পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজার কার্যালয়ের তথ্যমতে মনু নদের পানি বিপদসীমার ১৮০ সেন্টিমিটার থেকে কমে বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরই সঙ্গে ধলাই নদের পানি প্রায় স্বভাবিক হয়ে আসছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী মনু নদ ও ধলাই নদীর ২৫টি স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার ৩০টি ইউনিয়ন এছাড়া কমলগঞ্জ ও মৌলভীবাজার পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার পরিবারের প্রায় দুই লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
বন্যায় প্লাবিত হয়েছে দুই হাজার ৯৬০ হেক্টর আউশ ধান। বন্যার পানির স্রোতে ও পানিতে তলিয়ে থাকায় জেলার রাস্তাঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ারসম্ভাবনা রয়েছে। তিন দশকের ভয়াবহ এই পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী এদের মধ্যে শুধু কমলগঞ্জ উপজেলায় পাঁচজন, কুলাউড়া উপজেলায় দুইজন, রাজনগরে একজন ও সদর উপজেলায় একজন মারা যায়।
মঙ্গলবার (১৯ জুন) সরেজমিনে কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পানি কমে যাওয়ায় নিজ ঘরে ফিরে তা মেরামত করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। জেলা প্রশাসন ও বেসরকারি উদ্যোগে বন্যা কবলিতদের মাঝে ব্যাপক হারে ত্রাণ তৎপরতা চালানো হচ্ছে। যাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে তারা নিজ ঘর বাসযোগ্য করার জন্য সারাদিন কাজ করছেন। অনেকে আবার প্লাবিত এলাকা পাড়ি দিয়ে নিজেদের বাড়িঘরে ফিরছেন।
তবে বাড়িঘরে ফিরলেও সেখানে রাত্রিযাপনের পরিবেশ তৈরি হয়নি। যার কারণে তারা দিন শেষে আবারও আশ্রয় কেন্দ্রেই ফিরছেন বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন।
মৌলভীবাজার পৌর এলাকার বড়হাটে বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন ইমান বাংলানিউজকে বলেন, বাড়িতে পানি উঠায় শহরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ভিটে থেকে পানি নেমেছে শুনে দেখতে আসছি। মেরামত করে বসবাসের উপযোগী করছি। কিন্তু এখানে রাত কাটানো যাবে না। পানি আরও না কমলে ঘরে থাকা যাবে না। এর কারণ অনেক রাস্তাঘাট এখনো ডুবে আছে।
বড়হাট এলাকা দিয়ে শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে পৌর শহরের তিনটি ওয়ার্ড প্লাবিত হওয়ায় মৌলভীবাজার-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের যান চলাচল বন্ধ ছিলো। যা এখন স্বাভাবিক হয়ে আসছে। রাস্তায় এখনো পানি থাকলেও দ্রুত তা নেমে যাচ্ছে। পানি কমে যাওয়াতে বাঁধটি মেরামত কাজ শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে পানি নামলেও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। মৌলভীবাজার শহর থেকে পানি গড়িয়ে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে সদর উপজেলার আমতৈল ও নাজিরাবাদ ইউনিয়নের কিছু অংশ।
পৌর মেয়র ফজলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, যে বাঁধটি ভেঙে শহরের একাংশে পানি প্রবেশ করেছিলো সেটি মেরামত কাজ শুরু করেছি। স্বেচ্ছাশ্রমে অনেকে আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন। বাঁধটি মেরামত হলে পানি দ্রুত হাওরে নেমে যাবে।
এদিকে রাজনগর উপজেলার কদমহাটা নামক স্থানে মনু নদের বাঁধ ভেঙে সিলেটসহ জেলার চারটি উপজেলার সঙ্গে জেলা শহরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও তা এখন স্বাভাবিক হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ায় ওই সড়ক দিয়ে যান চলাচল করছে। তবে বন্যার পানির স্রোতে ওই সড়কটির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বন্যার পানির শ্রোতে সড়কের অর্ধেক ভেঙে গেছে। নিচ থেকে মাটি বের হয়ে গেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিলেট সেনানিবাসের ২১ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটেলিয়নের সদস্যরা মেজর মুহাইমিন বিল্লার নেতৃত্বে সড়কটিকে যান চলাচলের উপযোগী করতে কাজ করে যাচ্ছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলার নদীভাঙন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা এলাকা পরিদর্শন করে যা দেখলাম পানি যে গতিতে কমছে তাতে বন্যা নিয়ে আর কোনো সমস্যা নেই। তবে যেসব এলাকায় ভাঙন রয়েছে তা দ্রুত মেরামত করার চেষ্টা করছি। আমরা আশা করি খুব তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৮
জিপি