ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মা, ছুটি পেলে আসতে পারি!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৩ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৮
মা, ছুটি পেলে আসতে পারি! ইউসুফ হোসেন। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ২২ বছরের চাকরি জীবনে মাত্র একবার গ্রামে গিয়ে ঈদ করেছি। প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগতো, এখনও কিছুটা কষ্ট হয়, তবে মেনে নিয়েছি।

দেশের প্রায় সব মানুষেই যখন ঈদের জামাত পড়ে আনন্দে মেতে উঠেছে, ঠিক তখন রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাজধানীর রাস্তায় দায়িত্ব পালন করছেন ট্রাফিক পুলিশ ইউসুফ হোসেন। ঈদের দিনে ডিউটি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করতেই মলিন হাসি দিয়ে এমন মন্তব্য করেন।



ইউসুফ হোসেন বলেন, সবাই গ্রামে যেতে চাইলে এই ঢাকা দেখবে কে। কারো কারো আনন্দের জন্য নিজের আনন্দ উৎসর্গ করতে পারছি এটাই বা কম কিসে।
 
বৃদ্ধা মায়ের জন্য মনটা কাঁদে কিন্তু কিছুই করার নেই। প্রত্যেকবারেই চিন্তা করি আগামী ঈদে গ্রামের বাড়ি যাবো। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও ঈদের দিনে গ্রামে যাওয়ার সুযোগ হয় না। ঈদের দিনে যখন বন্ধুরা গ্রামে গিয়ে ফেসবুকে নানা রকম ছবি পোস্ট করে, তখন বুকের মধ্যে হাহাকারটা বেড়ে যায় বলে জানান তিনি।
 
পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার মধ্যভাণ্ডারিয়া গ্রামের বাসিন্দা ইউসুফ ১৯৯৭ সালে রংপুর পুলিশ লাইন দিয়ে কর্মক্ষেত্র শুরু করেন। সেখানে আড়াই বছর ছিলেন। এরপর রাঙ্গামাটি পুলিশ লাইনে দায়িত্বপালন করেন প্রায় তিন বছর। বদলি হয়ে যান বরিশাল পুলিশ লাইনে।
 
২০০৫ সালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে বদলি হয়ে আসেন। ২০০৯ সালে ট্রাফিক বিভাগে কাজ শুরু করেন। এই চাকরিকালীন সময়ে শুধু রাঙ্গামাটিতে থাকতে (প্রায় ১৯ বছর আগে) সর্বশেষ গ্রামে গিয়ে মায়ের সঙ্গে ঈদ করেছেন। এরপর আর গ্রামে গিয়ে ঈদ করার সুযোগ হয়নি। তবে মায়ের জন্য কেনাকাটা অথবা টাকা পাঠিয়েছেন প্রতিবারেই।
 
বাবা প্রয়াত, বৃদ্ধা মা প্রতিবছরেই বাড়িতে ঈদ করার জন্য অনুরোধ করেন। প্রত্যেকবারেই মাকে বলে রাখেন ছুটি পেলে আসতে পারি। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠে না। হয়তো জোর করে ছুটি চাইলে পেয়ে যাবেন। একবার তার এক বস ছুটি দিয়েছিলেন। কিন্তু আরেকজন কলিগের আবেদনে সাড়া দিয়ে তার আর গ্রামে যাওয়া হয়নি।
 
বন্ধুটির বাবা ছিলেন অসুস্থ। যদি ইউসুফ হোসেন বাড়ি যেতেন তাহলে তার সেই বন্ধুর বাড়ি যাওয়া স্থগিত করতো প্রশাসন। তাই নিজের থেকেই বলে দিয়েছিলেন, স্যার আমার ছুটি লাগবে না, ওকেই ছুটি দিয়ে দেন। সেই থেকে নানান কারণে আর ছুটি পাওয়া হয়ে ওঠেনি। এতে তার কিছুটা কষ্ট রয়েছে কিন্তু মেনে নিয়েছেন নিয়তি হিসেবে। কখনও কখনও খানিকটা গর্বও হয় নিজেকে রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে।
 
শুধু ইউসুফ হোসেন নয়। এ রকম হাজারো পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা বছরের পর বছর নিজের আনন্দ জলাঞ্জলি দিয়ে যাচ্ছে। যার বিনিময়ে অন্যদের ঈদের আনন্দ নিরবচ্ছিন্ন হচ্ছে। তাদের এই বিসর্জনকে আমরা কতটুকু মনে রাখি। নাকি শিউলি ফুলের মতো রাতের আঁধারে ফুটে ভোরের সূর্য ওঠার আগেই মিলিয়ে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৭ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৮
এসআই/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।