ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বাবার হাতটা ধরে..

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৩ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৮
বাবার হাতটা ধরে.. ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল/ বাংলানিউজ

ঢাকা: ‘ঈদের দিন সকালে বাবা কাঁধে করে নদীতে গোসল করতে নিয়ে যেতেন। সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে দিতেন। তারপর বাড়িতে এসে নতুন জামা-প্যান্ট পরিয়ে ঈদের নামাজ পড়তে নিয়ে যেতেন ঈদগাহে। বাবার হাত ধরে রাস্তায় হাটতাম। তখন ৫ টাকা করে রঙিন চশমা পাওয়া যেতো। সে চশমা পরলে সমান জায়গাও উঁচু-নিচু মনে হতো। দারুন ভাব নিয়ে বাবার হাত ধরে হাঁটতাম। মনে হতো, আমি সদ্য কোনো দেশের রাজ কুমার।’

বাবার সঙ্গে ঈদ উদযাপনের স্মৃতিচারণে এমনটাই বলছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাকিম মাহি। শুধু কি মাহি? ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে ঈদগাহে যাওয়া আর একসঙ্গে দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ আদায় করার পর তাকে বুকের সঙ্গে খুব শক্ত করে জাপটে ধরে কোলাকুলির স্মৃতি নেই, এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে।

শনিবার (১৬ জুন ) ঠিক তেমনি এক রাজকুমারের বেশেই পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে বাবার হাত ধরে জাতীয় ঈদগাই ময়দানে এসেছে ধানমন্ডি একটি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফারহান। বাবার কিনে দেওয়া নীল পাঞ্জাবির সঙ্গে সে মিল করে পরেছে নিজের পছন্দ করা গাঢ় নীল রঙের টুপি। ছোট্ট হাতের মুঠোয় বাবার হাতের আঙুলগুলো জড়িয়ে নিয়ে হাসিমুখের বায়না- বাবা, নামাজ শেষ করেই কিন্তু শিশুপার্কে যাবো!

মাথায় লাল ফুল আঁকা টুপি আর হলুদ রঙের একটা পাঞ্জাবি পরেছে শিহাব। বাবার কোলে চড়ে নিজের খুনসুঁটির যেনো শেষ নেই। প্রথমবার ঈদের মাঠে এসে এতো মানুষের ভিড়ে এই এক বছরের খোকাটা নিজেকে যেনো আবিষ্কার করেছে নতুন আলোয়। আর, একটু সুন্দর বললেই বাবার পেছনে ঝটপট লুকিয়ে পড়া শোয়েব পেছন থেকেই বলে, ঈদগাহে এসে আমার খুব ভালো লাগছে। বাবার সঙ্গে নামাজ পড়বো, কোলাকুলি করবো আর পার্কে ঘুরে বাড়ি গিয়ে আম্মুর হাতে সেমাই খাবো!

ঈদে হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য এক অংশ হিসেবে মিশে রয়েছে এই ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা। ঈদের প্রকৃত আনন্দটা মূলত তাদেরই। সকালে গোসল করা, নতুন জামা পরা আর তারপর বাবার হাত ধরে ঈদের নামজ আাদায় করা ও কোলাকুলি সহ তাদের আনন্দ মিশে আছে ঈদ সেলামিতে।

এবার ঈদগাহে কেউবা প্রথম, আবার কেউবা দু’বার এলো। নিজস্ব ধর্মীয় সংস্কৃতি ছোট্ট মনে গেঁথে নেওয়াটাই যেনো তাদের আনন্দ। আর আনন্দকে তারা পুরোপুরি জেনে নেয় পরিবারের কাছ থেকে। বাবার হাত ধরে ঈদগাহে আসতে আসতে।

কথা হয় একটি বেসরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক হামিদুল ইসলামের সঙ্গে। ১০ বছর বয়সী ছেলে রোহানকে সঙ্গে নিয়ে তিনি এসেছেন ঈদের নামাজ আদায় করতে।

বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ঈদ মানে খুশি। ঈদগাহে নামাজ পড়তে যাওয়া শুধু ঈদের একটি ধর্মীয় অনুশাসনই নয় বরং খুশির একটি বাড়তি আয়োজন। সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার পর সন্তানের হাত ধরে ঈদগাহ মাঠে যাওয়া, তাকে পাশে নিয়ে নামাজ আদায়, কোলাকুলি করা, সবার সঙ্গে পরিচয় করা ও ঈদ সেলামি দেওয়ার মধ্য দিয়েই খুশি পরিপূর্ণতা লাভ করে। এ এক অন্য রকম অনুভূতি। তা যেনো ঠিক ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৮
এইচএমএস/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।