ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিদেশে পরিকল্পনা, বেতনভুক্ত কিলার দিয়ে ফরহাদকে হত্যা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৮
বিদেশে পরিকল্পনা, বেতনভুক্ত কিলার দিয়ে ফরহাদকে হত্যা পুলিশ হেফাজতে ফরহাদ আলী হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: রাজধানীর একসময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদী ও আশিক। বর্তমানে তারা দুজন বিদেশে পলাতক থেকেই দেশে বেতনভুক্ত একটি কিলার বাহিনী টিকিয়ে রেখেছেন। বিদেশে বসেই সেসব কিলারদের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন বহাল তবিয়তে।

মেহেদী আমেরিকায় এবং আশিক ভারতে পলাতক রয়েছেন। আশিক আগে একটি রাজনৈতিক দলের ক্যাডার বাহিনীর শীর্ষ নেতা ছিলেন।

আশিক ও মেহেদীর ম্যানেজার তথা সামরিক কমান্ডার হিসেবে দেশে কাজ করতেন অমিত। অমিতের অধীনে বেশ কয়েকজন বেতনভুক্ত কিলার রয়েছে। যাদের প্রতি মাসে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হতো। এছাড়া এ গ্রুপের শীর্ষ কয়েকজন ফ্রান্স ও সুইডেনে পলাতক রয়েছে।

শনিবার (১৪ জুলাই) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন।

তিনি বলেন, বাড্ডার পূর্বাঞ্চল ১ নম্বর লেনের বায়তুস সালাম জামে মসজিদের পাশে বাড্ডা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়।  হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে রমজান তার আপন ছোট ভাই সুজন এবং অপর দুই সহযোগী জাকির ও আরিফের ওপর ফরহাদ আলীকে হত্যার দায়িত্ব দিয়ে ভারতে চলে যান। পরে মেহেদী ও আশিকের সামরিক কমান্ডার অমিত বেতনভুক্ত শ্যুটার নুর ইসলাম, অনির, সৌরভ, সাদমানকে এ হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব দেন। গত ১৪ জুন সন্ধ্যায় অমিতসহ শ্যুটাররা ফরহাদ আলীর বাড়ির আশেপাশে ঘুরে ফিরে পর্যবেক্ষণ করেন। পরবর্তীতে রমজান, আশিক ও মেহেদীর সঙ্গে আলোচনা করে তারা সিদ্ধান্ত নেয় গত ১৫ জুন জুম্মার নামাজ শেষে ফরহাদকে হত্যা করা হবে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৫ জুন সকালের দিকেই অমিতসহ শ্যুটাররা সুবাস্ত টাওয়ারের সামনে জড়ো হয়। অমিতের নির্দেশনা মাফিক সিদ্ধান্ত হয় নুর ইসলাম, অনির ও সৌরভ মূল কিলিং মিশনে অংশ নেবে। আর অমিতের সঙ্গে ব্যাকআপ হিসেবে থাকবে সাদমান। তবে মেহেদী ও আশিকের দীর্ঘদিনের বেতনভুক্ত রনি নিজে কিলিং মিশনে অংশ নিতে চাইলেও অমিত তাকে পাঠায়নি। ১৫ জুন আনুমানিক দুপুর ১২ টার দিকে রমজানের ছোট ভাই সুজন কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারী তিনজন শ্যুটার ও ব্যাকআপ সাদকে সহযোগী জাকিরের সঙ্গে অস্ত্র গ্রহণের জন্য একটি রিকশা গ্যারেজে পাঠায়। চারজনকেই অস্ত্র বুঝিয়ে দেন শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর অন্যতম আস্থাভাজন পুলক ওরফে পলক। এরপর জাকির তাদের নিয়ে সহযোগী আরিফের কাছে পৌঁছে দেন। আরিফের বাসা মৃত ফরহাদ আলীর বাসার কাছেই। পরিকল্পনামাফিক আরিফ শ্যুটারদের মসজিদের কাছে নিয়ে ফরহাদ আলীকে চিনিয়ে দেন। নামাজ শেষে ফরহাদ মসজিদ থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নূর ও অনির জনসম্মুখে উপর্যপুরি গুলি করে পালিয়ে যান। ঘটনাস্থলে সৌরভ ব্যাকআপ হিসেবে উপস্থিত থাকলেও  তিনি কোনো গুলি করেনি।

আব্দুল বাতেন আরো বলেন, এরপর নুর ইসলাম ও অনির সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলশান এক নম্বরে পুলিশ চেকপোস্টে গুলি করেন। পরবর্তীতে তারা তাদের অস্ত্রগুলো শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর সামরিক কমান্ডার অমিত এর কাছে বুঝিয়ে দিতে পল্লবী এলাকায় যান। সেখানে অমিত তার অপর সহযোগী সুজনের মাধ্যমে অস্ত্রগুলো রিসিভ করে। এ হত্যাকাণ্ডে তাৎক্ষণিকভাবে একলাখ টাকা শ্যুটারদের মধ্যে বন্টন করে দেন অমিত। অস্ত্র যোগানদাতা পুলক এবং কিলিং মিশনে ব্যাকআপ হিসেবে অংশগ্রহণকারী সাদ পলাতক রয়েছেন। গত ৪ জুলাই রাতে ডিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নুর ইসলাম ও অমিত নিহত হয়েছেন বলেও জানান আব্দুল বাতেন।

সম্প্রতি বাড্ডার আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদ আলী হত্যার ঘটনা তদন্তে এ কিলার নেটওয়ার্কের সন্ধান পেয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এ চক্রটি বিভিন্ন সময় রাজধানীর বড় বড় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে। এছাড়া খুন করে বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, ফরহাদ হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গত ১০ জুলাই জহিরুল ইসলাম সুজন নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া জবানবন্দির ভিত্তিতে ১৩ জুলাই রাতে গুলশান এলাকা থেকে ১টি পিস্তল ও ৬ রাউন্ড গুলিসহ জাকির হোসেন (৩১) ও আরিফ মিয়াকে (২০) গ্রেফতার করা হয়।

পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মিরপুর থেকে ৩টি পিস্তল ও ৬ রাউন্ড গুলিসহ আবুল কালাম আজাদ অনির (২৮), বদরুল হুদা সৌরভ (২৬) ও  বিল্লাল হোসেন রনি (২৮) নামে আরো তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।

সূত্র আরো জানায়, মৃত ফরহাদ আলী রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বাড্ডায় অটোরিকশা স্ট্যান্ড ও ডিস ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা উঠাতেন। মূলত এ চাঁদার টাকার ভাগ নিয়ে এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী রমজান ও ফরহাদ আলীর দ্বন্দ্ব হয়। বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসী মেহেদী ও আশিকের আস্থাভাজন সহযোগী রমজান। দ্বন্দ্বের জেরে রমজান, মেহেদী ও আশিক তিনজন মিলে ফরহাদ আলীকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৮
পিএম/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।