বিশেষ করে রিকশাওয়ালা ও বাসের কন্ডাক্টরদের দাবির মুখে জিম্মি হচ্ছেন জনগণ। বকশিস নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ঘটছে ছোটখাট বিবাদও।
রাজধানীর প্রায় প্রতিটি বাসেই চলছে বকশিশ বাণিজ্য। প্রতিটি রুটের বাসেই বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বকশিসের নামে। যেখানে ভাড়া ১০ টাকা সেখানে বকশিসের নামে ১৫ থেকে ২০ টাকাও আদায় করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুন) পল্টন মোড়ে ৬ নম্বর বাসের যাত্রী গাজী বেলাল বাংলানিউজের কাছে বকশিস বাণিজ্য নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পল্টন থেকে মহাখালী বাসে ১৫ টাকা ভাড়া হলেও তার কাছ থেকে জোর করে ২০ টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে বাস কন্ডাক্টরদের মধ্যে বাদানুবাদও হয়।
তিনি বলেন, বকশিসের নামে এক প্রকার জোর করেই টাকা আদায় করা হচ্ছে। এদের কাছে সাধারণ যাত্রীরা যেন জিম্মি।
রাজধানীর গাবতলী-যাত্রাবাড়ী রুটে চলাচলকারী ৮ নম্বর বাসেও বকশিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই বাসের একজন যাত্রী দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, প্রতিটি বাসই বকশিসের নামে নির্দিষ্ট ভাড়ার চেয়ে ৫-১০ টাকা বেশি আদায় করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তরা থেকে সদরঘাট পর্যন্ত যাতায়াতে যেখানে ৫০ টাকার বেশি ভাড়া হয় না, সেখানে যাত্রীদের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক ১০০ টাকা করে আদায় করছে পরিবহন সার্ভিসগুলো।
ঈদ সামনে রেখে রিকশাওয়ালাদেরও দিতে হচ্ছে বকশিশ। কোনো রিকশাওয়ালা নির্দিষ্ট ভাড়া নিয়ে যথাস্থানে যাওয়ার পরে বকশিশ দাবি করছেন। ফলে অনেকে নিতান্ত বাধ্য হয়েই বকশিস দিচ্ছেন। রাজধানীর মৌচাক মোড়ে রিকশা যাত্রী সাবিনা পারভীন রিকশাওয়ালাদের বকশিস চাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি জানান, প্রতিটি রিকশাওয়ালাই বকশিস চাইছেন। বকশিস না দিলে কেউ যেতে চাইছেন না। ঈদে বকশিস দেওয়ার প্রচলন তৈরি হয়েছে, তবে অনেকেই জোর করে এটা আদায় করতে চাইছেন। বকশিস দিতে না চাইলে খারাপ ব্যবহার করেন রিকশাওয়ালারা।
বৃহস্পতিবার সকালে ইস্কাটনের রোডের একটি ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তুলে বেরিয়ে আসতে দেখা গেল এক গ্রাহকে। বের হতে না হতেই বুথের দারোয়ান সালাম দিয়ে বকশিশ চাইলেন। গ্রাহক ২০ টাকা বকশিস দেয়ার পরও খুশি নন দারোয়ান। আরও বেশি বকশিস প্রত্যাশা তার। তবে গ্রাহক ওই ২০ টাকার বেশি আর দিতে পারবেন না বলে চলে আসেন।
ব্যাংকের ওই গ্রাহকের নাম তৈয়বুর রহমান। তিনি জানালেন, বকশিস আমরা অনেকেই খুশি মনে দেই। তবে বকশিশ আমাদের সাধ্য অনুযায়ী দেব, সেটাই স্বাভাবিক। তা না করে অনেকেই জোর করে বকশিস আদায় করতে চায়, সেটাই খারাপ লাগে।
এদিকে ব্যাংক বুথের দারোয়ান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, স্যার বছরে তো মাত্র দুইটা ঈদ। তাই ঈদে বকশিস চাই। তবে বকশিশের জন্য কাউকে জোর করি না। খুশি মনে যে যা দেয়, তাই নিয়ে থাকি।
রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও চলছে বকশিশের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়। এই লঞ্চ টার্মিনালের কুলিরা যাত্রীদের মাল টানার পরে বকশিসের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার বরিশালগামী যাত্রী রাসেল শিকদার নয়ন বাংলানিউজকে জানান, সদরঘাটে এখন কুলিরা যাত্রীদের মালামাল জোর পূর্বক টেনে নেন না। এখন এটা বন্ধ হয়েছে। তবে কুলিরা বকশিসের নামে অতিরিক্ত অর্থ চাইছেন। যাত্রীরা তা দিতেও বাধ্য হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২২২ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৮
টিআর/এনএইচটি