ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পরিচ্ছন্ন হচ্ছে ঢাকার দুই পার্ক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৮
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পরিচ্ছন্ন হচ্ছে ঢাকার দুই পার্ক পরিষ্কার করা হচ্ছে আনোয়ারা পার্ক

ঢাকা: রাজধানী ঢাকাতে এমনিতেই খোলা জায়গার অভাব। যাও কয়েকটি পার্ক রয়েছে সেগুলোতে দখলদারদের রাজত্ব। বলতে গেলে রাজধানীবাসীর ইট-কাঠের বাইরে চলাচলই বন্ধ। তাই পার্কগুলো দখলমুক্ত করে চলাচল উপযোগী করতে নগরবাসী বিভিন্ন ফোরামে দাবি তুলে আসছিলেন।

কিন্তু কে শোনে কার কথা। যাদের দেখার কথা সেই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন দীর্ঘদিন ধরে শুধু মেগা প্রকল্পের গল্প শুনিয়ে আসছে।

আসলে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছিল না। তাই এবার সরাসরি সরকার প্রধানের দৃষ্টি পড়লো রাজধানীর বাংলামোটরের পান্থকুঞ্জ ও ফার্মগেটের আনোয়ারা পার্কের দিকে।

গত বৃহস্পতিবার (১২ জুলাই) দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে ডেকে বসেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তাদের জানিয়ে দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে জনদুর্ভোগ লাঘব এবং পরিচ্ছন্ন নগরী করতে আরও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য জনগণের দৃষ্টির ভেতর থাকা পান্থকুঞ্জ এবং আনোয়ারা পার্ককে পরিচ্ছন্ন করে চলাচল উপযোগী করতে হবে।

এতদিন মেগা প্রকল্পের কথা বলে পান্থকুঞ্জ পার্কে কোনো কাজই করেনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। শুক্রবার (১৩ জুলাই) ঠিকই লোক লাগিয়ে মুহূর্তের মধ্যে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করে দেয় তারা। সেই কাজ শনিবারও (১৪ জুলাই) চলে। এখন পান্থকুঞ্জ চকচকে, ঝকঝকে। ময়লার দুর্গন্ধে যে পার্কে মানুষ ঢুকতে পারতো না, সেখানে এখন বসে গল্প-আড্ডায় মেতে উঠেছে অনেকে। শনিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে পান্থকুঞ্জ পার্কের ময়লা-আবর্জনা দূরে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আর পার্কের ভেতর যেসব বসার বেঞ্চ ছিল সেগুলো পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে।

পান্থকুঞ্জ পার্ক পরিষ্কার করা হয়েছে
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে শনিবার ফার্মগেট আনোয়ারা পার্ক পরিচ্ছন্নতায় নামে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেসবাহুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক কমডোর আব্দুর রাজ্জাক, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (অঞ্চল-৫) এসএম অজিয়র রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলামসহ অন্য কর্মকর্তারা আনোয়ারা পার্ক পরিদর্শন করেন। সেখানে মেট্রোরেল প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ডেকে পার্কের ব্যবহার নিয়ে কথা বলেন তারা।

কেননা এই পার্কটি আগামী ১ অক্টোবর থেকে মেট্রোরেল বাস্তবায়ন সংস্থার অধীনে চলে যাচ্ছে। এখানে মেট্রোরেল প্রকল্পের যন্ত্রাংশ ও অন্য উপাদান রাখার জন্য অস্থায়ী অফিস করা হবে। ডিএনসিসি’র ধারণা ছিল হয়তো কিছু অংশ তারা ব্যবহার করবে বাকি অংশ জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। কিন্তু মেট্রোরেল প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন প্রায় পুরো পার্কটিই তাদের লাগবে। অর্থাৎ এই প্রকল্প বাস্তবায়নকালে এই পার্ক তাদের অধীনেই চলে যাবে।
 
তারপরেও ডিএনসিসি’র পক্ষ থেকে আনোয়ারা পার্কের ময়লার ভাগাড় তুলে ফেলা হয়। পুরো পার্কের ভেতর যেখানে ময়লার স্তুপ ছিল সেগুলো পরিষ্কারে কাজ শুরু হয়েছে।

এবিষয়ে ডিএনসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেসবাহুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এই পার্কটি আজই পরিষ্কার করছি বিষয়টি তা না। আমরা আগেও কয়েকবার পরিষ্কার করেছি, আবার ময়লা আবর্জনায় ভরে গেছে। আমাদের বলা হয়েছে পার্কটি পরিচ্ছন্ন করে দেওয়ার জন্য। আমরা সেটা করে দিচ্ছি। প্রয়োজন হলে আবার করে দেবো।

পান্থকুঞ্জ পার্কে গল্পে মেতে উঠেছেন অনেকে
আনোয়ারা পার্ক এক সময় দেওয়ানবাগ শরীফের ওরশ এর জন্য ব্যবহার হতো। পার্কের ভেতর যে দুই এক জায়গায় বসার ব্যবস্থা ছিল সেগুলো অনেক আগেই অস্তিত্বহীন হয়েছে। আবার পার্কের চারপাশে বেষ্টনীর লোহার রডগুলোও নেশাখোরদের পেটে ঢুকেছে। এখন পার্কের চারদিকে বেষ্টনীর নানা জায়গায় ভাঙা। যে কারণে ফার্মগেট এলাকার বাসাবাড়ির বর্জ্য এখন সরাসরি এখানেই ফেলা হচ্ছে। পার্কের ভেতর টিনের ঘর করে ছিন্নমূল মানুষও বসবাস করছে।
 
ডিএনসিসি’র অঞ্চল-৫ এর অধীনে পড়ায় এটি দেখভালের দায়িত্ব পড়েছে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম অজিয়র রহমানের ওপর। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ আছে জনদুর্ভোগ দূর করার জন্য আমাদের আরও ‘অ্যাকটিভ’ হওয়ার। তারই অংশ হিসেবে আমরা আনোয়ারা পার্ক পরিষ্কার করে দিচ্ছি। যেহেতু এই পার্কের অধিকাংশ জায়গা মেট্রোরেলের যন্ত্রাংশ রাখতে ব্যবহার করা হবে। তাই আমরা চেষ্টা করছি যত কম ব্যবহার করে মানুষের জন্য উন্মুক্ত রাখতে।
 
তিনি বলেন, এছাড়া যারা এখানে আবর্জনা ফেলে তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। আমরা এখানে হকার, ছিন্নমূলদের উচ্ছেদ করে ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের মাধ্যমে সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কাজ করবো। পার্কটির সার্বিক উন্নয়ন কাজের জন্য আমরা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে প্রস্তুত আছি। তবে মেট্রোরেলের কাজের জন্য কিছু মালামাল এখানে রাখা হচ্ছে। এটা ফাঁকা না হওয়া পর্যন্ত আমরা পার্কটির উন্নয়ন কাজে হাত দিতে পারছি না।  
  
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৮
এসএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।