ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মাঝে মধ্যে স্কুলে যায় ওরা 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২২ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৮
মাঝে মধ্যে স্কুলে যায় ওরা  ময়না, পায়েল আর আকিদ

হবিগঞ্জ: ময়না, পায়েল আর আকিদ। একই গ্রামের বাসিন্দা। তিনজনের সবাই স্কুলে পড়ে। তবে নিয়মিত নয়। পারিবারিক কাজের ফাঁকে যদি সময় হয়, তাহলেই তারা স্কুলে যায়। তাদের পরিবার থেকেও পড়ার জন্য তাগিদ দেয়া হয় না। 

হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হিলালপুর গ্রামের কৃষক পরিবারের সন্তান এরা। বিকেলে মাছ শিকারের জাল নিয়ে হাওরে যাচ্ছিল ওই তিন শিশু।

 

এ সময় বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তারা জানায়, ভাই আমরা হকলেই পড়তে চাই। তবে নিয়মিত ইস্কুলে যাইতে পারি না। পরিবারের সব কাম কইরা স্কুলে যাইবার সময় পাই না। সময় পাইলে মাইজে মাইজে (মাঝে মাঝে) ইস্কুলে যাই।

তিনজনের মধ্যে সবার বড় আকিদ। সে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। আকিদ জানায়, সে শুধু পরীক্ষায় অংশ নেয় নিয়মিত। তবে প্রতিদিন তার স্কুলে যাওয়া হয় না। কারণ মাঠে গরু চড়ানোসহ সংসারের বড়দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মাঠে কাজ করতে হয়। যেদিন কাজের চাপ কম থাকে সেদিনই সে স্কুলে যায়।  

এছাড়া ময়না আর পায়েল ২য় ও তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তাদেরও আকিদের মতো অবস্থা। পরিবার থেকেও স্কুলে যাওয়ার জন্য তাদের বলা হয় না। তবে তারা পড়াশোনা করে বড় চাকরি করতে চায়।

সরেজমিনে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, শতশত শিশুর শিক্ষাবঞ্চিত হওয়ার চিত্র। এর মধ্যে অনেক শিশু জীবনে একদিনও স্কুলের বারান্দায় যাওয়ার সুযোগ পায়নি। আবার কিছু শিশু শুরুতে স্কুলে গেলেও ১ম, ২য় এবং ৩য় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর থেমে যায় শিক্ষা জীবন। হাওরাঞ্চলের এই শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের প্রতি নজর দিতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সচেতন মহল।  

ওই এলাকার কয়েকজন কৃষক জানান, কৃষিকাজ করার স্বার্থে সবাইকে গরু পালতে হয়। আর সেই গরু চড়ানোর কাজেই তাদের শিশু সন্তানদের নিয়োজিত করতে হয় বাধ্য হন তারা। কারণ প্রাপ্তবয়স্ক একজন রাখাল রাখলে অনেক টাকা দিতে এতে তাদের পোষায় না।

হবিগঞ্জ অক্সব্রিজ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষানুরাগী শামীম আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, এ বয়সে শিশুদের লেখাপড়া না করিয়ে কাজে লাগিয়ে দেওয়া উচিত না। হাওরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে সচেতনার অভাবের কারণেই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই শিশুরা। বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগকে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ বলেন, হাওরাঞ্চলের শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষার ব্যাপারে গ্রামাঞ্চলের মানুষদের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। শিগগিরই তিনি আজমিরীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো পরিদর্শনে যাবেন বলে বাংলানিউজকে জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১২ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।