ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স নির্মাণে নিম্নমানের ইট!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১২ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৮
শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স নির্মাণে নিম্নমানের ইট! খুলনা শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স নির্মাণে ব্যবহৃত ইট, ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্সের নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদারকির অভাবে শিল্পকলা একাডেমি ভবন নির্মাণের শেষ দিকে নিম্নমানের ইট দিয়ে দায় ছাড়া কাজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ সাংস্কৃতিক কর্মীদের।

তারা বলছেন, খুলনার সাংস্কৃতিকপ্রেমী মানুষের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ফসল এ শিল্পকলা একাডেমির কাজে অনিয়ম হলেও কেউ দেখার নেই।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অডিটরিয়ামের নিচতলার সিঁড়ির পাশের দেওয়াল, গ্রিন রুমে নিম্নমানের ইট দিয়ে কাজ করা হচ্ছে।

নির্মাণ শ্রমিকরা বলেন, এখানে ঠিকাদারেরা আমাদের যা দিতে বলেছে, আমরা তাই দিচ্ছি। এর বাইরে অন্য কিছু আমরা জানি না।

অনেকে নিম্নমানের ইট দিয়ে একাডেমি কমপ্লেক্স নিমার্ণ করার ক্ষোভ ঝাড়ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।

আব্বাস উদ্দীন একাডেমির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বাচ্চু তার ফেসবুকে লিখেছেন- শিল্পকলা একাডেমির শেষ দিকের কাজ চলছে, এই সময় তদারকি কমিটির কার্যকরী ভূমিকা দরকার, কিন্তু কোথায় তারা?! চলছে ভাংগা-ব্যাকা/২/৩ নম্বর ইটের ব্যবহার! ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত যথেষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে, এটা তাদের বদান্যতা ও শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কৃতিত্ব! কিন্তু, তদারকি কমিটি কই? ঢাকা থেকে বা খুলনার ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা আসলে তখন ২/৪ জন ছবি তুলতে আর লিয়াজো করতে আসেন! কারণ তারাতো এটা ব্যবহার করবেন না, প্রয়োজন হবে আমাদের মতো সাধারণ সাংস্কৃতিক কর্মীদের, যাদের আর কোনো জায়গা নাই! তাই এতো কথা বলি, দয়া করে একটু সচেষ্ট হোন, কাজটা যেন সর্বাঙ্গীন সুন্দর ও কার্যকরি হয়..

সাংস্কৃতিক কর্মী শেখ লুতফুন্নাহার পলাশী লিখেছেন, পুরানো ইটও মনে হয় দিচ্ছে, তাতে করে ব্লিডিং এ দ্রুত ড্যাম চলে আসবে, আর ড্যাম আসলেই যেখানে যেখানে পরে রড দেওয়া হবে সেই রডেও মরিচা পড়বে। ফলে ব্লিডিংয়ের স্থায়িত্বও কমে আসবে...তাছাড়া খুলনা লবণ অঞ্চল, এখানে পানিতেও লবণ আছে কিনা এটাও দেখতে হবে, এতো বড় প্রতিষ্ঠান যেখানে শিল্পীদের যাতায়াত থাকবে সেইখানে এরকম কাজ খুব দুঃখজনক!

জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্সের নির্মাণের ৮০-৮৫ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। গণপূর্ত অধিদফতরের কাছ থেকে বিসিটিএই ইলোরা জেভি নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ নিয়ে এটি নির্মাণ করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মহানগরীর শেরে বাংলা রোডের পুরাতন নার্সিং ইনস্টিটিউটের জায়গায় শিল্পকলা একাডেমির আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন কমপ্লেক্স তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করে সরকার। এর আগে ২০১১ সালের ৫ মার্চ খুলনার খালিশপুরের প্রভাতী স্কুল মাঠের জনসভায় অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে খুলনায় শিল্পকলা একাডেমি নির্মাণ করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। ইতোপূর্বে দীর্ঘদিন ধরে খুলনার সাংস্কৃতিক অঙ্গণের কর্মীরা ও সাংবাদিকরা যৌথভাবে আন্দোলন করেন খুলনায় শিল্পকলা একাডেমি ভবন নির্মাণের জন্য। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনাবাসীর সেই আশাপূরণ করেন।

সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ১০ জুন নগরীর শেরে বাংলা রোডে ৮১শতক জমির ওপর দৃষ্টিনন্দন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন শিল্পকলা একাডেমি নির্মাণের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিসিটিএই ইলোরা জেভি। ১২ কোটি ৭ লাখ ৪০হাজার ২১৯ টাকা ব্যয় ধরে এ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৪তলা কমপ্লেক্স নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ৩০ কোটি টাকা।  

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ১৮ মাস সময়ে অর্থাৎ ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে শিল্পকলা একাডেমির কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিসিটিএই ইলোরা জেভি সংশ্লিষ্ট দফতরে সময় বৃদ্ধির আবেদন জানায়।

এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিসিটিএই ইলোরা জেভি’র স্বত্তাধিকারী মো. তৌহিদুল ইসলাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, আমি নিজে শিল্পকলার সঙ্গে জড়িত। আমি ওখানের আজীবন সদস্য। নিম্নমানের ইট দিয়ে কাজ করার কোনো মানসিকতা নেই। আমার জীবনে এমনটি নেই।

ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, শিল্পকলা একাডেমির কাজে অনিয়ম হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি দেখবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৮
এমআরএম/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।