ফল চাষিরা বাংলানিউজকে জানান, খাগড়াছড়ি বিভিন্ন জাতের আম ফরমালিনবিহীন হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে সংগ্রহ করে নিয়ে যান। প্রতিকেজি আমের যে দাম সে পরিমাণ টাকা চাঁদা দিতে হয় বলে তারা এখান থেকে আম সংগ্রহ করতে চান না।
আম পরিবহনের সময় পার্বত্য জেলা পরিষদ, খাগড়াছড়ি পৌরসভা, রামগড় পৌরসভা ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভার টোল ইজারাদাররা অতিরিক্ত হারে ট্যাক্স (টোল) আদায় করছেন। বাজার ফান্ডের বাজার ইজারাদাররাও বাড়তি টোল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। আর একাধিক আঞ্চলিক দলের চাঁদা তো আছেই।
খাগড়াছড়ি ফলদ বাগান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জগত জীবন চাকমা বলেন, গতবছর আম কিনতে বাইরে থেকে যতোজন ব্যবসায়ী এসেছেন এবার তার অর্ধেকও আসেনি। এক কেজি আমের সমান টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে টোল হিসেবে দিতে হয়। ২০ কেজি আমে পাঁচ টাকা টোল নির্ধারণ থাকলে রামগড় উপজেলার সোনাইপুল মানিকছড়ির গাড়িটানা টোলকেন্দ্রে ২০ টাকা করে নিয়ে থাকে। টোল আদায়ের কোনো রশিদও দেওয়া হয় না। অতিরিক্ত টাকা দিতে না চাইলে আম রেখে দেওয়া কিংবা মারধরও করা হয়।
এদিকে খাগড়াছড়ি পৌরসভাও ২০ টাকা সংগ্রহ করে থাকে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের টোলের শিডিউলও এখনও দেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি।
বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আমের ট্রাক খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছাতে ট্যাক্সের নামে চাঁদা আদায় করা হয় ১০-১২ হাজার টাকা। এরমধ্যে খাগড়াছড়ি পৌরসভা ছোট ট্রাক ৪-৫ হাজার টাকা, বাজার ফান্ড প্রতি গাড়ি ৩শ টাকার স্থলে নেওয়া হয় দেড় হাজার টাকা থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা পর্যন্ত। রামগড়ের সোনাইপুল ও মানিকছড়ির গাড়িটানায় পার্বত্য জেলা পরিষদের টোলে ফলের বড় গাড়ি নির্ধারিত ৫শ টাকার স্থলে আট হাজার টাকা, ছোট ট্রাক ৪শ টাকার স্থলে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে বিনা রশিদে। পৌরসভা কখনও টোল শিডিউল মানে না। শুধু তাই নয়, খুচরা আম পরিবহনকারীরাও আছেন বিপদে। নিয়ম অনুযায়ী ২০ কেজি বা ১ ক্যারেটের ট্যাক্স মাত্র ৫ টাকা ধরা থাকলেও ইজারাদাররা নিচ্ছেন ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া টহল পুলিশ, মাটিরাঙ্গা, রামগড় থানা পুলিশ, ফটিকছড়ি থানা পুলিশের নামেও চাঁদা তোলা হয় বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।
পার্বত্য জেলা পরিষদের একটি সূত্র জানায়, জেলার গুরুত্বপূর্ণ রামগড়ের সোনাইপুল টোলকেন্দ্রের ইজারাদার গুইমারা উপজেলা চেয়ারম্যান উশুইপ্রু মারমা। মূলত তার নামেই ইজারা নিয়েছেন খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম। যেটি কিনা রামগড় পৌরসভার মেয়র কাজী শাহজাহান রিপন ও ব্যবসায়ী মহিউদ্দিনের লোকজনই নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। এ কারণে অতিরিক্ত টোল নিলেও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস করে না।
অপরদিকে মানিকছড়ির গাড়িটানা টোলকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জয়নাল আবেদীন।
গ্রিন টাচ এগ্রো ফার্মের সত্ত্বাধিকারি শাহাজ উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, খাগড়াছড়ি পৌরসভা শহরের বাইরে জিরো মাইলে গিয়ে দ্বিগুণ বেশি টোল আদায় করছে। যেটা তারা করতে পারে না। এছাড়া এক শক্তিশালী চক্র দীর্ঘদিন ধরে টোল ইজারা নিয়ন্ত্রণ করছেন। নিয়ম-নীতি না মেনে ইচ্ছে মতো টোল আদায় করছে। এক্ষেত্রে প্রশাসনও নিরব।
খাগড়াছড়ি মারমা ফলদ বাগান মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক বাবুর্শি চৌধুরী, ভালো ফলন হওয়ার পরও যদি লাভের টাকা টোলের নামে চাঁদাবাজিতে দিতে হয় তাহলে তো কৃষক, ব্যবসায়ীরা আগ্রহ হারাবে। কারা অধিক হারে টাকা নিচ্ছে প্রশাসনসহ সবাই জানে কিন্তু কেউ তো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আর একাধিক ভেতর পার্টিকে (আঞ্চলিক দল) তো চাঁদা না দিয়ে ব্যবসার কথা চিন্তায় করা যায় না।
অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) কর্মকর্তা তামান্না মাহমুদ ও রামগড়ের ইউএনও আল মামুন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘এই বিষয়ে কেউ অভিযোগ দেয়নি। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তারা।
গুইমারা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও রামগড় সোনাইপুল টোল কেন্দ্রের ইজারাদার উশইপ্রু মারমা বলেন, মূলত আয় কর না দেওয়া জন্য আমার নাম ব্যবহার করে ইজারাটি নেওয়া হয়েছে। টোলটি খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র রফিকুল আলম, রামগড় পৌর মেয়র কাজী শাহজাহান রিপন, মহিউদ্দিন, তছলিম মিলে যৌথভাবে এটি পরিচালনা করেন। এতে আমার কোনো শেয়ার নেই।
এই কাজ নিয়ে সমালোচিত হচ্ছেন বলে দাবি করে তিনি বলেন, অধিক টোল আদায় না করতে আমি বার বার নিষেধ করেছি। এনিয়ে সবার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছি। আগামী ৩০ জুন ইজারার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এবার নতুন করে খাগড়াছড়ির মেয়র রফিকুল আলম বেগম রাইস মিলের নামে শিডিউল ড্রপিং করছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১২ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৮
এডি/এএটি