ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কোরবানির ঈদ নিয়ে শঙ্কিত ওবায়দুল কাদের

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৫ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৮
কোরবানির ঈদ নিয়ে শঙ্কিত ওবায়দুল কাদের ওবায়দুল কাদের/ফাইল ছবি

ঢাকা: ঈদ-উল-ফিতরের সময় সড়ক ব্যবস্থাপনা নিয়ে ‘সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়’র কর্মকর্তাদের মতো ‘স্বস্তিতে’ নেই এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ কারণে আগামী কোরবানির ঈদ নিয়ে এখনই তৎপর ও শঙ্কিত তিনি। তাই দুই মাস আগেই মন্ত্রণালয়ের সব বিভাগের ছুটি বাতিল করে প্রস্তুতি চূড়ান্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ মনিটরিং সেলের তথ্য মতে, কেবলমাত্র ২৩ জুন (শনিবার) ঈদ শেষে ঢাকা ফিরতে গিয়ে বা অন্যান্য মিলে সারাদেশে নিহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। আহতের সংখ্যাও দেড়শতাধিক।


 
মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ঈদ-উল ফিতরেরে এক মাস আগ থেকেই দেশের মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের অব্যবস্থাপনা, খানাখন্দ, দুর্ভোগ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত সংবাদ মনিটরিং করতে থাকেন ওবায়দুল কাদের। সেই মোতাবেক বিভিন্নস্থানে সফর ও সড়ক-মহাসড়ক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। স্থানীয় ও তৃণমূলের প্রশাসন ও রাজনৈতিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। কিন্তু তাতে তেমন সাড়া দেয়নি তার মন্ত্রণালয়েরই বেশিরভাগ কর্মকর্তা ও সংস্থা। এ কারণেই মন্ত্রী সচল থাকার পরও বেশ ভোগান্তিতে পড়েছেন ঈদে ঘরমুখী মানুষ। আবার ঈদ শেষে ঢাকা ফিরতে হচ্ছে দীর্ঘ ভোগান্তি নিয়ে। ঘটছে বড় বড় সড়ক দুর্ঘটনাও। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন মন্ত্রী।
 
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিজের মন্ত্রণালয় ও সংস্থার ঊর্ধ্বতনরা মন্ত্রীর কাছে মিথ্যা তথ্য ও প্রতিবেদন দিয়েছেন। ঈদের দু’দিন আগ থেকেই ঢাকা থেকে রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জে সড়ক পথে যেতে অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে ১০ থেকে ১৮ ঘণ্টা। জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনায় যেতে ব্যয় হয়েছে অতিরিক্ত ছয় থেকে ১২ ঘণ্টা। ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-মাওয়া রুটেও ছিলো যানজট। অথচ ঈদ পরবর্তী পুনর্মূল্যায়ন বৈঠকে মন্ত্রীকে জাননো হয়েছে এবারের ঈদে কোনো যানজট হয়নি। অনেক প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাসায় থেকেও টেলিফোনে মন্ত্রীকে জানিয়েছেন তারা কর্মস্থলে ও রাস্তায় আছেন। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ফিটনেস বিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে নিজে থেকে উদ্যোগী হয়ে কোনো অভিযানে যায়নি। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরই বিআরটিএ অভিযানে নেমেছে। এসব নিয়ে চরম অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ওবায়দুল কাদের। একই সঙ্গে কোরবানির ঈদ নিয়ে শঙ্কায়ও পড়েছেন।
 
এরইমধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করেছেন মন্ত্রী। সেই সঙ্গে প্রয়োজনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের টেলিফোন ট্র্যাকিংয়ের উদ্যোগের কথাও জানিয়েছেন। নিজ থেকে দেশের সব সড়ক-মহাসড়ক পরিদর্শন, ঝুঁকিপূর্ণ স্থান পরিদর্শন, স্থানীয় প্রশাসন ও প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে শক্তিশালী যানজট প্রতিরোধ কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। মন্ত্রণালযের সচিব ও কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে দিয়েছেন প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও হুঁশিয়ারি। নির্বাচনী বছর হওয়ায় কোরবানির ঈদ যাতে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়, সেজন্য সবকিছু করা হবে বলেও জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
 
সড়ক পরিবহন ও সেতু সচিব নজরুল ইসলাম অবশ্য মনে করেন অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তির হয়েছে। তুলনামূলক দুর্ঘটনা, নিহত-আহতের সংখ্যাও কম। যানজট মুক্তভাবেই সারাদেশে সড়ক পথে ঈদ করতে গিয়েছেন মানুষ। যদিও সচিবের এ দাবি আমলে নেননি মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
 
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, অন্যান্যবারের মতো দুর্ভোগ হয়েছে কিনা এটা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো আমরা জনগণকে ঈদযাত্রায় কিছুটা স্বস্তি দিতে পারলেও শান্তি দিতে পারিনি। ঈদযাত্রা খুবই মসৃণ হবে, এটা জনগণও আশা করেনা। কিন্তু তাদের নিরুদ্বেগ ও শান্তিপূর্ণ ভ্রমণ উপহার দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। আমরা তা দিতে পারিনি।
 
কাদের বলেন, আগামী ২১ আগস্ট কোরবানির ঈদ। সেদিনকে সামনে রেখে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য কোরবানির পশুরহাট সড়ক- মহাসড়কের পাশে বসতে দেওয়া হবেনা।

এজন্য এখই সারাদেশের সব সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মেয়র ও নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হবে।
 
তিনি বলেন, কোরবানির ঈদ অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। এবারের ঈদে স্বস্তি দিতে পেরেছি, শান্তি দিতে তো পারিনি। অনেক কর্মকর্তা বাসায় থেকে মোবাইল ফোনে বলেছে মাঠে আছি, কাজ ভালো হচ্ছে, রাস্তায় সমস্যা নেই বলে জানান। এতে ঈদের ছুটি বাতিলের সফলতা পাওয়া যায়নি। এখন ফোন ট্র্যাক করলে জানা যায় ঠিক কে কোথায় আছেন। এসব করবেন না। ধরা পড়ে যাবেন।
 
কোরবানির ঈদ সম্পর্কে কাদের বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, বর্ষা দীর্ঘায়িত হবে। ধারাবাহিক ভারী বর্ষণ হবে। ফলে সংস্কার করা রাস্তা আবার ভেঙে যেতে পারে। নতুন রাস্তাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যেখানেই যখন সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তখনই সংস্কার করতে হবে। পরের দিনের জন্য ফেলে রাখা যাবেনা। পশুবাহী গাড়ি যেন ফিটনেস বিহীন না হয় এবং বিকল গাড়ি সরানোর জন্য ভারী রেকার যোগাড় করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার তৃণমূলের সঙ্গে বৈঠক করে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে যানজট রোধে সম্পৃক্ত করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৮
আরএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।