনসাধারণের দুর্ভোগের শেষ নেই।
ট্রাফিক পুলিশ সুষ্ঠু দায়িত্ব পালন করছে না বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, যানজট শহরে প্রভাব ফেললেও নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের কোনো মাথাব্যথা নেই। বরং ট্রাফিক পুলিশের চোখ শুধু মোটরসাইকেলের দিকে। মোটরসাইকেলে জরিমানার নামে শুধু হয়রানি করে মানুষের কাছ থেকে অবৈধ টাকা আদায় করে।
সরেজমিনে নগরীর গল্লামারী, সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, শিববাড়ি মোড়, শান্তিধামের মোড়, পাওয়ার হাউজ মোড়, পিকচার প্যালেস, সাত রাস্তার মোড়, পিটিআই মোড়, সদর থানার মোড়, রেলস্টেশন রোড ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার ওপর যেখানে-সেখানে যানবাহন রাখা। এছাড়া যাত্রীবাহী ইজিবাইক ও মাহেন্দ্র থেকে যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠানামা করছে ট্রাফিক পুলিশের সামনেই। কিন্তু কোনো প্রতিকারই যেন নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীর অলিগলি, সড়ক-মহাসড়ক এখন ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও মাহেন্দ্রসহ প্রায় অর্ধ লাখ অবৈধ যানবাহনের দখলে। এসব যানবাহনের বেপরোয়া চলাচলের কারণে শহরজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সেইসঙ্গে অহরহ ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে নগরবাসী।
সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে মহানগরীর যানজট সমস্যার সমাধান ও যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে তৎকালীন মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ১ হাজার ৯৬৩টি ইজিবাইকের লাইসেন্স প্রদান করেন।
অভিযোগ রয়েছে, সময়ের ব্যবধানে নগরীতে ইজিবাইক ও ইঞ্জিনচালিত রিকশার সংখ্যা বেড়ে এখন প্রায় চল্লিশ হাজার। প্রতিদিন এসব অবৈধ যানবাহন কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বেপরোয়া গতিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নগরজুড়ে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও কয়েক হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা ও মাহেন্দ্র। এসব যানবাহনের নেই বৈধ কাগজপত্র। চালকদেরও কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। ফলে অদক্ষ চালক ও বেপরোয়া চলাচলের কারণেই প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন সাধারণ জনগণ। অনেকে আবার আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন, কেউ বা মারাও যাচ্ছেন।
ভেঙে পড়া ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রসঙ্গে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) সাইফুজ্জামানের সঙ্গে কথা বললে তিনি অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
এমনকি নগরীতে বর্তমানে কত ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন এমন প্রশ্ন করলেও ট্রাফিক বিভাগের প্রধান বলেন, এটা আমার দায়িত্ব নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৮
এমআরএম/আরআর