ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আমাগোরে স্বপ্ন কাইড়্যা নিলো সর্বনাশা যমুনা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৮
আমাগোরে স্বপ্ন কাইড়্যা নিলো সর্বনাশা যমুনা যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি। ছবি: বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ: পরিবার ছাইড়্যা বিদ্যাশে থাইক্যা রাত-দিন শ্রমিকের কাম কইর‌্যা কামাই কইরলাম দুই ভাই। রক্তপানি করা কামাইয়ের ৪২ লাখ ট্যাহা দিয়্যা দ্যাশে ঘরবাড়ি বানাইল্যাম। আমাগোরে সারাজীবনের স্বপ্নের বাড়ি আছিল এইডো। সর্বনাশা যমুনা নদী আবারও আমাগোরে স্বপ্ন কাইড়্যা নিলো। আবারও আমাগোরে নিঃস্ব কইরলো।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার এনায়েতপুর থানার চৌহালীর বোয়ালকান্দি চরের আব্দুর রহমান (২৫) বুকভরা হতাশা আর ছলছল চোখে এভাবেই তার জীবন সংগ্রামের কথা বাংলানিউজের কাছে তুলে ধরেন।

আব্দুর রহমান বলেন, বড় ভাই নুরুল ইসলাম ২০ বছর আগে মালয়েশিয়াতে শ্রমিকের কাম শুরু করে।

রাইতদিন খাইটা ভাই ট্যাহা পাঠাইতো। ওই ট্যাহায় আমাগোরে সংসার চলতো। আমরা খুউব কষ্ট কইর‌্যা সংসার চালাইয়া তারপরও ট্যাকা জমাইতে থাকি। ধীরে ধীরে আমাগোরে বাড়ি করার জন্য ব্রাহ্মনগ্রামে ২০ ডিসিমাল জমি কিনি। তারপর আমিও দুবাই যাইয়া শ্রমিকের কাম শুরু করি। দুই ভাইয়ের আয়ের ট্যাহায় কয়েক বছর আগে ৪২ লাখ ট্যাহা খরচ কইর‌্যা বিরাট একটি বাড়ি বানাই। স্বপ্নেও ভাবি নাই যমুনা এতদূর আইস্যা আমাগোর এই বাড়িতে হানা দিবো।

তিনি বলেন, আমাগোরে স্বপ্নকে ধুলিস্যাৎ কইর‌্যা যমুনা এ্যাহন ঘরের কানিতে আইস্যা খারাইচে। ৪২ লাখ ট্যাহার বাড়ির দাম এ্যাহন দুই লাখও কেউ কয় না। তাই নিজেই তাড়াতাড়ি রড-ইট ভাইঙ্গা নিয়্যা যাইত্যাছি।

যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি।  ছবি: বাংলানিউজ

একই এলাকার মনু ভুইয়ার ছেলে রফিকুল ভুইয়া অন্যের জমিতে দিনমজুর করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ছোট ভাই বাবুল ভুইয়াকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর পর আর খরচ যোগাতে পারেননি। এরপর তাঁত শ্রমিকের কাজ করে আয় করা টাকার সঙ্গে কিছু টাকা ঋণ করে বাবুল মালয়েশিয়ায় যান। সেখানে আট বছর শ্রমিকের কাজ করে দেশে ফিরে এসে জমি কিনে একটি বাড়ি তৈরি করেন। দুই ভাইয়ের সুখের সংসার যখন ঠিক তখন যমুনার আগ্রাসী হানা। অবশেষে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাড়িটাও তাদের ভেঙে নিতে হলো।  

বাবুল ভুইয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমরা আবারও নিঃস্ব অইয়্যা গেল্যাম। যমুনা আমাগোরে পরিবারসহ পথে বসাইয়্যা দিলো।

এমনই অবস্থা ব্রাহ্মনগ্রাম অঞ্চলের মুজাহিদ, এমদাদুল, মবিজল, লেবু, জাহাঙ্গীর, ছামাদ, শহীদুল হাসমত, পাষাণ খলিফা, আমোদ আলীসহ ব্রাহ্মনগ্রাম গ্রামের ২০/২৫টি পরিবারের।

ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বার বার নদীভাঙনের শিকার অসহায় এসব মানুষ সুখের স্বপ্ন নিয়ে ১২/১৪ বছর আগে ব্রাহ্মনগ্রাম এলাকায় এসে বাড়ি তৈরি করেছিলেন। এদের মধ্যে কারও ছিল পাকা, কারও অর্ধপাকা। নিয়তি এদের পিছু ছাড়েনি। আবারও যমুনার হানা। যমুনার তীব্র ভাঙনে এক মাসের ব্যবধানে আশ্রয়হীন হয়ে পড়লো পরিবারগুলো।  

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুল হুসেইন খান বাংলানিউজকে বলেন, ভাঙনে বাড়িঘর হারানো মানুষদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সরকারি সহায়তা পেলে এসব মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হবে। এছাড়াও খাস জমিতে এদের আশ্রয়নের জন্যও সার্বিক চেষ্টা করার আশ্বাস দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৮
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ