পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য মতে, রোববার (১৭ জুন) সন্ধ্যা পর্যন্ত মনু নদের পানি কমে গিয়ে বিপদসীমার ১৩৬ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। যা গতকাল পর্যন্ত বিপদসীমার সর্বোচ্চ ১৮০ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হয়েছিল।
তবে মনু নদের পানি দ্রুত কমতে থাকলেও বাঁধ ভেঙে শহরের একাংশে প্রবাহিত পানি এখনো নিম্নাঞ্চল প্লাবিত করছে। ফলে নতুন করে পানিবন্দি হচ্ছে অনেক পরিবার।
ইতোমধ্যে পৌরসভার বড়হাট, বারইকোনা, যোগীডর, ধরকাপন, বড়কাপন, গোবিন্দ্রশ্রী, খিদুরসহ পৌরসভার ৬,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড পানিবন্দি হয়েছে। এছাড়া সদর উপজেলার মোস্তফাপুর, আমতৈল, কনকপুর, ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
জানা যায়, শুক্রবার (১৬ জুন) মধ্য রাতে পৌরসভার বারইকোনা এলাকায় মনু’র প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে শহরের বড়হাট ও কুসুমবাগ এলাকা প্লাবিত হয়। এর পর সে পানি পৌরসভার ৩টি ওয়ার্ড ও সদর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়ে। এতে শহর ও শহরতলীর বাসাবাড়ি প্রায় ৫ ফুট পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে ঘর বাড়ি ছেড়ে ঢলের পানি ঠেলে মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেন। অধিক প্লাবনে আক্রান্ত হয় প্রায় ৫ হাজারের বেশি পরিবার।
সরেজমিনে দেখা যায়, মনু নদের পানি কমতে থাকলেও নতুন করে শহরের মোস্তফাপুর রোড, পাগুলিয়া রোড, ঢাকা বাসস্ট্যান্ড, সদর হাসপাতালের সামনে দিয়ে পানি বাড়ছে। ফলে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে বাসাবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিচ্ছেন। এর আগে কুসুমবাগ এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বিকেল পর্যন্ত গরু-বাছুরসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল নিয়ে ভ্যান ও নৌকায় করে এলাকা ছাড়ছেন পানিবন্দিরা।
মোস্তফাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আমজাদ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সারাদিন অনেকটা নিশ্চিন্তে ছিলাম যে- পানি হাওরের দিকে চলে যাবে। কিন্তু বিকেল হতেই পানি শহরমুখী হয়েছে। এখন ঘরে হাঁটুজল দেখা দিয়েছে। তাই মালামাল মিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছি।
এদিকে বন্যার পানিতে রাস্তা ডুবে যাওয়ায় মৌলভীবাজার জেলা শহরের সঙ্গে সিলেট বিভাগীয় শহর ও জেলার ৪টি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ এখনো স্বাভাবিক হয়নি। অতিরিক্ত পানি প্রবাহ ও স্রোত থাকায় মৌলভীবাজার-সিলেট রোডের বড়হাট এলাকায় গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে শুক্রবার থেকে মৌলভীবাজার কুলাউড়া সড়কের রাজনগর উপজেলার কদমহাটা এলাকায় একই কারণে রাস্তা বন্ধ রাখা হয়েছে।
বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিকেলে প্রেস ব্রিফিং করে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, শহরে যারা পানিবন্দি হয়েছিলেন তাদের নৌকা ও স্পিডবোট দিয়ে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার করেছে। আমরা তাদের জন্য ৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দিয়েছি। সেখানে এনে তাদের শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। রোববার থেকে সরকারি ত্রাণ দেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৮
আরএ