ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মাদক নয় টাকার নেশাই সড়ক দুর্ঘটনার কারণ!

ইয়াসির আরাফাত রিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২২ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৮
মাদক নয় টাকার নেশাই সড়ক দুর্ঘটনার কারণ! দূরপাল্লার গাড়ি চালক মো. মামুন হোসেন

ঢাকা: সড়কে প্রাণহানি যেন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ঈদের আগে ও পরে দুর্ঘটনা বেড়ে যায়, আর লাশের সারি হয় দীর্ঘ। এমন কোনো দিন নেই যে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ ঝরছে না। প্রিয়জন হারানোর বেদনায় বাতাস ভারী হয়ে উঠে।

যাত্রীকল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, শনিবার (২৩ জুন) সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরে গেছে অর্ধশতাধিক তাজা প্রাণ। এতে আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক।

কিন্তু কেন এ দুর্ঘটনা? কি কারণে তাজা প্রাণের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিচ্ছেন চালকরা। মাদক, নাকি টাকার নেশার কারণে তাদের গাড়ি চালানোয় এসব দুর্ঘটনা। এসব বিষয় নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় দূরপাল্লার গাড়ি চালক মো. মামুন হোসেনে সঙ্গে।

২৭ বছর ধরে তিনি পরিবহনের চালক হিসেবে কর্মরত আছেন। হানিফ, শ্যামলী, এসবি পরিবহনের মতো বাস চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। বর্তমানে ঢাকা-কুষ্টিয়া লাইনে জেআর পরিবহনে চালক হিসেবে আছেন মামুন।  

শনিবারের সড়ক দুর্ঘটনায় গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে ১৮ জন নিহত ও ৪০ জন আহত হন। একই দিন রংপুরে ছয়জন নিহত ও ১৩ জন আহত, গোপালগঞ্জে চারজন নিহত ও ২১ জন আহত, সিরাগঞ্জে দু’জন নিহত ও ১৫ জন আহত, নাটোরে দু’জন নিহত ও তিনজন আহত, নারায়ণগঞ্জে নিহত দুই, সাভারে নিহত এক আহত ২০, টাঙ্গাইলে নিহত হন একজন। আর সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকাতে জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভারে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন তিনজন।

এ নিয়ে মামুনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ অতিরিক্ত ট্রিপ দেওয়া। এক্ষেত্রে মালিক পক্ষের একটা চাপ থাকে। এর কারণ সব যাত্রীকে ঈদে গ্রামে নিতে হবে, আবার গ্রাম থেকে ঢাকায় আনতে হবে। সময়ের বিষয়টাও বার বার করে হিসাব করতে হয়। অনেক সময় মালিকের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে গিয়ে বিরক্ত হতে হয়। ফলে সব চালকের ক্ষেত্রেই এ সময়টা খুই কষ্টকর। ’

কেন চাপ দেওয়া হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঈদের সময় যাত্রীর বাড়তি চাপ থাকে। প্রতিটা চালকের অতিরিক্ত ডিউটি করতে হয়। আবার রাস্তায় দীর্ঘ যানজট থাকে। কখন যানজট ছাড়বে এটা লক্ষ্য রাখতে হয়। ফলে তাদের ঘুমের সমস্যা হয় ব্যাপক। ঘুম চোখেই অনেক সময় গাড়ি চালাতে হয়। আর এস কারণেই বেশিভাগ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে চালক বা পথচারীর করার কিছু থাকে না। ’

মহাসড়কে বাড়তি কোনো সমস্যায় পড়তে হয় কিনা জানতে চাইলে মামুন বলেন, ‘আমাদের দেশের মহাসড়কের অবস্থা ভালো না। কিন্তু ঈদের আগে যখন যাত্রীর চাপ বাড়ে যায় তখনই মহাসড়কের কাজ শুরু হয়। এতে চালকদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। এ কারণে অনেক সময় যানজট হয়, গাড়ি ধীরগতিতে চলে। আবার গাড়ি ধীর গতিতে চললে যাত্রীদের পক্ষ থেকেও নানা কথা আসে। এতে চালক যখনই গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেন তখন ঘটে দুর্ঘটনা। ’

অনেক সময় চালক নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালাতে যেয়ে দুর্ঘটনা ঘটায় বলে শোনা যায় এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দূরপাল্লার পরিবহনের চালকরা নেশা করে না। তারা অনেকটা টাকার নেশায় থাকেন। এ নেশা মালিকের ক্ষেত্রেও থাকে। তারা যখনই বেশি ট্রিপ মারতে যান তখনই বিপদ আসে। আর মাদক নিলে ওই চালক দূরপাল্লার গাড়ি চালাতে পারবে না। এটা হয়তো বাস-মিনিবাসের ক্ষেত্রে হতে পারে। ’

বাংলাদেশ সময়: ২২২২, জুন ২৩, ২০১৮,
ইএআর/জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।