ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মাতৃভূমিতে ফিরতে মরিয়া রোহিঙ্গারা

তুষার তুহিন, স্টাফ করেসপন্ডেট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৫ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৮
মাতৃভূমিতে ফিরতে মরিয়া রোহিঙ্গারা রোহিঙ্গাদের ঈদ

কক্সবাজার: বাংলাদেশ সরকার ও এনজিও সহায়তায় ঈদে পরনে ছিলো নতুন কাপড়। বাসায় রান্না হয়েছিলো মিষ্টি জাতীয় খাবার। ঈদে কাপড় কিংবা খাবার অভাব ছিলো না। কিন্তু নিজ মাতৃভূমিতে নামাজ আদায় করতে পারেনি।

নিজ দেশ থেকেও মিয়ানমার সামরিক জান্তা সরকারের নির্যাতনের ভয়ে বাস্তুহারা জনগোষ্ঠী হিসেবে আজ ঈদ উৎসব পালন করছি কক্সবাজারে। এর চেয়ে দুঃখ-কষ্ট কী হতে পারে?

রোববার (১৫ জুন) বিকেলে ১০ মাস ধরে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রিত ৩৬ বছরের যুবক কামাল হোসেন বাংলানিউজকে এসব কথা বলেন।

 
রোহিঙ্গাদের ঈদ
কামালের কথা শেষ না হতেই একই ক্যাম্পে আশ্রিত জালাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার বয়স ২৬। সব সময ঈদের নামাজের পর বাবার সঙ্গে স্থানীয় কবরস্থানে স্বজনদের কবর জিয়ারত করতে যেতাম। কিন্তু পোঁড়া কপাল, সেই বাবাকেই নির্মমভাবে হত্যা করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তার মরদেটি কবর না দিয়েই পালিয়ে এসেছি এ দেশে। আমাদের দুধ চিনি, সেমাই কিংবা নতুন কাপড়ের দরকার নেই। আমরা চাই আমাদের দেশে শান্তি ফিরে আসুক। ফিরে যেতে চাই নিজ ভূমিতে। যেখানে শুয়ে রয়েছে বাবা ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনরা। ’

এ বিষয়ে কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গা দলনেতা জাফর আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘গত বছর ঈদ দেশে করেছি। সেখানে রাষ্ট্রীয় সুবিধা পায়নি এটা সত্যি। তবে উৎসবের আমেজ ছিলো অন্যরকম। এরপর আমাদের ওপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন। জীবন বাঁচাতে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছি। সেই থেকে আমাদের খাবার, থাকার জায়গা কিংবা পরিধেয় বস্ত্র নিয়ে চিন্তা করতে হয়নি। সবদিক দিয়েই এখানে ভালো আছি। তবে নিজ মাতৃভূমির জন্য ফেলা আসা স্মৃতির কথা মনে পড়ছে। ’

এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় ২০ জন মাঝির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিজ দেশে নিরাপদে ফিরতে ও বাংলাদেশের মঙ্গল কামনা করে ঈদের নামাজে দোয়া প্রার্থনা করা হয়েছে তারা।
রোহিঙ্গাদের ঈদ
কুতুপালং মধুরছরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি কলিমউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী আমাদের অনেক স্বজনকে হত্যা করেছে। গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে আমরা বাস্তুচ্যুত নাগরিক হিসেবে এখানে রয়েছি। কিন্তু নিরাপদ প্রত্যাবাসনের কোনো সুরাহা হয়নি। মাঝে মধ্যে শুনি আমাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু কবে নেওয়া হবে, সে বিষয়ে কারও কোনো কথা নেই।

কুতুপালং ডি-ব্লকের মাঝি আবুল কালাম বাংলানিউজকে বলেন, ফেলা আসা ভয়ংকর সেই স্মৃতি উৎসবের দিনেই বেশি মনে পড়ে। আমরা চাই না সেই স্মৃতি আমাদের শিশুদের মনেও গেথে থাকুক। তাই ঈদ উপলক্ষে কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের খেলার মাঠে শিশুদের আনন্দ দিতে বসানো হয়েছে কয়েকটা নাগরদোলা আর বেশ কয়েকটা দোকান।  

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, রোহিঙ্গাদের ঈদ উৎসবকে প্রাণবন্ত করতে সব ধরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক হাজার ২০টি মসজিদ ও ৫৪০টি মক্তবে ঈদের নামাজ আদায় করেছে রোহিঙ্গারা।
 
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, টেকনাফের ক্যাম্পের আড়াই শতাধিক মসজিদ ও মক্তবে ঈদ জামাত আদায় করেছে প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ঈদ উৎসব অনেকটা আনন্দে কেটেছে তাদের। তবে তারা নিজ দেশে ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন। যতো দ্রুত সম্ভব তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন শুরু করা দরকার।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৩৫৫ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৮
টিটি/জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ