ঘরে এখনো হাঁটুপানি আর কাদা, দু’মুঠো খেয়ে যে শেষ রোজার সাহরি সারবে তারও কোনো অবস্থা নেই, গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণের প্লাবন সব ভাসিয়ে নিয়েছে। এমন অসহায় অবস্থায় দিন-রাত কাটাচ্ছেন ফেনীর পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের দূর্গাপুর ও রতনপুর গ্রামবাসীরা।
শুধু এ দুটি গ্রাম নয় এ প্লাবনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার ৪২ গ্রামের প্রায় সাড়ে ৩৫ হাজার মানুষ। বুধবার (১৪ মে) বিকেলে ও দূর্গাপুর গিয়ে বাংলানিউজের কথা হয় দুর্গতদের সঙ্গে।
বেলার হোসেনের (৬০) নামে এক বাসিন্দা জানান, মঙ্গলবার রাতে তিনি তারাবীহর নামাজ পড়ে এসে দেখেন তার ঘরে বুক পরিমাণ পানি। বেগতিক অবস্থায় খোলা আকাশের নিচেই পার করতে হয়েছে রাত। এখন পানি কিছুটা কমতে থাকলেও দুর্ভোগ কমছেনা ছিটে ফোঁটাও, ঘরের মেঝেতে জমে আছে হাঁটু পরিমাণ কাদা। ঘরের আসবাবপত্র, চাল, ডাল সব ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ায় কাটাতে হচ্ছে উপোস।
ইউসুফ নামে একজন জানান, বন্যায় ভিটে মাটি আসবাবপত্র সবই গেছে। সাহরি-ইফতার ছাড়াই পার করেছেন শেষ দুই রোজা। ছেলে মেয়েগুলো এবারের ঈদে আনন্দ তো দূরের কথা, না খেয়েই থাকতে হবে। আনোয়ার হোসেন নামে ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা জানান, তার পাঁচটি পুকুরে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মাছ ছিল। বন্যায় তা সব মাছই ভেসে যায়। এখন সে পথের ফকির প্রায়। ঈদের আনন্দ তো দূরের কথা চোখের পানি ধরে রাখাই দায় হয়ে রয়েছে।
গত কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মুহুরি-কহুয়া নদীর বেড়িবাঁধের ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় মোট ১৪ স্থানে ভাঙনে দুই উপজেলার ৪২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ধীরে ধীরে পানি কমতে শুরু করলেও আসন্ন ঈদুল ফিতর উদযাপন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে গ্রামগুলোর হাজার হাজার মানুষ।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে থেকে বানবাসি মানুষের জন্য শুকনো এবং রান্না করা খাবার সরবরাহ করলেও দুর্গত এলাকার মানুষ চায় স্থায়ী বাঁধ।
তারা জানায়, পাহাড়ি ঢলে তাদের ভিটে মাটি সব নিয়ে যায়, যেসব ঘর টিকে আছে তার আসবাবপত্র ও খাবারের পণ্য সামগ্রীও জলে ভেসে নিদারুন কষ্টে জীবন কাটছে তাদের।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানায়, বন্যায় তাদের ঘরবাড়ি, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ সব ধরনের গবাদি পশু ও খাবারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে পকুরের মাছ ও জমির ফসল। তারা বলছেন চিড়া-মুড়ির সাময়িক সহযোগিতা নয় প্রয়োজন স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ।
জেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী পরশুরাম উপজেলার ২০ গ্রামে ২২ পরিবার ও ফুলগাজী উপজেলার ১৯ গ্রামে ৩ হাজার ৫’শ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ওই দুই উপজেলার সর্বমোট ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা সাড়ে ৩১ হাজার মানুষ।
ফেনী জেলা প্রশাসক মনোজ কুমার রায় বলেন, ফুলগাজী ও পরশুরামের মানুষ চরমভাবে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বন্যার পানি কমছে এখন।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিন-রাত কাজ করছেন এবং তদারকি করছেন। আমরা এখন পর্যন্ত ক্ষতিস্ত এলাকায় ঢেউটিনের ঋণ মঞ্জুর করেন। বরাদ্দ করা হয়েছে দুই মেট্রিক টন চাল। চাহিদা পেলে আমরা আরো কার্যক্রম করবো। প্রতিনিয়তই আমরা খবর নিচ্ছি।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কোহিনুর আলম বলেন, মুহুরী একটি একটি আন্তদেশীয় নদী। এখন চিন্তা করে নতুনভাবে রিহ্যাবিলিটেশন করতে হবে। সেলক্ষে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড মোরামত করার প্রকল্প ইতোমধ্যে কমিটির মাধ্যমে প্রতিবেদন দাখিল কলা হয়েছে। পরবর্তী ডিটেইল স্টাডির কাজ চলছে। আমি আশা করছি ওই প্রকল্প নিলে এ সমস্যাগুলোর সমাধান হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৮
এসএইচডি/এএটি