তবে শ্রমিকদের চাপের মুখে বেতন হিসেবে টাকার পরিবর্তে চিনি দেওয়া শুরু করলেও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চিনি বিতরণ নিয়ে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
মিলের তালিকাভুক্ত এক সহকারী ব্যবস্থাপক (সম্প্রসারই)-এসইডিও চিনির দামের ওপর শতকরা পাঁচ ভাগ কমিশন নিচ্ছেন।
রোববার (২৪ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শ্রমিক-কর্মচারীরা মিল গেটে মিটিং ডেকে কমিশন বাণিজ্যের প্রতিবাদ জানিয়ে ন্যায্য পাওনাদি পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন।
তাদের অভিযোগ, সময়মত বেতন ভাতা না পেয়ে তারা ঈদুল ফিতরের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অর্থাভাবে তাদের সন্তানদের লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে।
নাটোর সুগারমিল সূত্র জানায়, গুদামে প্রায় সাত হাজার মেট্রিক টন চিনি মজুদ রয়েছে। গত কয়েক মৌসুমের উৎপাদিত চিনি বিক্রিই হয়নি। এর ওপর শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন-মজুরিসহ আনুষাঙ্গিক পাওনাদি পরিশোধে নিজস্ব তহবিল বা ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা না থাকায় কয়েক বছর ধরে মজুরি পরিশোধে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
একপর্যায়ে মজুরি দিতে না পারায় টাকার পরিবর্তে সমপরিমাণ অর্থের চিনি শ্রমিক-কর্মচারীদের দেওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। শুরুতে রাজি না হলেও শ্রমিক-কর্মচারীদের কেউ কেউ নিরুপায় হয়ে চিনি নিতে সম্মত হন। সেই মোতাবেক টাকার পরিবর্তে চিনি দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে শ্রমিক-কর্মচারীদের অভিযোগ, বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে চিনি বিক্রি করেও পাওনাদি আদায়ে কমিশন বাণিজ্যের শিকার হচ্ছেন তারা। চিনি বিক্রির টাকার ওপর শতকরা পাঁচ ভাগ কমিশন দাবি করছেন কামাল হোসেন নামের স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সুগারমিলের এসইডিও।
এককভাবে ব্যবসায়ী কামাল হোসেন সুগার মিলের মজুদকৃত সব চিনি দিলে কিনবেন এমন শর্তের ভিত্তিতেই মিল কর্তৃপক্ষ তার কাছে চিনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সুযোগেই তিনি শ্রমিক-কর্মচারীদের কাছ থেকে শতকরা পাঁচ ভাগ কমিশন নিচ্ছেন।
মিলের বয়লার হাউজের শ্রমিক আবু তালেব ও ওয়ারিং ও বিদ্যুৎ হাউজের কর্মচারী বাবর আলী জানান, তাদের মজুরি কমিশনসহ ২/৩ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। চাইতে গেলে মিল কর্তৃপক্ষ বলে টাকা নেই, পাঁচ ভাগ কমিশনে চিনি বেচে বেতন নেন।
হিসাব বিভাগের জ্যেষ্ঠ করণিক সাহেব আলী বাংলানিউজকে জানান, ওভারটাইম, বকেয়া বেতন, বাড়ি ভাড়াসহ ২ মাসের বেতন পাননি। মিল কর্তৃপক্ষ বাজারের চেয়েও কম দামে চিনি দিতে চাইছেন। তাতেও পাঁচ ভাগ কমিশন দিতে হবে ক্রেতাকে, এটা মেনে নেয়া যায় না।
চিনিকল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, তারা সবাই একমত হয়েছেন কমিশন দিয়ে বেতন নিবেন না। কমিশন দিয়ে বেতন নিলে তাদের অবশিষ্ট কিছুই থাকবে না। বিষয়টি তারা শিল্পমন্ত্রীকে জানাবেন।
ব্যবসায়ী কামাল হোসেন এ অভিযোগ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করে বলেন, চিনিকল থেকে আগে যে পরিমাণ চিনি কিনেছেন তা এখনও বিক্রি করতে পারেননি। নতুন করে তার চিনি কেনার প্রশ্নই ওঠে না। কমিশন শর্তে তিনি কোনো চিনি ক্রয় করেননি।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদ উল্লাহ মিলের আর্থিক সংকটের সত্যতা স্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের বেধে দেওয়া ৫০ টাকা কেজিতে ব্যবসায়ীরা চিনি কিনতে চান না। তাই চিনি অবিক্রিত থাকছে এবং বকেয়া বেতন-ভাতা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনান্য মিলগুলোতে নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে চিনি বিক্রি করেই বকেয়া পরিশোধ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৮
আরএ