ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ভ্রাতৃত্বের এই বন্ধন সময়ের পরীক্ষায় অটুট থাকবে 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৮
ভ্রাতৃত্বের এই বন্ধন সময়ের পরীক্ষায় অটুট থাকবে  সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং

রাজশাহী: বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আমাদের বর্তমান অবস্থাকে ‘ইতিহাসের সোনালি অধ্যায়’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আমাদের দু’দেশের এই ভ্রাতৃত্বের বন্ধন চিরন্তন। সময়ের পরীক্ষায়ও যা অটুট থাকবে।

রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী ভবন এবং আইটি সেন্টারের উদ্বোধনকালে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং একথা বলেন। শনিবার (১৪ জুলাই) দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংকে সঙ্গে নিয়ে একাডেমি প্রাঙ্গণে নতুন এই ভবনের উদ্বোধন করেন।

মৈত্রী ভবন উদ্বোধনের পর দুই দেশের পুলিশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এতে সই করেন বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল অতিরিক্ত আইজিপি নাজিবুর রহমান ও ভারত হায়দারাবাদের সরদার বল্লবভাই প্যাটেল ন্যাশনাল পুলিশ একাডেমির পরিচালক ডি রা ডলী বর্মণ।  

অনুষ্ঠানে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ অভিন্ন ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতি, পরিবার ও আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ। এটি অবশ্যই একটি বিশেষ সম্পর্ক বহন করে। উভয় দেশ একটি সমন্বিত বাহিনী হিসেবে স্বাধীনতা যুদ্ধে লড়াই করেছে। আমাদের সৈনিকরা স্বাধীনতার জন্য একসঙ্গে রক্ত বিসর্জন দিয়েছে। যা ইতিহাসে পারস্পরিক আস্থার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।  

দুই দেশের পুলিশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক সই হয়ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, ভারত-বাংলাদেশ অস্থিতিশীলতা ও সন্ত্রাসী শক্তির মোকাবিলায় সব সময়ই হাতে হাত মিলিয়ে চলছে। আমাদের অংশীদারিত্ব জনগণের সমৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের মৌলবাদ এবং চরমপন্থার হাত থেকে রক্ষা করার জন্যও কাজ করছে। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার এবং তার সরকারের শূন্য সহনশীলতা নীতির প্রশংসা করে ভারত। ঘৃণা, সহিংসতা ও সন্ত্রাসের মতাদর্শ থেকে জনগণ ও সমাজকে রক্ষার অভিন্ন অঙ্গীকার থেকে আমাদের এই সহযোগিতার উৎপত্তি। আমরা এই যুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে আছি।  

তিনি বলেন, আমি খুশি যে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে আমাদের সহযোগিতা কর্মসূচি ভালোভাবে এগোচ্ছে। গত কয়েক বছরে আমার বাংলাদেশে ৬৮১ পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। ২০১৮-২০১৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য গান্ধীনগরের গুজরাট ফরেনসিক সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটি, গাজিয়বাদের সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন এবং মেঘালয়ের নর্থ ইস্টার্ন পুলিশ একাডেমিতে নানা বিশেষায়িত পাঠ্যক্রমের ৩শ’ স্লটের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ যদি চায়, আমরা এখানেও তা করতে পারলে খুশি হবো।

বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী ভবন উদ্বোধন করতে পারা খুবই আনন্দের বিষয় জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৫ সালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। আজ তা বাস্তবে রূপ নিলো। আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে আরও উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান করা। আরও পেশাদার বাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাই এ ভবনে অত্যাধুনিক ফরেনসিক ল্যাবরেটরি, ছদ্ম থানা, কম্পিউটার ল্যাবসহ আইটি সেন্টার সন্নিবেশিত করা হয়েছে।

এ সময় সারদায় থাকা বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির ভূয়সী প্রশংসা করে রাজনাথ সিং বলেন, আমি যদি এই প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশের অবদানের কথা না উল্লেখ করি তাহলে অন্যায় হবে। শত বছর আগে সারদায় প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি শুধু ইতিহাসের সাক্ষী নয় ইতিহাস সৃষ্টিতেও অবদান রেখেছে। এই গৌরবোজ্জ্বল প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পুলিশের সেরা কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। যারা একটি নিরাপদ, শান্তিময় ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে উজ্জ্বল অবদান রেখে চলেছে। তাই আমি বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির গৌরবোজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।  
 
এর আগে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ নাজিবুর রহমান এনডিসি।

এসময় অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি, রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ ছাড়াও, ভারতের হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী, রাজশাহীর অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আমিনুল ইসলাম, রাজশাহী জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের, রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার, রাজশাহী পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহসহ পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ভারতীয় হাই কমিশনের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।  

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সরকারের আগ্রহে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ অর্থায়নে এই মৈত্রী ভবন নির্মিত হয়। বর্তমানে অত্যাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ২৮ হাজার বর্গফুটের এই ভবনটির নির্মাণ কাজের ৫৫ শতাংশ (দ্বিতল ভবন) শেষ হয়েছে।

বাংলদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৮
এসএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।