ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ফুলগাজী-পরশুরামে বানবাসীদের পানিবন্দি ঈদ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০২ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৮
ফুলগাজী-পরশুরামে বানবাসীদের পানিবন্দি ঈদ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফেনী: ঈদগাহে হাঁটুপানি। বসতঘরেও কোমর পরিমাণ। ঈদের আনন্দতো দূরের কথা বরং পানিবন্দি অসহনীয় দুর্ভোগে কাটছে ঈদের দিনটি। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার প্রায় গ্রামের মানুষের ঈদ আনন্দের পরিবর্তে ঝরছে চোখের পানি। বানের পানিতে সর্বস্ব হারিয়ে চরম হাহাকার বিরাজ করছে তাদের মধ্যে।

চারদিকে থৈ থৈ পানি। হাজার হাজার মানুষ আটকে আছেন পানিতে।

কেউ কেউ চলে গেছেন স্বজনদের বাড়িতে। এবারের ঈদের আনন্দ নেই এ দুই উপজেলার বন্যা কবলিত গ্রামগুলোতে। এসব এলাকার অধিকাংশ ঈদগাহসমূহ এখন পানির নিচে।

খবর নিয়ে জানা যায়, বন্যা কবলিত প্রতিটি বাড়িতে আটকে আছেন বানবাসীরা। কোথাও যেতে পারছেন না। অনেক পরিবার চলে গেছেন স্বজনদের বাড়িতে। নিজেদের ঘরগুলো পড়ে আছে অরক্ষিত। কেনাকাটা বলতে কিছুই হয়নি বন্যা কবালিত মানুষগুলোর।

পরশুরামের রতনপুর গ্রামের আশফাক নামে একজন জানান, মঙ্গলবার (১২ জুন) রাত থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হলেও এসব গ্রামগুলোতে তখনও পানি প্রবেশ করেনি। কিন্তু বুধবার (১৩ জুন) গভীর রাত থেকে পানির তোড়ে এসব গ্রাম ভেসে যায়।

বানবাসীরা জানান, ঈদের দিনের জন্য সামান্য সেমাই চিনিও তারা কিনতে পারেননি। নতুন জামা কাপড়তো দূরের কথা। ছবি: বাংলানিউজফুলগাজীর বসুমিয়া সওদাগর বাড়ির আবদুস সালাম স্থানীয় শ্রীপুর রোডের আশরাফিয়া মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। একই প্রতিষ্ঠানে পড়ছে রাশেদ ও মামুনুর রশিদ। তারা জানায়, এখনো কোনো জামা-কাপড় কেনা হয়নি। কেউ কোনো খোঁজও নিতে আসেননি। তারা বলে, এবার ঈদের নামাজ কোথায় হবে সেটাই বুঝতে পারছি না। আমাদের মনে ঈদের কোনো আনন্দ নেই। কোমর পানিতে এদিক-ওদিক হাঁটছিল ওরা।  

এক সময় প্রবাসে ছিলেন ফুলগাজীর শেখ মোজাম্মেল হোসেন স্বপন। এখন দেশেই আছেন। ফেনীতে ব্যবসা করলেও নিয়মিত গ্রামেই থাকেন। তিনি বলেন, প্রতিবছরই আমরা এভাবে বন্যায় কষ্ট পাই। এর স্থায়ী সমাধান দরকার।

স্বপন বলেন, গোটা এলাকা বন্যা কবলিত। এখনো কোনো জনপ্রতিনিধি বা নেতা সাহায্য নিয়ে আসেননি।

বানবাসীদের অনেকে অভিমান করে বলেন, এটাই আমাদের নিয়তি। আমাদের বাপ-দাদারাও বন্যায় কষ্ট করেছেন। আমরাও করছি। হয়তো আমাদের সন্তানদেরও এই কষ্ট মেনে নিতে হবে।

জেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী পরশুরাম উপজেলার ২০ গ্রামে ২২ পরিবার ও ফুলগাজী উপজেলার ১৯ গ্রামে ৩ হাজার ৫শ’ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ওই দুই উপজেলার সর্বমোট ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা সাড়ে ৩১ হাজার মানুষ।

ফেনী জেলা প্রশাসক মনোজ কুমার রায় বলেন, ফুলগাজী ও পরশুরামের মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং বন্যার পানি কমছে এখন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিনরাত কাজ করছেন এবং তদারকি করছেন। এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ডেউটিনের ঋণ মঞ্জুর করেন। বরাদ্ধ করা হয়েছে দুই মেট্রিক টন চাল। চাহিদা পেলে আমরা আরো কার্যক্রম করবো। প্রতিনিয়তই আমরা খবর নিচ্ছি।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডর নির্বাহী প্রকৌশলী কোহিনুর আলম বলেন, মুহুরী একটি আন্তঃদেশীয় নদী। চিন্তা করে নতুনভাবে রিহ্যাভিলিটিশন করতে হবে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড মোরামত করার প্রকল্প ইতোমধ্যে কমিটির মাধ্যমে রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে। পরবর্তী ডিটেইল স্টাডির কাজ চলছে। আমি আশা করছি, ওই প্রকল্প নিলে এ সমস্যাগুলোর সমাধান হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৮ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৮
এসএইচডি/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।