ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অনাথের চিহ্ন মুছে দিচ্ছে এসওএস শিশু পল্লি

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০০ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৮
অনাথের চিহ্ন মুছে দিচ্ছে এসওএস শিশু পল্লি এসওএস পল্লির শিশুরা-ছবি-জিএম মুজিবুর

ঢাকা: অনাথ শব্দ শুনলেই এক ধরনের অসহায়ত্ব প্রকাশ পায়। অনাথ শুনলেই মনে হয় তার মতো অভাগা দুনিয়াতে কেউ নেই। বাস্তবতাও তাই। তবে অনাথ শিশুরাও যে সঠিক পরিচর্যা পেলে এগিয়ে যেতে পারে তা দেখিয়ে দিয়েছে এসওএস শিশু পল্লি।

বাইরে থেকে বোঝা যাবে না ভেতরে অনাথ শিশুরা থাকে। মিরপুর রোডের শ্যামলীতে ২ দশমিক ৫৮ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা এসওএস শিশু পল্লিতে ১৫৪ জন অনাথ শিশু বড় হচ্ছে মাতৃস্নেহে।

এসব শিশুদের কেউ কেউ দুই মাস আবার কেউ জন্মের পরেই বাবা-মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আশ্রয় নিয়েছে এই শিশু পল্লিতে। কেউ আবার হয়তো বড় কোনো দুর্ঘটনায় বাবা-মা হারিয়ে আশ্রয় পেয়েছে শিশু পল্লিতে।
 
তবে এসওএস শিশু পল্লির সদস্যদের দেখলে বোঝা যাবে না এরা অনাথ বা তাদের বাবা-মা নেই। শিশু পল্লির ভেতরের পরিবেশ ও তাদের দেখলে মনে হবে নিজ গৃহেই বড় হচ্ছে এক একটি শিশু।  

এসওএস শিশু পল্লিতে রয়েছে তিনটি পাড়া-ছবি- ছবি-জিএম মুজিবুর এসওএস শিশু পল্লিতে তিনটি পাড়া রয়েছে। প্রতিটি পাড়ায় পাঁচটি করে ঘর রয়েছে। প্রত্যেক ঘরে একজন করে মা’র তত্ত্বাবধানে বড় হচ্ছে আট-নয়জন শিশু।
 
এরা ভিন্ন মায়ের গর্ভে জন্ম নিলেও বড় হচ্ছে এক মায়ের তত্ত্বাবধানে। ভিন্ন জায়গা থেকে আসলেও এখানে এসে সবাই ভাইবোনের মতো করেই গড়ে উঠছে। পুরো শিশু পল্লির ভেতরটা ঘুরলে মনে হবে এটা কোনো অনাথ আশ্রম নয় বরং পরিচ্ছন্ন, পরিকল্পিত একটি গ্রাম।
 
ভেতরে সারি সারি আম গাছ, মাঝে ফুল গাছ, পেয়ারা গাছসহ বিভিন্ন ফল, ফূলের বাগান। গাছের আমগুলো পেকে নিচে পড়ছে, আবার বাদুরে খেয়ে ফেলে গেছে গাছের নিচে। কেউ কুড়ানোর নেই।  

একজন মা’র তত্ত্বাবধানে বড় হচ্ছে শিশুরা- ছবি-জিএম মুজিবুর
শিশু পল্লির ভেতরে এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যাওয়ার পথগুলোও সেমি পাকা। দুই তলা, তিনতলা ভবনে একটি করে পরিবার বসবাস করছে। এখান থেকে অনেক শিশু এখন সমাজের উচ্চ আসনে বিচরণ করছে।
 
শিশু পল্লিতে বেড়ে ওঠা এক নারী এখন উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজের এনাটমি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর। ফ্রান্সিস পালমা নামের একজন স্কলারশিপ নিয়ে এখন কানাডা প্রবাসী। এরকম অনেকেই এখন বিভিন্ন দায়িত্বশীল জায়গায় কাজ করছেন।
 
ঈদের দিন অন্য মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা যতটুক সুযোগ-সুবিধা পান তার পুরোটাই পাচ্ছে এসওএস পল্লির শিশুরা। ঈদ উপলক্ষে প্রত্যেককে তাদের চাহিদা অনুযায়ী নতুন পোশাক দেওয়া হয়েছে। ঈদের দিন প্রত্যেক ঘরেই মাংস, পোলাও, সেমাই ও ভুনাখিচুরি রান্না হয়েছে।
 
সোনালি পাড়ার সোনালি ঘরের মা সাবেরা সুলতানা নয় শিশুকে বড় করছেন নিজ স্নেহে। প্রত্যেক ঘরে বড় ছেলের রুমটা রাখা হয়েছে মায়ের রুমের সঙ্গে। আর বড় মেয়েদের রুম দোতলা, তিনতলায় রাখা হয়েছে। প্রতিটি ঘরে ছেলেমেয়েদের জন্য পৃথক রুম রয়েছে।
 
এসওএস শিশু পল্লির প্রকল্প পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাচ্চাদের মায়ের স্নেহে বড় করছি। এখানে প্রতিটি বাচ্চা তার লালন পালনকারী মাকে মা বলেই ডাকে। ওরা বাইরে কোথাও গেলে মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই বের হয়। আমরা একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের যে যে সুবিধা একটা বাচ্চা পায় তার পুরোটাই দেওয়ার চেষ্টা করি। এখান থেকে বড় হয়ে এখন বিসিএস কর্মকর্তা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সেনা কর্মকর্তা হয়েছেন। আমাদের ভিশনই হচ্ছে মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।
 
এসওএস শিশু পল্লির ভেতরের শিশুদের দেখা গেছে, কেউ সাইকেল নিয়ে ঘুরাঘুরি করছেন তো কেউ আবার খুনসুঁটি করছেন একে অপরের সঙ্গে। মাঝে মাঝে নিজেদের মধ্যে ছোটখাটো ঝগড়াও হয়। সবাই গ্রামের পরিবেশে বড় হচ্ছে।
 
এসওএস শিশু পল্লিতে সোনালি পাড়ায় রয়েছে-সোনালি ঘর, রুপালি, পূবালি, কাকলি, শ্যামলী, মমতা পাড়ায় রয়েছে-মমতা, সমতা, সততা, জনতা, একতা আর দিশারী পাড়ায়-দিশারী, রুপসি, মায়াবি, জোনাকি ও সন্ধানি ঘর।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৯ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৮
এসএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad