এতে হুমকির মুখে রয়েছে উপজেলাটি। ফলে যে কোনো মুহূর্তে ভয়াবহ ভূমিধসের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা।
বাংলাদেশের সর্বউত্তরে ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় আবারো শুরু হয়েছে পরিবেশ বিধ্বংসী ড্রেজার বা বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন।
হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও সরকারের কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এসব ভূমি ও পাথর ব্যবসায়ী, মেশিন মালিক অবৈধ ড্রিল ড্রেজার (বোমা) মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের নামে পরিবেশ ধংস করে রীতিমতো হরিলুট চালাচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ড্রেজার বা বোমা মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর, দেপনগড় ইউনিয়নে। পাশাপাশি মেশিনে পাথর উত্তোলন হচ্ছে বুড়াবুড়ী ও শালবাহান হাট ইউনিয়নের ডহুক নদীতে। সমতল ভূমি, নদী, খাল, সরকারি খাস জমি এমনকি নদীর গ্রাম রক্ষা বাঁধ ভেঙে ড্রেজার বা বোমা মেশিন দিয়ে সমতলের ১শ’ থেকে ২শ’ ফুট গভীর থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে পাথর। এতে সমতল ভূমিসহ নদীগর্ভের বিস্তীর্ণ এলাকায় সৃষ্টি হচ্ছে বিশাল শূন্যতার।
দিনে রাতে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকায় মাত্রাতিরিক্ত হারে ড্রেজার (বোমা) মেশিনের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। পাথর খেকোদের তাণ্ডবের ফলে যেমন নষ্ট হচ্ছে সৌন্দর্য কন্যা তেঁতুলিয়ার পরিবেশ তেমনি সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। পাশাপাশি ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে এসব এলাকা। ভজনপুর, দেপনগড় ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে শতাধিক স্থানে কয়েকশ’ অবৈধ ড্রিল ড্রেজার (বোমা) মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। জানা যায়, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এসব পাথর উত্তোলন করছে তারা। ফলে সারারাত শতাধিক ড্রেজার মেশিনের শব্দে লোকজনের ঘুম হারাম হলেও তেঁতুলিয়া থানা পুলিশ সেসব স্থানসহ নদীতে গিয়ে কাউকেই পায় না।
স্থানীয়দের ধারণা, পুলিশ প্রশাসনের কেউ কেউ ড্রেজার বা বোমা মেশিন চালাতে তাদের সহযোগিতা করছে। এভাবে দিনের পর দিন ড্রেজার বা বোমা মেশিন চলায় পঞ্চগড়ের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য চরম হুমকির মুখে পড়েছে।
নিষিদ্ধ ড্রেজার মেশিনে পাথর উত্তোলনের ফলে ভূ-গর্ভস্থ ফাটলের আশঙ্কায় পঞ্চগড়ের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে ওই অঞ্চলের খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ এর আগে ড্রেজার মেশিনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, হরতাল অবরোধের মত কর্মসূচি দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুললেও মানুষ নিহতের মত ঘটনা ঘটার পরও কোনো প্রতিকার হয়নি।
অন্যদিকে, পুলিশ অধিকাংশ সময় ড্রেজার বা বোমা মেশিনের মূল মালিকদের গ্রেফতার বা তাদের বিরুদ্ধে মামলা না করে ড্রেজার বা বোমা মেশিনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী মানুষের নামে মিথ্যে মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করেছে বলেও জানা যায়।
কেন এ প্রক্রিয়া বন্ধ হচ্ছে না? প্রশ্ন সচেতন মহলের। সেই সঙ্গে ভূ-প্রকৃতির বিশাল পরিবর্তনসহ জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধনকারী এই অবৈধ ড্রেজার বা বোমা মেশিন মালিক চক্রকে খুঁজে বের করে কঠিন শাস্তির আওতায় নিতে প্রসাশনসহ ক্ষমতাসীন সরকার আন্তরিক হবে এই প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহুরুল ইসলাম বাংলানিউকে বলেন, প্রশাসন ড্রেজার বা বোমা মেশিনের মালিকদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেয় না। বোমা মেশিনের খবর শোনামাত্রই দ্রুত আমরা ঘটনাস্থলে যাই। আমার জানা মতে, এখন ওই প্রক্রিয়ায় পাথর তোলা বন্ধ প্রায়। তারপরও যেখানে রয়েছে সেসব জায়গায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৮
আরএ