পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে রাতে আরও পানি বাড়লে শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করতে পারে।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুন) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে দেখা যায়, শহরের সাইফুর রহমান রোডের মনু প্রতিরক্ষা বাঁধের ১৬টি স্থান দিয়ে চুঁইয়ে শহরে পানি প্রবেশ করছে।
সাইফুর রহমান রোডের একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিরক্ষা বাঁধের উপর এই রোডে প্রায় শতাধিক দোকান রয়েছে তার মধ্যে বেশিরভাগ অনেক পুরাতন স্থাপনা। নদীর পানি আর বাড়তে থাকলে যেকোন সময় বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
খেয়াঘাট এলাকার ব্যবসায়ী মানিক লাল রায় বলেন, পানি একটু একটু করে নদ থেকে রাস্তায় গড়িয়ে যাচ্ছে। আমাদের দোকানে ঢুকছে। বাঁধ ভেঙে গেলে সারা শহর ডুবে যাবে।
নাইক ফ্যাশনের স্বত্ত্বাধিকারী সুলতান আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ২ দিন থেকে বাঁধ চুঁইয়ে পানি বের হচ্ছে। আজ সন্ধ্যার পর থেকে ব্যাপক হারে শহরে পানি প্রবেশ করছে। পানির স্তর শহরের অনেক উপরে রয়েছে। অনেক পুরাতন বাঁধ এটি সুতরাং কখন কি হয় বলা মুশকিল।
একই রোডের ব্যবসায়ী বিমলেন্দু সোম বাংলানিউজকে বলেন, বাঁধের পাশেই আমার বসত ঘর। ঘরের ভেতর বিকেল পর্যন্ত হাঁটু জল ছিল। সন্ধ্যার পর থেকে হু হু করে জল বেড়ে কোমর পর্যন্ত হয়েছে। বিগত ১০ বছরে এরকম পানি হয়নি।
এদিকে, উজানের পানি নিচ দিয়ে দ্রুত বেগে নামার ফলে শহর ও শহরতলীর আরো ৮টির বেশি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সব থেকে ঝুঁকিতে রয়েছে সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট, দুর্লভপুর ও কসবা এলাকা।
এছাড়া উপজেলার কামালপুর থেকে মোমরুজপুর পর্যন্ত কয়েকটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। ইতোমধ্যে চাঁদনীঘাট থেকে মনুব্যারেজ পর্যন্ত প্রতিরক্ষা বাঁধের উপর অবস্থিত সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন এলাকাবাসী। এই এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ নিচ দিকে অনেকাংশ ধেবে গেছে। স্থানীয়রা বাঁধটি টিকিয়ে রাখার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। একই অবস্থা কসবা এলাকায়। স্থানীয়রা রাত জেগে বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
পাউবোর কর্মকর্তারা বলছেন, এর আগে মনু নদে সর্বোচ্চ বিপদসীমা ১৮০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার রেকর্ড হয়েছে। যা বিগত ১১ বছরের সর্বোচ্চ পানি প্রবাহ ছিল। তবে শহরের অংশে পানি কম ছিল। মনুর কয়েকটি ভাঙন দিয়ে পানি গ্রামাঞ্চল প্রবাহিত হওয়ার পর সে পানি পুনরায় নদে পড়ছে। ফলে নদীর পানি উজান থেকে নেমে নিম্নাঞ্চলে প্রভাব ফেলছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বাংলানিউজকে জানান, রাত ৯টা পর্যন্ত পানি বিপদসীমার ১১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সাইফুর রহমান রোডের গার্ড ওয়াল পুরাতন হওয়াতে বিভিন্ন ফাঁক দিয়ে পানি ঢুকছে। ইতোমধ্যে ডিসি, এসপি, মেয়র ও স্থানীয় ব্যক্তিবর্গসহ এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। পানি আরও বাড়লে শহর রক্ষায় বিকল্প কিছু ভাবা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৯ জুন ১৫, ২০১৮
আরএ