আকমল হোসেন হেঁটে যেতে পারলেও বাবা আজগর হোসেনের জন্য এতটা পথ হেঁটে যাওয়া কষ্টকর। তাই বাগবিতণ্ডায় জড়িয়েছেন অটোরিকশা চালকের সঙ্গে।
আহমেদ রুশদী পুরো পরিবার নিয়ে বেরিয়েছেন। যাচ্ছেন উত্তরায় শ্বশুরের বাসায়। তাদের ৮ নম্বর রোডেও চলছে উন্নয়ন কাজ। তাই কোনো গাড়ি, রিকশা চলাচল করে না। হেঁটে চলার এক পর্যায়ে পাঁচ বছরের ছেলে আইমানের পা পিছলে ম্যানহোলের ঢাকনার অংশটিতে লেগে মচকে যাওয়া মতো হয়েছে। কিছুতেই ছেলের কান্না থামাতে পারছেন না রুশদী। অবশেষে স্ত্রীকে বাসায় পাঠিয়ে ছেলেকে নিয়ে ছুটলেন ডাক্তারের কাছে। মিরপুর-২ নম্বর সেক্টরের এই এলাকাটিতে এমন ঘটনা নিত্যদিনের। প্রবীণ, অসুস্থ, রোগী কিংবা শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের কাছেই উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ এখন দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এলাকার ‘এইচ’ ব্লকে সকল রোডেই একসঙ্গে চলছে ম্যানহোল ও রাস্তা উন্নয়নের কাজ। বর্তমানে ম্যানহোলের কাজ শেষ হলেও ঢাকনার অংশটি মূল সড়ক থেকে একটু উঁচু করে তোলা হয়েছে। হয়তো রাস্তাটিও উঁচু করে লেবেল করা হবে। বর্তমানে রাস্তা নিচু থাকায় এবং ম্যানহোলের ঢাকনার অংশগুলো উঁচু হওয়ায় রীতিমত দুর্ঘটনার নিয়ামকে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে রাতের বেলা বিদ্যুৎ না থাকলে প্রতিনিয়তই ঘটে ছোট-বড় বিপত্তি। রহিম উদ্দীন নামে এক চা দোকানি বাংলানিউজকে জানান, পরশু (বুধবার) রাতেও একজন লোক ম্যানহোলের ঢাকনায় হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে ঠোঁট কেটে ফেলেছেন। প্রায়ই হোঁচট খেয়ে আহত হন সাধারণ মানুষ।
এ অবস্থায় এলাকাবাসীর মনে প্রশ্ন এটা কি উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ নাকি দুর্ভোগ। কেননা, প্রায় পাঁচ মাস হয়ে গেলেও এখনো কাজ অর্ধেক হয়নি। ম্যানহোলের কাজ শেষ হলেও, এখনও শুরু হয়নি রাস্তা সংস্কারের কাজ।
আব্দুল হান্নান নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, একসঙ্গে সকল রাস্তার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। ফলে পুরো এলাকার মানুষই দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। উন্নয়ন কাজ তো করতেই হবে। কিন্তু এমন অরক্ষিত কেন? মানুষ আহত হচ্ছে অহরহ। এটা বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত কাজ শেষ করা উচিত।
৮ নম্বর রোডের বাসিন্দা ইয়াসিন মিয়া বলেন, উন্নয়ন আমাদের সুবিধা আনবে। কিন্তু এখন যে অবস্থায় আছে সেটা কি উন্নয়ন না দুর্ভোগ? অন্তর্বতী সময়ে যে দুর্ভোগ হচ্ছে সেটা মাথায় নিয়ে কাজ শুরু করা উচিত ছিল কর্তৃপক্ষের। ম্যানহোলের কাজ শুরুর সময় চলাচলেরই কোনো উপায় ছিল না। মাটি খুঁড়ে রাস্তার উপরে রাখার কারণে সে এক অবস্থা দাঁড়িয়েছিল। আর এখন রাস্তার মাঝখানে একটু পরপর ম্যানহোলের উঁচু ঢাকনা। এটা রীতিমত আতঙ্কের। কোনো গাড়ি যেতে পারে না, হাঁটতে গেলে হোঁচট খেতে হয়। এভাবে আর কতদিন চলবে প্রশ্ন তারও। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ নিরসনে ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, উন্নয়ন কাজটি তারা করছে না বলে বাংলানিউজকে জানায়। সংস্থাটির পরিচালক (টেকনিক্যাল) শহীদ উদ্দীন বলেন, ২০১৩ সাল থেকে আমরা কোনো ম্যানহোলের কাজ করছি না। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনই (ডিএনসিসি) তাদের নিজেদের মতো করে করছে। রাস্তা যেহেতু তাদের আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো পরামর্শই করছে না।
বিষয়টি নিয়ে ডিএনসিসির সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাউল ইসলামকে মোবাইল ফোনে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৮
ইইউডি/এমজেএফ