ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

‘বাড়িওয়ালির লগে আলাপ কইরা ভোটের সিদ্ধান্ত’

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৮ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৮
‘বাড়িওয়ালির লগে আলাপ কইরা ভোটের সিদ্ধান্ত’ আলু, পেঁয়াজ, রসুন-আদা বিক্রেতা আইয়ুব আলী। ছবি: বাংলানিউজ

গাজীপুর ঘুরে এসে: ভ্যানের ওপর আলু, পেঁয়াজ, রসুন-আদা বিক্রি করেন আইয়ুব আলী (৫৬)। বাড়ি জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায়। তিনি প্রায় ২৫ বছর ধরে গাজীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় থাকেন। ভ্যানের ওপর মালামাল নিয়ে বিক্রি করেন এখানেই। দীর্ঘদিন পর নৌকা ও ধানের শীষের ভোটের লড়াই দেখার অপেক্ষায় আছেন তিনি। 

রাজনীতি সচেতন এ ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন তা এখনো ঠিক করেননি। ভোটের দিন সকালে নিজের স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করেই সিদ্ধান্ত নেবেন জানিয়ে আইয়ুব বলেন, ‘দুই প্রার্থীই ভোট চাইতে আইছিল (এসেছিল)।

কাওরে (কাউকে) কথা দেই নাই (দেননি)। বাড়িওয়ালি’র (স্ত্রী) লগে (সঙ্গে) আলাপ কইরা (করে) সিদ্ধান্ত লইমু (নিবো)। ’ 

সোমবার (২৫ জুন) বিকেলে গাজীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার গাজীপুরা এলাকায় আলাপ হচ্ছিল আইয়ুব আলী’র সঙ্গে। তার স্ত্রী মাজেদা খাতুন (৫০) পোশাক কারখানার শ্রমিক। আইয়ুব মনে করেন, সবার মতো তার ভোটটিও অনেক মূল্যবান। এ কারণে কারো কথায় নয়, স্বামী-স্ত্রী বুঝে শুনে পরামর্শ করেই সিল দিবেন।  

তবে কাঙ্খিত ভোটকে ঘিরে অন্য ভোটারদের মতো তার মাঝেও বইছে নির্বাচনী উৎসবের আমেজ। রাত পোহালেই গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট। আইয়ুবের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে শুধু নতুন মেয়র নন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় রাজনীতির হিসেব-নিকাশেও প্রভাবের ভূমিকা পালন করবে। সাইদুর রহমান ফলে এ নির্বাচনে দুই দলের মেয়র প্রার্থীর বিবেচনায় রয়েছে আঞ্চলিক ভোট। জয়-পরাজয় নির্ধারণেও এ ভোট গুরুত্বপূর্ণ। আঞ্চলিক ভোটারদের মধ্যে উত্তরবঙ্গের ভোটারদের চেয়েও এগিয়ে রয়েছেন ময়মনসিংহের ভোটাররা। এ ভোটই এ সিটি করপোরেশনের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে বলেই মনে করেন অনেক ভোটার।  

আইয়ুবের দোকানের একটু দূরেই আমজাদ হোসেনের (৪০) ফলের দোকান। স্থানীয় ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের শালিকচূড়া এলাকায় থাকেন তিনি। এ ফল বিক্রেতার স্থায়ী আবাস নেত্রকোণায়। ২২ বছর যাবত গাজীপুর এলাকায় থেকে ব্যবসা করেন তিনি।  

ভোট নিয়ে প্রশ্ন করতেই আমজাদের সোজাসাপ্টা জবাব- ‘প্রার্থীদের আশ্বাস-প্রতিশ্রুতিতে আর বিশ্বাস হয় না। ইলেকশন গেলেই তারা আমগোরে (আমাদের) ভুইল্যা (ভুলে) যান। এইবার আমগোর মতো গরিব ব্যবসায়ীদের লাইগ্যা (জন্য) তারা কী সুযোগ-সুবিধা রাখছে তা দেইক্ক্যাই (দেখে) ভোট দিমু। ’ 

আমজাদ বলেন ‘প্রার্থীরা কেউ আমগোর (আমাদের) কাছে ভোট চায় নাই। খালি একটা কাগজ (লিফলেট) দিয়াই চইল্ল্যা গেছে। হেরা হয়তো ভাবে গরিবের ভোটের দাম নাই। পাস করতে অইলে আমগোর ভোট লাগবোই (লাগবেই)।

সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এ নির্বাচনে ময়মনসিংহ অঞ্চলের অধিবাসীরা মেয়র নির্ধারণ করবেন।  

গাজীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার চায়ের দোকানদার সাইদুর রহমান দুই যুগেরও বেশি সময় যাবত গাজীপুরা পশ্চিম পাড়া এলাকায় থাকেন তিনি।  

তিনি জানান, গাজীপুর সিটিতে ময়মনসিংহ অঞ্চলের বাসিন্দাদের ভোট বেশি। চাকরি, শ্রমজীবী ও ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্পৃক্ত ময়মনসিংহের প্রায় দেড় লাখ বাসিন্দা এখানে থাকেন। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের মধ্যেও রয়েছেন ময়মনসিংহের মানুষ।  

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারণার শেষ দিনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেন ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেলও।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৮ 
এমএএএম/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।