ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

৫ মাসে ঢাকায় পাঁচ হাজারের বেশি মাদক মামলা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৫ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৮
৫ মাসে ঢাকায় পাঁচ হাজারের বেশি মাদক মামলা প্রতীকী ছবি।

ঢাকা: সরকার দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে মাদকের বিরুদ্ধে। এছাড়া মাদকের বিস্তার রোধে বেশ কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গত ৫ মাসে রাজধানী ঢাকায় ৫ হাজারের বেশি মাদকের মামলা হয়েছে।

এই হিসেবে প্রতি মাসে এ সংখ্যা দাঁড়ায় এক হাজারেরও বেশি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভিযানে হাজার হাজার মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবীকে আটক করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এদের বেশির ভাগকেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্যের তথ্যমতে, এরই মধ্যে রাজধানী ঢাকার চিহ্নিত শীর্ষ ১১ মাদক বিক্রেতাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।  

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান নিয়মিত চলছে। গত কয়েকদিন রাজধানীর বেশ কয়েকটি বস্তিতে অভিযান চালানো হয়েছে। যেসব বস্তিতে শত শত কোটি টাকার মাদক কেনা-বেচা হয়, সেগুলোতে অভিযান চালিয়েছি। অনেককে আমরা আটক করেছি। যাকে-ই আটক করছি তাদের প্রত্যেকের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে তারপর গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। নির্দোষ হলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

‘আমাদের কাছে ঢাকা মহানগরে মাদক বিক্রেতাদের তালিকা রয়েছে। শীর্ষ মাদক বিক্রেতাদেরও তালিকা আছে। সেগুলো দেখে দেখে আমরা অভিযান চালাচ্ছি। এই অভিযানের আগে ও পরে তাদের গ্রেফতার করা হয়। কেবলমাত্র জানুয়ারি থেকে গত ২৭ মে পর্যন্ত রাজধানীতে ৫ হাজার ৩০০ মাদকের মামলা হয়েছে। ’

এদিকে গত মঙ্গলবার (১২ জুন) সকাল ছয়টা থেকে বুধবার (১৩ জুন) সকাল ছয়টা পর্যন্ত মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন থানা এলাকায় ৪৯ জনকে আটক করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, আটকরা মাদক বিক্রি ও সেবনের সঙ্গে জড়িত। ডিএমপির বিভিন্ন থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) যৌথভাবে কয়েকটি এলাকায় এ অভিযান চালায়।

ডিএমপির গণমাধ্যম শাখা সূত্র জানায়, অভিযানে আটক ৪৯ জনের কাছ থেকে ৫ হাজার ৯৮৯টি ইয়াবা ট্যাবলেট, ১ কেজি ১৩৬ গ্রাম হেরোইনের ৬৬৪টি পুরিয়া, ৯৫০ গ্রাম গাঁজা, ২৭৫ বোতল ফেনসিডিল, ৭২ ক্যান বিয়ার ও ৮০টি নেশাজাতীয় ইনজেকশন জব্দ করা হয়। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৫১টি মামলা করা হয়েছে।

গত ২৪ মে ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে গত তিন সপ্তাহে ধারাবাহিক অভিযান চালাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, মাদকের সঙ্গে জড়িত কাউকেই আমরা ছাড় দেবো না। কাউকে মাদক বিক্রি করতে দেবো না। সেটা আমার দলের জনপ্রতিনিধিই হোক বা অন্য কেউ-ই হোক।

‘চলমান অভিযানে অনেকেই সরকারের সমালোচনা করছেন। কিন্তু তারা জানেন না, দেশের কারাগারগুলোর ধারণক্ষমতা ৩৫ হাজার হলেও সেখানে এখন ৮৫ হাজারের বেশি মানুষ আটক আছে। যার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই মাদক মামলার আসামি। ’

অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৮০ লাখ বলা হলেও খণ্ডকালীন বা শখের মাদকাসক্তসহ এই সংখ্যা দেড় কোটি বলে ধারণা করেন বিশেষজ্ঞরা। কেবল মাত্র ৮০ লাখ মাদকাসক্তেরই মাদকের পেছনে গড় ব্যয় বছরে আড়াই লাখ টাকা করে বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা। আর এইসব মাদকাসক্তের পুসর্বাসনের পেছনে তাদের পরিবারের খরচ হয় আরো ১০ হাজার কোটি টাকা।

সারাদেশে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মাদক বিক্রেতা রয়েছে। যারা মাদকসেবীর হাতে নানা মাদক পৌঁছে দিচ্ছে। যার মধ্যে আবার ৪৫০ জনই জনপ্রতিনিধি। যদিও মাত্র ৮ হাজার তালিকাভুক্ত মাদক বিক্রেতাকে নিয়ে বর্তমানে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে কাজ করছে সরকার।

পুলিশের সাবেক আইজিপি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ড. এম ইমদাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, মাদকের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে থাইল্যান্ড তিন হাজার ও এখন পর্যন্ত ফিলিপাইন সাড়ে ১৩ হাজার মাদক বিক্রেতা ও মাদকাসক্তকে ‘গান ডাউন’ করেছে।

‘বাংলাদেশেরও এক্ষেত্রে কঠোরতা না দেখিয়ে উপায় নেই। কারণ ৮০ লাখ মাদকাসক্ত আমাদের অর্থনীতির ওপর অনেক চাপ তৈরি করছে। ৮০ লাখ মাদকাসক্ত মানে কয়েক লাখ পরিবার। ১৮ কোটি মানুষের দেশে বলতে গেলে এক কোটিই মাদকাসক্ত। এটা মেনে নেওয়া কঠিন। তাই সরকারের চলমান অভিযান একটি সঠিক পদক্ষেপ। ’

তিনি বলেন, এই অভিযানের পর মানবাধিকারের কথা যারা বলছেন তারা ৭০/৮০ লাখ মাদকাসক্তের পরিবারের কথা ভাবছেন না। তারা পশ্চিমাদের ভাষায় কথা বলছেন।

মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন বিদ্যমান মাদক আইনের সংস্কার। কারণ বর্তমান আইনের ফাঁকফোকরের কারণে আদালতও মাদক প্রসেসে জড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। আইন সংস্কারের পাশাপাশি দরকার মাদক মামলা বিচারের জন্য আলাদা কোর্ট।

তবে সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, কিছু অমানুষের হাত থেকে দেশ ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষায় কঠোরতাই এক মাত্র পথ। ৮০ লাখ মানুষকে বিচারের মাধ্যমে জেলখানায় দেওয়ার মতো কারাগার তো এদেশে নেই! আর যুদ্ধে তো কোনো নীতি চলে না।

‘সবার একটা কথা মনে রাখা দরকার, প্রতিদিন কেবল সড়ক দুর্ঘটনায় কতগুলো সাধারণ মানুষের জীবন ঝরছে। তাই অভিযানে ঢিলেঢালা ভাব যাতে না আসে সেদিকে সজাগ থাকতে হবে,’ বলেন তিনি।

তবে মাদকবিরোধী অভিযানকে সরকারের ‘গুরুত্বপূর্ণ, জরুরি, ভালো উদ্যোগ’ বললেও গণস্বাস্থ্য ট্রাস্টের প্রধান ড. জাফরউল্লাহর মতে, এই ক্ষেত্রে যে পদক্ষেপ বা কৌশল নেওয়া হয়েছে সেটা ভুল।

সরকারকে ‘বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ড ও মৃত্যুদণ্ড’ থেকে বের হয়ে আসার পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ৮০০০ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৮
আরএম/আরএ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।