ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বন্ধুকে ডেকে নিয়ে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা ঘাতক পিন্টুর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৯ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৮
বন্ধুকে ডেকে নিয়ে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা ঘাতক পিন্টুর ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নারায়ণগঞ্জ: বন্ধু প্রবীর চন্দ্র ঘোষকে ছয় টুকরো করে হত্যার বর্ণনায় ঘাতক বন্ধু পিন্টু দেবনাথ বলেছেন, ঈদ উপলক্ষে শান্ত পরিবেশে প্রবীরকে মাদকের পার্টির কথা বলে নিজের বাসায় ডেকে আনি। বাসায় এসে প্রবীর টিভি দেখতে দেখতে কোল্ড ড্রিংক পান করছিল। এ সময় পেছন থেকে তার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করলে সে দুর্বল হয়ে পড়ে।

এসময় প্রবীর আমাকে কয়েকদফা লাঠি দিয়ে আঘাত থাকলে আবারো লাঠি ও দা দিয়ে তাকে আঘাত করতে থাকি। একপর্যায়ে রক্তাক্ত অবস্থায় টিভির রুমের খাটে লুটে পড়ে সে।

এসময় তাকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করি। পরে দা দিয়ে তার দেহকে ছয় টুকরো করা হয়।

পরে বাজার থেকে সাতটি সিমেন্টের ব্যাগ কিনে এনে ছয় টুকরো মরদেহ ও আরেক ব্যাগে বালিশ, খাটের চাদর, ব্যবহার করা জামা ও দা প্যাকেট করি। ঘরের বাথরুমে রক্তের দাগ মুছে নিজে গোসল করি।

আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে বাসা নিচে পরিত্যক্ত সেফটিক ট্যাংকে পাঁচ টুকরো ঢুকাতে পারি। কিন্তু পায়ের ব্যাগটি জায়গা হচ্ছিলো না। পরে বাড়ির উত্তর পাশে ময়লার স্তুপের সঙ্গে ড্রেনে ফেলে দেই। বাসায় এসে হাত পরিষ্কার করে ফের প্রবীরকে খুঁজতে তার বাসায় যাই।

এমন স্বীকারোক্তিতে ডিবির তদন্ত টিম পুরো ঘটনার সমাপ্ত চিন্তা করলেও আরও প্রশ্নে পিন্টু নাটকীয় করে ফেলে।

ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, পিন্টু চতুর ও কৌশলী লোক। গ্রেফতার হওয়ার পর এখন পুরো ঘটনার দোষ নিজের উপর নিতে চাচ্ছে। একটি মানুষকে এভাবে নির্মমভাবে হত্যা করতে একজন পারে না। কারণ, বিভিন্ন প্রশ্নে কৌশল করে পিন্টু উত্তর দিচ্ছে। যেগুলোতে ধরা খাচ্ছে। পিন্টু কখনো একা প্রবীরকে হত্যা করতে পারে না। এখানে তার সঙ্গে আরও লোক জড়িত রয়েছে। কিন্তু তিনি কিলিং মিশনে থাকা লোকজনের নামের তালিকা ওলট-পালট বলছেন। ফলে আমাদের তদন্তে কৌশল করতে হচ্ছে। পিন্টু স্বীকারোক্তিতে যে বর্ণনা দিয়েছে, তার সঙ্গে বাস্তবতা অনেক কম।

১১ জুলাই সন্ধ্যায় প্রধান আসামি পিন্টুর স্বীকারোক্তি বর্ণনার জন্য তাকে ঠাণ্ডু মিয়ার দ্বিতীয় তলায় তার ফ্ল্যাটে নেয়া হয়। সেখানে তিনি কিভাবে হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছেন তা দেখিয়েছেন। কিন্তু সে ঘটনাকে কিছু আড়াল করা হয়েছে। বাসায় ঢুকলে দেখা যায়, প্রথম রুমে দামি খাটে নতুন চাদর সাজিয়ে রাখা। পাশে ৪৮ ইঞ্চি সনি টিভি, পুরাতন আলমারি, কাচের টেবিল ও প্লাস্টিকের চেয়ার। ভেতরের রুমে আরেকটি নতুন খাট, সেখানে নতুন চাদর সাজিয়ে পুরো ফিটফাট। পাশে নতুন স্যামসাং ফ্রিজ, পাশে খাবারের ছোট টেবিল। তার উত্তর দিকে বাথরুম, বামে কিচেন রুম। দু’রুমের সঙ্গে রাস্তার পাশে বারান্দা রয়েছে। ফ্ল্যাটের দুই রুম, বাথরুম, কিচেন রুম ও বারান্দা পুরো চক চক করছিল, যেন রুমে কেউ ঢুকেনি। একটি বিষয় লক্ষ্য করা গেছে, কোনো স্থানে ময়লা বা বালু দেখা যায়নি।

তিনি আরো জানান, পিন্টুর বসত ঘরে ঢুকলে হত্যার কিছু না পাওয়া গেলেও কিছু হয়েছে এই রুমে তা নিশ্চিত। পুরাতন আলমারি থেকে একটি বটি উদ্ধার করা হয়েছে। বটিতে হালকা সাদা সাদা মরিচা পড়েছিল।

পিন্টু এ ব্যাপারে জানান, পূজার জন্য বটিটি বাসায় রাখা হয়েছিল। কিন্তু ঘরে কোনো প্রতিমা দেখা যায়নি। পরে জানান প্রতিমাটি তার ‘পিন্টু শিল্পালয়ের’ দোকানে। সিমেন্টের একটি ব্যাগে তার স্বর্ণের বাক্স পাওয়া গেছে। হত্যার আগে প্রবীরকে বিস্কুট যে প্লেটে অ্যাপায়ন করা হয়েছিল, সেটি উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু প্রবীরকে যে কোল্ড ডিংক খাওয়ানো হয়, সে বোতল সেদিন ফেলে দিয়েছেন বলে জানান পিন্টু।

পিন্টু হত্যা করার জন্য দু’টি জিনিসকে দেখাচ্ছে। সেগুলো হলো- বন্ধকী স্বর্ণ লেনদেন ও স্বর্ণ ভবনে পিন্টুর নামে কেনা দোকানে প্রবীরের টাকা লেনদেনের ঘটনা। পিন্টু দাবি করেন, প্রবীর তাকে দু’বার হত্যা করার চেষ্টা করেছিল।

স্বর্ণ শিল্পী শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি অরুণ কুমার দত্ত জানান, প্রবীর তার বন্ধু পিন্টুর কাছে বন্ধকী স্বর্ণ রেখেছিলেন। সে টাকা প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার মতো। কিন্তু তাদের কোনো আপত্তি না থাকায় আমরা কোনো সময় জিজ্ঞাসা করেনি।

এ ব্যাপারে পিন্টু জানিয়েছে, দোকানের খাতায় হিসাব রয়েছে। প্রবীর বন্ধকী বাবদ আমার কাছে চার বা সাড়ে চার লাখ টাকা পাবে এবং স্বর্ণ ভবনে যে দোকান কিনেছিলেন সেটা প্রবীর তার নামে দেয়ার জন্য চাপ দিয়েছিলেন। এই জন্য তাকে পথ থেকে সরিয়ে দিতে এ ঘটনা ঘটানো হয়।

স্বর্ণ ভবনের দোকানের বিষয় এক জুয়েলারি মালিক জানান, পিন্টু যখন দোকানটি কিনেছিল তখন এটার পজিশন ছিল মাত্র ১০ লাখ টাকা। এখন এই দোকানের দাম কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকা।

এর আগে নিখোঁজের ২১ দিন পর নারায়ণগঞ্জ শহরের কালিরবাজার স্বর্ণপট্টি এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর ঘোষের পাঁচ টুকরো মরদেহ সোমবার (৯ জুলাই) রাত ১১টায় শহরের আমলাপাড়া কে বি সাহা রোডের নুরুল ইসলাম ওরফে ঠাণ্ডু মিয়ার বাড়ির সেফটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয়। পরদিন রাতে বাকি এক টুকরো উদ্ধার করা হয় পাশের ময়লার স্তুপের পাশ থেকে।

প্রবীর ঘোষ কালিরবাজার স্বর্ণপট্টির ভোলানাথ জুয়েলার্সের মালিক ভোলানাথ ঘোষের ছেলে। তারা ডাক্তার অমল বাবুর বাড়িতে ভাড়া থাকেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৮
আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।