ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

কপোতাক্ষের ভাঙনে বিপন্ন পাইকগাছার মানুষ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৮
কপোতাক্ষের ভাঙনে বিপন্ন পাইকগাছার মানুষ কপোতাক্ষের করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতভিটা

খুলনা: খুলনার পাইকগাছার পাঁচ গ্রামের মানুষের জন্য বড় দুঃখ কপোতাক্ষ নদের ভাঙন। কপোতাক্ষের করাল গ্রাসে দিন দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতভিটাসহ ফসলি জমি। অব্যাহত নদী ভাঙনে ছোট হয়ে আসছে পাইকগাছার মানচিত্র। বসতভিটা হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে শত শত মানুষ। অব্যাহত ভাঙনরোধে সরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী।

ভাঙন কবলিত এলাকাবাসী জানান, কপোতাক্ষের অব্যাহত ভাঙনে পর্যায়ক্রমে পাইকগাছার কপিলমুনির ছয়টি গ্রামের প্রায় চার/পাঁচ শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। শুধু বাপ-দাদার ভিটামাটিই নয়, ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে কবরস্থান, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দিরসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।

এক সময়ের জমিদাররাও আজ উদ্বাস্তু হয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। এখন যেভাবে ভাঙন চলছে বৃষ্টি বাড়লে ভাঙন আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

কপোতাক্ষের করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতভিটাভাঙন কবলিত পাইকগাছার মালত গ্রামের শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, কপোতাক্ষ নদটি খুলনার পাইকগাছা উপজেলাধীন মাহমুদকাটি, বাদামতলা, দরগাহমহল, হাবিবনগর, মালত, বিরাসী গ্রামসহ আগড়ঘাটা বাজার ঘেঁষে শিবসা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। গত বছর থেকে ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রায় ২৫০ বিঘা জমি ও শত শত পরিবারের বসতভিটা নদী ভাঙনের শিকার হয়ে তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। চলমান বৃষ্টি মৌসুমে নদী ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। চোখের সামনে বিলীন হচ্ছে পৈত্রিক ভিটা। অপলক দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছে না এই এলাকার মানুষ।

তিনি জানান, ইতোমধ্যে নদী ভাঙনে তাদের বসতভিটাসহ সবকিছু হারিয়ে গেছে।

কপোতাক্ষের করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে যাচ্ছে রাস্তাপাইকগাছার মালত গ্রামের মো. আরজান আলী মোড়ল বাংলানিউজকে বলেন, কপোতাক্ষের করালগ্রাসে পাইকগাছার রামনাথপুর, শ্রীরামপুর, শিলেমানপুর, আগড়ঘাটা, হাবিবনগরের বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে হাবিবনগর, দরগাহপুর, রামনাথপুর গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। পাইকগাছা-খুলনা সড়কও বর্তমানে চরম হুমকির মুখে। ভাঙন প্রায় ২শ’ গজ দূরে রয়েছে। প্রতিদিন যেভাবে ভাঙছে তাতে যেকোন সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে সড়কটি।

শ্রীরামপুরের বাসিন্দা প্রবীর জানান, অব্যাহত নদী ভাঙনের শিকার শত শত একর ফসলের মাঠ ও বিস্তীর্ণ জনপদ হুমকির সম্মুখীন। নদী ভাঙনে ইতোমধ্যে অসংখ্য মানুষ হয়েছে ভূমিহীন। বাড়ছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কান্নার ঢেউ। তারা এখন জমিজমা, ঘরবাড়ি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, বিষয়টি নিয়ে ইতোপূর্বে তারা সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দফতরে আবেদন করলেও কোন কাজ হয়নি। ১৯৯৬ সালে আরসিসি ব্লক দেওয়া হয়। রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় তা এখন হারিয়ে গেছে। মৃতপ্রায় নদীতে নতুন করে ভাঙন শুরু হওয়ায় শুধু পরিবার নয়, গ্রামকে গ্রাম বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

তাদের অভিযোগ, ২০০০ সাল থেকে ভাঙন শুরু হলেও সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাখিমারা বিলের টিআরএম (জোয়ার-ভাটা) প্রকল্প গ্রহণ করার পর এ অঞ্চলের ভাঙন বেড়েছে। নদী আগের গতিপথে ফিরে গেলে এ পাড়ের (পাইকগাছা) ভাঙন রক্ষা করা সম্ভব হবে।

পাইকগাছা উপজেলার ২ নম্বর কপিলমুনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়াদ্দার বাংলানিউজকে বলেন, কপোতাক্ষ নদের এপারে খুলনার পাইকগাছা উপজেলা। ওপারে সাতক্ষীরার তালা উপজেলা। পাইকগাছা অংশে দিন দিন ভাঙনের তীব্রতা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। ভাঙনে বাজার, ঘাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, সরকারি রাস্তা বিলীন হতে চলেছে। আগড়ঘাটা, দরগাহমহল, কপিলমুনির শ্রীরামপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষের বসতভিটা ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ১০-১৫ লাখ টাকা ভাঙন প্রতিরোধে ব্যয় করা হয়েছে। বিভিন্ন দফতরে আবেদনও করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবি) যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বাংলানিউজকে বলেন, পাউবির খুলনা অংশে কপোতাক্ষ নদে ভাঙন প্রতিরোধে কোন প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন ছিলো না। আমরা স্বপ্রণোদিত হয়ে ভাঙন প্রতিরোধে আমাদের একটি প্রকল্পের সঙ্গে খুলনা অংশ সংযুক্ত করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলে ভাঙন রোধে কাজ শুরু করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৯ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৮
এমআরএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।